Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মজনুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চায় রাষ্ট্রপক্ষ, আসামিপক্ষের আশা খালাস


১৯ নভেম্বর ২০২০ ১০:২৩

ঢাকা: চলতি বছরের জানুয়ারির ঘটনা। রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নেমে বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। পথে ধর্ষণের শিকার হন তিনি। তিন দিনের মাথায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব) সম্ভাব্য ধর্ষক মজনুকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার একমাত্র আসামিও তিনি। ধর্ষণের সাড়ে ১০ মাস পর এই মামলার রায় ঘোষণা হচ্ছে আজ।

বিজ্ঞাপন

বাদী পক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, মজনুর বিপক্ষে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তারা সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছেন। তাদের প্রত্যাশা পূরণ হলে মজনু যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলছেন, মজনুর অপরাধ প্রমাণ করা যায়নি আদালতে। ফলে তিনি খালাস পাবেন।

আজ বৃস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক বেগম মোসা. কামরুন্নাহার ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণের এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন। মামলার একমাত্র আসামি মজনু কারাগারে রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আফরোজা ফারহানা আহমেদ (অরেঞ্জ) সারাবাংলাকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলার যাবতীয় তথ্য খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। এক সাক্ষীর সঙ্গে অন্য সাক্ষীর বক্তব্যের সামঞ্জস্য রয়েছে। প্রত্যেক সাক্ষীই আসামিকে চিহ্নিত করেছেন।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ২০০৩ সালের আইন অনুযায়ী অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, তাই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে পারেন আদালত।

ধর্ষণের শিকার ওই ঢাবি শিক্ষার্থীর বাবা বলছেন, তিনিও আসামির সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আশা করছি রায়ে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। যখন মামলাটি দায়ের করা হয়, তখন ধর্ষণ মামলায় সর্বোচ্চ সাজা ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এখন যেহেতু সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড আইন পাস হয়েছে, তাই আসামির মৃত্যুদণ্ড আশা করছি।

বিজ্ঞাপন

আসামি মজনুর পক্ষে নিযুক্ত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রবিউল ইসলাম রবি অবশ্য বলছেন, রাষ্ট্রপক্ষ মজনুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আসামি নির্দোষ। আশা করছি রায়ে মজনু খালাস পাবে।

এর আগে, গত ১২ নভেম্বর মামলাটিতে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়। সেদিন মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য আজকের তারিখ ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। সাত্র ১৩ কার্যদিবসে এই মামলাটি রায়ের পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এর আগে, গত ৫ নভেম্বর মজনুর বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেন ট্রাইব্যুনাল। মামলাটিতে ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেছেন আদালত।

গত ২৬ আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক এই মামলার আসামি মজনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এর আগে গত ১৬ মার্চ মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক আবু সিদ্দিক ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় চার্জশিট জমা দেন।

চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, গত ৫ জানুয়ারি বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার উদ্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে চড়ে ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে রওনা দেন ওই শিক্ষার্থী। যেতে বলে। সন্ধ্যা ৫টা ৪০ মিনিটে তার ব্যবহৃত একটি নীল রঙের ট্রাভেল ব্যাগে রাতে ব্যবহারের জন্য জামা ও প্যান্ট নিয়ে ঢাবির ক্ষণিকা বাসে চড়েন তিনি। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভুল করে শ্যাওড়া বাস স্ট্যান্ডে না নেমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে নেমে পড়েন। নেমেই ভুল বুঝতে পেরে শ্যাওড়ার দিকে ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে থাকেন। সামান্য একটু সামনে যাওয়ার পর আশপাশে লোকজন না থাকায় তিনি একটু ইতঃস্তত বোধ করেন। অন্যদিকে মজনু একজন ভবঘুরে। ঢাকা শহরে তার কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই। তিনি ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন শ্যাওড়া বটতলা এলাকায় ভাসমানভাবে ঘুরে বেড়ান।

ঘটনার দিন মজনু বিকেল ৫টার দিকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যান। তার যৌন রোগ থাকায় ওষুধ নিয়ে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ড থেকে একটু পূর্ব দিকে কুর্মিটোলা থেকে আর্মি গলফ ক্লাব যাওয়ার রাস্তার ফুটপাতের পাশে ইটের তৈরি বেঞ্চে বসেন। ৭টার দিকে ওই ঢাবি শিক্ষার্থী শ্যাওড়ায় তার বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার জন্য ফুটপাতে হাঁটার সময় মজনু তাকে পেছন দিক থেকে জাপটে ধরেন। তাকে কোলে তুলে নিয়ে পাশেই কাটা ঝোঁপের মধ্যে ফেলে দেন। এসময় ওই তরুণী চিৎকার করতে থাকলে মজনু তার গলা চেপে ধরেন এবং উপর্যুপরি মুখে, বুকে, পেটে কিল ঘুষি মারেন। মজনু ভিকটিমের গলা টিপে ধরায় তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন।

চার্জশিটে আরও বলা হয়, ভিকটিম এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তখন মজনু তাকে ধর্ষণ করেন। কিছুক্ষণ পর ভিকটিমের জ্ঞান ফেরে। সে সময় ভিকটিম মজনুর কাছ থেকে রেহাই পেতে চলে যেতে চান। মজনু ওই তরুণীর কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ফোন ও ব্যাগ ছিনতাইয়ের জন্য তার গলা চেপে ধরেন। একপর্যায়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গলা চেপে ধরেন। সে সময় মজনু ওই তরুণীর নাম-পরিচয় জানতে চান, ব্যাগে কত টাকা আছে, তাও জানতে চান।

ধর্ষণের শিকার ঢাবি শিক্ষার্থী তার কাছে থাকা টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন মজনুকে। কিন্তু মজনু তাকে আটকে রাখেন। ঘণ্টা তিনেক পর ওই তরুণীর কাছে থাকা দুই হাজার টাকা, মোবাইল ফোন ও ব্যবহৃত ব্যাগ কেড়ে নেন মজনু। পরে ওই তরুণী কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

ওই তরুণী পালিয়ে যাওয়ার পর মজনু তরুণীর ব্যাগে থাকা বই, খাতা, কাগজ, কলমসহ সবকিছু ফেলে দিয়ে ব্যাগ, দুই হাজার টাকা ও একটি স্যামসাং মোবাইল ফোন ও একটি পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে শ্যাওড়া ফুট ওভারব্রিজ পার হন। রেললাইনের পাশে পরিত্যক্ত বগির ফাঁকে ভাসমান এক যৌনকর্মীর কাছে মোবাইল ও পাওয়ার ব্যাংকটি রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছেন বলে বিক্রি করে দেন। আর ব্যাগটি শ্যাওড়া ফুট ওভারব্রিজ পার হয়ে রাস্তার পাশে বসার বেঞ্চের নিচে সিমেন্টের বস্তার মধ্যে লুকিয়ে রাখেন।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আসামি মজনুর জীবিকা নির্বাহের নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। তিনি কখনো রিকশা চালান, কখনো বোতল কুড়ান, কখনো রাস্তায় মানুষের বোঝাই ভ্যান ও ঠেলা গাড়ি ঠেলার কাজ করেন।

৫ জানুয়ারি ধর্ষণের এই ঘটনায় পরদিন ৬ জানুয়ারি দুপুরে ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই মামলাটি তদন্তের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করে ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ। ৮ জানুয়ারি ভোরে মজনুকে শ্যাওড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

আরও পড়ুন-

আসামি মজনু ঢাবি শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ভিকটিম মজনু রায় সিরিয়াল রেপিস্ট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর