Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছিনতাইয়ে ‘জড়িত’ পুলিশের ২ এএসআই ছুটি নিয়ে লাপাত্তা


৬ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:০৪

প্রতীকী ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা। মাদরাসা শিক্ষক আবদুল আউয়াল রাজধানীর বনশ্রীর সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ এক ‘রিকশাচালক’ তাকে থামান। নাম-পরিচয় দিয়ে ১০০ সৌদি রিয়ালের একটি নোট কুড়িয়ে পেয়েছেন বলে জানান। এবং সেটি ভাঙিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। অনুরোধের একপর্যায়ে মানি এক্সচেঞ্জ থেকে রিকশাচালকে নোটটি ভাঙিয়ে দেন আবদুল আউয়াল। পরে ওই ‘রিকশাচালক’ আউয়ালের ফোন নম্বর নিয়ে চলে যান।

ওইদিন সন্ধ্যায় ফের তার কাছে সেই ‘রিকশাচালক’র ফোন আসে। ওই রিকশাচালক বলেন, তার কাছে আরও রিয়াল আছে, সেগুলো অর্ধেক দামে বিক্রি করা হবে। নানান প্রলোভন দেখিয়ে আউয়ালকে রাজিও করান তিনি। পরদিন (৯ সেপ্টেম্বর) বাড্ডার একটি ব্যাংকের শাখা থেকে পাঁচ লাখ টাকা তুলে রিয়াল কেনেন এই মাদরাসা শিক্ষক। পরে রামপুরায় অন্য তিনব্যক্তি তার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে ‘রিয়াল’র একটি পোটলা ধরিয়ে দেন আউয়ালকে। এরপর তারা বলেন, ‘দ্রুত চলে যান, সামনে পুলিশ।’

বিজ্ঞাপন

তারা চলে যাওয়ার পরপরই একটি প্রাইভেটকার থেকে তিনজন বেরিয়ে ডিবি পরিচয়ে আউয়ালকে গাড়িতে তুলে নেয়। তাদের মধ্যে দুজন পুলিশের এএসআই। ভুয়া রিয়াল আছে অভিযোগে আউয়ালের হাতে হাতকড়া পরায়। এরপর মুক্তি পেতে ১০ লাখ টাকা দাবি করে তারা। পরে পল্লবীতে নিয়ে একটি ব্যাংক থেকে আউয়ালের কাছে থাকা চেক দিয়ে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা তুলে নিয়ে তাকে বনানী এলাকায় নামিয়ে দেয়।

এরকম অভিনব ছিনতাইয়ের শিকার শুধু আউয়াল নন, সম্প্রতি রাজধানীতে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটেছে। অভিনব এই ছিনতাই ও প্রতারণা করছে একটি চক্র। এদিকে রাজধানীতে ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে। টহল বাড়ানোর পাশাপাশি ছিনতাইয়ে জড়িতদের ধরতে একের পর এক অভিযান পরিচালনা করছে। এতে ধরাও পড়ছে অনেকে। তবে সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে, পুলিশের দুজন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ছিনতাইকারী চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন। তারা হলেন- আড়াই হাজার থানার এএসআই মাসুম ও গেন্ডারিয়া রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সে (আরআরএফ) কর্মরত এএসআই সহিদ।

বিজ্ঞাপন

গত বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর গোযেন্দা পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ১০ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হওয়া ছিনতাইকারীরা ডিবি পুলিশকে জানায়, এএসআই মাসুম ও সহিদের নেতৃত্বে রাজধানীতে ছিনতাই হয়ে থাকে। তারা দুজন নিজের গাড়ি এবং সরকারি অস্ত্র ব্যবহার করে ছিনতাই করে থাকেন। তাদের দুজনের নামে রামপুরা থানায় গত শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) মামলা হয়েছে। মামলায় তারা ৮ ও ৯ নম্বর আসামি।

মামলাটি তদন্ত করছেন ঢাকা মহানগর গোযেন্দা পুলিশের লালবাগ জোনের উপকমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ১০ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুই এএসআই মাসুম ও সহিদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাদের নামে মামলাও হয়েছে। তদন্ত চলছে। ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।’

