নতুন পাঠ্যক্রমের খসড়াই তৈরি করতে পারেনি এনসিটিবি
২৩ নভেম্বর ২০২০ ১৩:১৬
ঢাকা: ২০২০ সালের এগারো মাস পার হয়ে গেলেও এখনো নতুন পাঠ্যক্রমের খসড়াই প্রস্তুত করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সে ক্ষেত্রে ২০২২ সালে নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। তবে এনসিটিবি আশা করছে নতুন বছরের শুরুতেই এ পাঠ্যক্রম চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখনো খসড়াটি ফ্রেম করতে পারিনি। আলোচনা চলছে। এটি কোন শ্রেণিতে প্রথম বাস্তবায়ন হবে সেটি এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বিভাগ বিভাজন উঠানোর পদ্ধতিটি কেমন হবে, পরীক্ষা পদ্ধতি এসব নিয়ে আমাদেরকে আরও কাজ করতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের শুরুতেই পাঠ্যক্রম প্রস্তুত করে পরবর্তী কাজ শুরু করে দেওয়া যাবে। বইয়ের টেক্সট তৈরি করে সেই বই ছাপিয়ে নিতে পুরো বছর চলে যাবে। তবে আমরা আশা করছি ২০২২ সালেই নতুন এ পাঠ্যক্রমের সঙ্গে পরিচিত হবে শিক্ষার্থীরা।’
ওই বছরই মাধ্যমিকে বিভাগ বিভাজন ওঠিয়ে দেওয়া হবে বলেও কয়েকদিন আগে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অর্থাৎ তখন থেকে একই বইয়ে মাধ্যমিকের বৈতরণী পার হবেন শিক্ষার্থীরা। বিজ্ঞান, বাণিজ্য আর মানবিকের বর্তমান বিভাগ ভাগ শুরু হবে উচ্চ মাধ্যমিকে।
তবে এনসিটিবির আরেকটি সূত্র বলছে, পাঠ্যক্রমের খসড়া তৈরির কাজ পিছিয়ে যাওয়ায় সব কার্যক্রমই এক বছর করে পিছিয়ে যাচ্ছে। ২০২২ সাল থেকে মাধ্যমিকের নবম শ্রেণিতে মানবিক, বিজ্ঞান, বাণিজ্য বিভাগ উঠিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও এটি করা হবে ২০২৩ সালে। ২০২৪ সালে উঠবে দশম শ্রেণির বিভাগ বিভাজন।
এর আগে, ২০২২ সাল থেকেই প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সব পাঠ্যবইয়ে ধীরে ধীরে বদল হতে শুরু করবে। এনসিটিবির ওই সূত্রটি বলছেন, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে নবম এবং ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে দশম শ্রেণির নতুন পাঠ্যবই হাতে পাবে শিক্ষার্থীরা। এর আগে নতুন পাঠ্যক্রমে এত বই ছাপানোই সম্ভব হবে না!
এদিকে এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক ড. এ কে এম রেজাউল হাসান জানিয়েছেন, ২০২২ সালেই নতুন পাঠ্যক্রমে তিনটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তোলে দেওয়া হবে। শ্রেণি তিনটি প্রথম, দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ হতে পারে।
এনসিটিবির আরেকটি সূত্র বলছে, ২০২৩ সালে তৃতীয়, চতুর্থ অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই পাবে শিক্ষার্থীরা। ওই বছরই অথবা সম্ভব না হলে ২০২৪ সালে নতুন বই পাবে প্রাথমিকের বাকি শিক্ষার্থীরাও। এর আগে ২০২২ সাল থেকে সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই বছরের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাও চালু করা হবে।
নতুন শিক্ষাক্রমে ২০২৪ সালে একাদশ ও ২০২৫ সালে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবই দেওয়ার পরকিল্পনা রয়েছে। তবে করোনার কারণে এক বছর পিছিয়ে ২০২৫ এবং ২০২৬ সালে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে পারে।
নতুন পাঠ্যক্রমে প্রশ্ন উত্তর ভিত্তিক পড়াশোনার চাপ কমিয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নে গুরুত্ব দেওয়া হবে। কমে যাবে নম্বর এবং পরীক্ষার সময়ও। আর গুরুত্ব দেওয়া হবে কারিগরি শিক্ষায়।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে আমলে নিয়ে কারগরি শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করে তোলা হবে। আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে কারিগরি থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের চাহিদা বৃদ্ধি করতে পরিমার্জন করা হবে পাঠ্যসূচী। নতুন প্রযুক্তি ও জ্ঞানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে শ্রেণি কার্যক্রমে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. মোরাদ হোসন মোল্লা বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষাকে আরও বেশি আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর করা হবে নতুন পাঠ্যক্রমে। এ জন্য বোর্ডের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা যায় আমরা আমরা সেটি করছি এনসিটিবিকে।’
এদিকে নতুন পাঠ্যক্রমে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মোট ১০টি বিষয় পড়তে হবে বলে জানা গেছে। বিষয়গুলো হচ্ছে- ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, জীবন ও জীবিকা, পরিবেশ ও জলবায়ু, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা, শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি।
নতুন পাঠ্যক্রমে প্রাক-প্রাথমিক স্তরকে ‘শিক্ষার প্রস্তুতি’, প্রাথমিক স্তরকে ‘ভিত্তি’, মাধ্যমিক স্তরকে ‘সামাজিকীকরণ’, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরকে ‘বিশেষায়নের জন্য প্রস্তুতি’ এবং উচ্চ শিক্ষাকে ‘বিশেষায়ন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এনসিটিবি এই ১০টি বিষয়কে ‘শিখনক্ষেত্র’ নাম দিয়ে বলেছে, এই বিষয়গুলোর ওপরই রচিত হবে নতুন পাঠ্যক্রম। নারায়ন চন্দ্র সাহা বলেন, ‘উচ্চশিক্ষা নিতে এই পদ্ধতিটি ফলপ্রসূ হবে। কারণ শিক্ষার্থীরা দক্ষতা সংশ্লিষ্ট পড়াশোনায় অভ্যস্ত হবে। ফলে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা নিতে তার তার জন্য সহজ হবে।’