Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ধর্ম ব্যবসায়ীদের ৭১-এ পরাজিত করেছি, প্রয়োজনে আবার যুদ্ধ হবে’


২১ নভেম্বর ২০২০ ২০:১০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণের হুমকিদাতা ‘ধর্ম ব্যবসায়ীদের’ গ্রেফতারের দাবি এসেছে চট্টগ্রামে ‘অপরাজেয় বাংলা’ নামে একটি সংগঠনের প্রতিবাদী মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে। রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনেরা সমাবেশে বলেছেন, ইসলামী দলগুলোর ভেতরে জামায়াত-শিবির ঢুকে পড়েছে এবং তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্য বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দেওয়ার উসকানি দিয়েছে। এর প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে না নামায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এই কর্মসূচির আয়োজন করে ‘অপরাজেয় বাংলা, চট্টগ্রাম মহানগর’ শাখা। এতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মী ছাড়াও সাংবাদিক-চিকিৎসক-সংস্কৃতিকর্মী-নারীনেত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর এই মৌলবাদী সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড দেশে নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে এই ফ্যাসিস্ট-মৌলবাদী সংগঠনগুলোকে শুধু নয়, জামায়াত-শিবির-রাজাকারদেরও পুর্নবাসিত করেন। পুর্নবাসিত হওয়ার পর তারা আবার আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারা বারবার স্পর্ধা দেখিয়েছে। জাতীয় সঙ্গীত বদলানোর কথা বলেছে, বাংলাদেশের নাম নিয়ে কথা বলেছে। সর্বশেষ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েছে তারা। বঙ্গবন্ধু এদেশকে স্বাধীন করেছে, তাই তাদের চোখে বঙ্গবন্ধু অপরাধী।’

হুমকিদাতাদের একাত্তরের পরাজিত শক্তি উল্লেখ করে তাদের উদ্দেশে মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বলেন, ‘ইসলাম কি আপনাদের ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করতে বলেছিল? ইসলাম কি আলবদর-রাজাকার সৃষ্টি করতে বলেছিল? বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার জন্য কি ইসলাম বলেছিল ? মা-বোনের সম্ভ্রম হরণের কথা ইসলামের কোথায় লেখা ছিল?’

‘এই ফ্যাসিস্ট-মৌলবাদী, জামায়াত-শিবিরের স্থান বিপ্লবের তীর্থভূমি চট্টগ্রামে হবে না, সারা বাংলাদেশেও হবে না। আমরা একাত্তরে তাদের একবার পরাজিত করেছি, প্রয়োজনে আবার নতুন করে যুদ্ধ শুরু হবে। এই চট্টগ্রাম এম এ আজিজ, জহুর আহমদ চৌধুরী, এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর চট্টগ্রাম। ইসলামী দলগুলোর ভেতরে ঢুকে আজ জামায়াত-শিবির যে ঔদ্ধর্ত্য দেখিয়েছে, তাদের চট্টগ্রামের মাটিতে প্রতিরোধ করা হবে। তাদের ঘরে ঢুকিয়ে না দিয়ে আমরা ঘরে ফিরে যাব না’-বলেন রেজাউল।

বিজ্ঞাপন

ছাত্রলীগের নেতাদের শিবির সম্পর্কে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই জামায়াত-শিবির তোমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আজ তোমাদের ভেতরে ঢুকে পড়েছে। এদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। এদের কোনোভাবে জায়গা দেওয়া যাবে না। এরা জাতশত্রু। এরা কোনোদিন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব মানবে না। আমরা তাদের প্রতিহত করবো। সবাইকে শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। আমাদের চেতনা আজ ভোতা হয়ে গেছে। চেতনাকে শাণিত করতে হবে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে যদি আমরা মাঠে নামি, তাহলে কোনো শক্তি আমাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।’

নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন বাচ্চু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ ‍মুজিবুর রহমান বাঙালির চেতনার অংশ, বাঙালির জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে আজ যারা হুমকি দিচ্ছে এরা কারা? তাদের আমরা ১৯৭১ সালে চিনেছি। মামুনুল হকের পিতা আজিজুল হকও এভাবেই মুক্তিযুদ্ধের আগে ইসলামের নামে জাতিকে বিভ্রান্ত করেছিল। মওদুদীবাদীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে হুমকি দিয়েছিল- ইসলামকে রক্ষা করতে হবে, পাকিস্তানকে রক্ষা করতে হবে।, ভেবেছিলাম স্বাধীন বাংলাদেশে তারা সংশোধন হয়ে যাবে। কিন্তু সংশোধন হয়নি। এরপরও যতটুকু সহ্য করার সুযোগ আছে, ততটুকু করেছি। কিন্তু তারা বঙ্গবন্ধুকে অপমান করে আমাদের হৃদয়ে আঘাত দিয়েছে। এবার আর ছাড় নয়। মৌলবাদী মামুনুল হক আর তার দোসর মওদুদীবাদীদের চিহ্নিত করে প্রতিহত করা হবে।’

অপরাজেয় বাংলা’র কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব এইচ রহমান মিলু বলেন, ‘হুমকিদাতা মামুনুল হক কে ? উনার বাবা আজিজুল হক ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর দালালি করেছিল। গরু-খাসি এবং মেয়েমানুষ সাপ্লাই দিয়েছিল। সেই কুলাঙ্গার পাকিস্তানের দালাল আজিজুল হকের ছেলে মামুনুল হক। আমাদের দল আওয়ামী লীগ আজ ক্ষমতায়। আমরা এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম আর্মির সামনে দাঁড়িয়ে। আমাদের শক্তি ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর এদেশের জনগণ। আজ আমরা আদর্শ ভুলে গেছি হালুয়া-রুটির ভাগাভাগিতে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কার এত ক্ষমতা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি দিয়ে পার পেয়ে যায়। চট্টগ্রাম প্রমাণ করেছে, আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগ ঘুমিয়ে নেই। আমরা আছি, আমরা থাকব।’

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে দেওয়ার কথা যারা বলেছে, তারা ইসলামের নামে রাজনীতি করে, অথচ প্রতিমা আর ভাস্কর্যের পার্থক্য তারা বোঝে না। তারা কোরআন-সুন্নাহ বুঝে-মেনে কথা বলে না। আমি জেদ্দার রাস্তায় রাস্তায় ভাস্কর্য দেখেছি, তুরস্কে দেখেছি, মালয়েশিয়ায় দেখেছি। হেফাজতে ইসলাম, চরমোনাই- এদের প্রাণভোমরা জামায়াত-শিবির। আমাদের লড়াই করতে হবে জামায়াত-শিবিরে বিরুদ্ধে, যদি আমরা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে এই মৌলবাদী সংগঠনগুলোকে চিরতরে পুঁতে ফেলতে চাই।’

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সীমান্ত তালুকদার বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন ঘুমায়, চট্টগ্রাম তখন জেগে থাকে। বাংলাদেশ যখন পথ হারায়, চট্টগ্রাম তখন পথ দেখায়। এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কর্মীরা সবসময় জেগে থাকে। এই প্রতিবাদ হওয়ার কথা ছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সারা বাংলাদেশে জেলায়-জেলায়, উপজেলায়, গ্রামগঞ্জে। আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতৃত্বে এই প্রতিবাদ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা দেখলাম, শুধুমাত্র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান একজন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বললেন- আমরা কাঁধে হাত রেখে বন্ধুত্ব করতে জানি, কাঁধে হাত রেখে ঘাড়ও মটকে দিতে জানি। এটাই আওয়ামী লীগের আদর্শ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। নির্বাচনের আগে ধর্মব্যবসায়ীদের পায়ে লুটিয়ে পড়ার শিক্ষা আওয়ামী লীগ দেয় না। এই শিক্ষা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার হুমকি, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার ওপর আঘাত। এই ধর্ম ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করতে হবে।’

অপরাজেয় বাংলা চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সদস্য সচিব ও নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার হুমকির প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করছি তা নয়। প্রতিবাদের আরও উদ্দেশ্য আমাদের আছে। বাংলাদেশের সংস্কৃতি, বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, স্বাধীনতার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কেউ যদি কোনো ষড়যন্ত্র করে, হুমকি দেয় চট্টগ্রামের মাটি থেকে আমরা তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেব। চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ পরিবার এখনও বেঁচে আছে। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কর্মীরা এখনও বেঁচে আছেন। চট্টগ্রাম থেকে এই প্রতিবাদ আমরা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেব। বঙ্গবন্ধু আমাদের হৃদয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে কোনো কটুক্তি, যে কোনো অপপ্রচারের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জবাব দিয়ে আসছে, ভবিষ্যতেও দেবে।’

নারীনেত্রী অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের চেতনায় আছেন। মৌলবাদী দলগুলো বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করে যে বক্তব্য দিয়েছে, এরপর যাদের শিরায়-উপশিরায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রবহমান তারা আর ঘরে বসে থাকতে পারে না। যে মৌলবাদী শক্তি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলতে চায়, তাদের প্রশ্ন করতে চাই- মূর্তি আর ভাস্কর্য আর এক কি না ? মৌলবাদী অপশক্তির দিন শেষ। এই মৌলবাদীর আস্ফালন চলবে না। কথায় কথায় ধর্মীয় উসকানি এই দেশকে একটি মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্ত সফল হতে দেওয়া যাবে না।’

অপরাজেয় বাংলা, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার আহ্বায়ক নুরুল আনোয়ারের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী ও রাশেদ হাসান, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক লতিফা আনসারী রুনা, নগর যুবলীগের সদস্য মেজবাহ চৌধুরী মোর্শেদ, হেলাল উদ্দীন, শাখাওয়াত হোসেন স্বপন, সাবেক সদস্য আসহাব চৌধুরী এবং নগরীর লালখান বাজার ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত মো. বেলাল।

পরাজিত প্রয়োজন ভাস্কর্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর