শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অ্যাকশন, বেকায়দায় রাবি প্রশাসন!
১৫ ডিসেম্বর ২০২০ ১৫:২৭
রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বর্তমান প্রশাসনের অনিয়ম-দুনীর্তির বিষয়ে ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে অ্যাকশনে নেমেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়াসহ কয়েকজনের কাছে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এম এ বারীকে অব্যাহতি দেওয়াসহ সকল প্রকার নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১৩ ডিসেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নীলিমা আফরোজের সই করা মোট ১১টি চিঠির মধ্যে ভিসিসহ আটজনের কাছে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) চিঠির বিষয়টি নীলিমা আফরোজ নিজেই সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
সাতজনের কাছে কৈফিয়ত তলব
সাতজনের কাছে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নীতিমালা ২০১৫ এর শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে ২০১৭ এর পরিবর্তিত নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসি তদন্ত কমিটি। পরিবর্তিত নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সে বিষয়ে পত্রপ্রাপ্তির সাত কর্মদিবসের মধ্যে কৈফিয়ত দিতে বলা হয়েছে।
যাদের কৈফিয়ত দিতে বলা হয়েছে তারা হলেন- রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী মো জাকারিয়া, আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল হান্নান, আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিবলী ইসলাম, ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক গাজী তৌহিদুর রহমান, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম মজিবুর রহমান এবং রেজিস্ট্রার দফতরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার সাখাওয়াত হোসেন টুটুল।
আরও পড়ুন: মন্ত্রণালয়ের চিঠি উপেক্ষা করে নিয়োগের অভিযোগ রাবিতে!
এছাড়া নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন করে মেয়ে সানজানা সোবহানকে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগ ও এটিএম শাহেদ পারভেজকে ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিউিটটে প্রভাষক পদে নিয়োগ দিয়ে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম করা হয়েছে জানিয়ে ওই নিয়োগ কেন বাতিল করা হবে না তার ব্যাখ্যা উপাচার্যকে সাতদিনের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।
রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি দেওয়ার নির্দেশ
এদিকে এক চিঠিতে ইউজিসির তদন্ত কমিটিকে বিভিন্ন পর্যায়ে অসহযোগিতা করায় অসদাচরণের শামিল হয়েছে জানিয়ে তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী রেজিস্ট্রারের পদ থেকে অধ্যাপক ড. এম এ বারীকে অব্যাহতি দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বাড়ি দখলে রাখার ক্ষতিপূরণ কোষাগারে জমা দিতে হবে
উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান ডুপ্লেক্স বাড়ি নিয়ম বহির্ভূতভাবে দখলে রাখায় ৫ লাখ ৬১ হাজার ৬০০ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ওই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা প্রদানপূর্বক চালানের কপি জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়।
এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর নীলিমা আফরোজের সই করা আরেকটি চিঠিতে রাবির সবধরনের নিয়োগ স্থগিত রাখতে নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এসব নির্দেশনা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজের আহবায়ক অধ্যাপক ড. সুলতান উল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটু দেরিতে হলেও নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা খুশি। আমি বলতে চাই, এই নির্দেশনা প্রমাণ করে উনি ঘৃণিত ও গর্হিত কাজ করেছেন। যা একটি উদাহরণ। প্রমাণ হয়ে গেল যে, তারা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা করেছেন। এ কারণে উপাচার্য তার পদে থাকার নৈতিক অবস্থান হারিয়েছেন। তার পদত্যাগ করা উচিত বলে আমরা মনে করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখারুল আলম মাসউদ বলেন, ‘উপাচার্যসহ কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নির্দেশনা আসাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কলঙ্ক। বড় অনিয়ম না করলে অবশ্যই এসব নির্দেশনা আসতো না। প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের বেকায়দায় পড়েছে বলতে হবে।’