ডিবি পুলিশ জানায়, মাসুম ও সহিদ সহযোগীদের নিয়ে ডিবি পরিচয়ে তারা রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকায় বৈদেশিক মুদ্রা প্রতারণা এবং ছিনতাই করে আসছেন। চক্রের সদস্যরা জানিয়েছে, এএসআই মাসুম নিজের প্রাইভেটকার নিয়ে ছিনতাই করেন। কখনও সরকারি অস্ত্রও ব্যবহার করেন তিনি।

ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া আসামিরা জানিয়েছে, মাসুম ও সহিদ এই চক্রের হোতা। সরাসরি ছিনতাই কাজে অংশ নেন তারা। চক্রের সদস্যরা দুটি ভাগে ভাগ হয়ে কাজ করে। প্রথম ধাপে রাজধানী এবং এর আশপাশ এলাকায় একজন সদস্য কখনও রিকশাচালক, কখনও হকার বেশে মানুষকে অনুনয়ের সঙ্গে বলে, রাস্তায় বিদেশি মুদ্রা পেয়েছে। অশিক্ষিত মানুষ, কীভাবে এটা ভাঙাতে হয় জানে না। মুদ্রা ভাঙিয়ে দিলে তাকে একটি অংশ কমিশন দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। এর পরই কৌশলে টার্গেট ব্যক্তির মোবাইল নম্বর চেয়ে নেয়। পরে ফোনে টার্গেট ব্যক্তিকে জানায়, তাদের কাছে আরও বিদেশি মুদ্রা রয়েছে। সেগুলো অর্ধেক দামে বিক্রি করবে। এভাবেই মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা ছিনতাই করে চক্রটি।

সম্প্রতি ছিনতাই চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। একটি যাত্রাবাড়ী থানায়, আরেকটি রামপুরা থানায়। রামপুরা থানায় করা মামলার বাদী বনশ্রীর মাদরাসা শিক্ষক মো. আবদুল আউয়াল।

জানতে চাইলে আড়াই হাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এএসআই মাসুম আড়াই হাজার থানায় কর্মরত রয়েছেন। তার বাড়ি গোপলগঞ্জে। মামলার বিষয়টি তিনি জানেন না। তিনি এখন ছুটিতে আছেন। কয়েকদিন পরেই তিনি যোগদান করবেন। এরপর তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’

আর গেন্ডারিয়া আরআরএফ’র হাবিলদার ইমরান হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এএসআই সহিদ ২৮ দিনের ছুটিতে রয়েছেন। আগামী ১১ ডিসেম্বর তার যোগদান করার কথা রয়েছে। মামলার বিষয়টি জানি না। তবে সে জয়েন করলে বিষয়টি নিয়ে কথা হবে। তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে এএসআই মাসুমের মোবাইলে কল করা হলে তার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। অন্যদিকে এএসআই সহিদের মোবাইল নম্বরও বন্ধ রয়েছে।

রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কুদ্দুস ফকির বলেন, ‘ছিনতাইয়ে জড়িত দুই এএসআইয়ের কর্মস্থলে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাদের থানায় হস্তান্তরের জন্য বলা হয়েছে।’

পুলিশের আশঙ্কা, ছিনতাইয়ে জড়িত পুলিশের দুই এএসআই মাসুম ও সহিদ ছুটির নামে লাপাত্তা। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের গ্রেফতারে ডিবি পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ছিনতাই চক্রের ১০ সদস্য হলেন- মহসিন শেখ, সেন্টু মুন্সি, আনিছুর রহমান, জুয়েল মিয়া, মহব্বত শেখ, শাহিন শেখ, আবুল কালাম, সুলতান মোল্লা, হেমায়েত শেখ ও কাইয়ুম শেখ। তাদের কাছ থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার, ডিবির জ্যাকেট, ওয়ারলেস সেট, এক জোড়া হাতকড়া ও পুলিশ লেখা স্টিকার উদ্ধার করা হয়।

এএসআই ছিনতাই পুলিশ প্রতারণা মাদরাসা শিক্ষক মাসুম রাজধানী লাপাত্তা সহিদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর