Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভারতের ৪০০ মিটার জলসীমার কারণে ঘুরতে হয় ১৭ কিলোমিটার


১৭ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:৪৭

চর খানপুর (রাজশাহী) থেকে ফিরে: অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে নদীপথে রাজশাহী সদর হাসপাতালে যাচ্ছিলেন চর মাজারদিয়ার এনামুল হক। নদীপথে চার কিলোমিটার দূরে রাজশাহী শহর, যেটা স্থল পথে ১৭ কিলোমিটারের মেঠোপথ ঘুরে পায়ে হেঁটে, নৌকায় চড়ে যেতে হয়। তবে চার কিলোমিটারের নদীপথে পড়ে চারশ মিটারের ভারতীয় অংশ। যেটা ব্যবহারে ভারতের অনুমতি না থাকায় এনামুলকে ওই পথে যেতে দেয়নি বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি)।

বিজ্ঞাপন

বাধ্য হয়ে এনামুল তার স্ত্রীকে কোলে নিয়ে ১৭ কিলোমিটারের ঘুর পথে পায়ে হেঁটে ও নৌকায় করে রাজশাহী পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। পথে নৌকায় এনামুলের স্ত্রী সন্তান প্রসব করেন। তবে বিনা চিকিৎসায় সেখানেই তার সন্তানের মৃত্যু হয়। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে না গিয়েই মৃত সন্তানকে কোলে নিয়ে ফিরে আসেন তারা।

ভিটা-মাটি, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসা সব হারিয়ে কোনোমতে সেখানে ঠাঁই নিয়েছেন ভারতীয় সীমানা ঘেঁষা গ্রাম চর মাজারদিয়ায় মানুষ।

এমনিতেই দেশের একপ্রান্তে তাদের বসবাস। তার ওপর বর্ষাকালে প্রমত্তা পদ্মার ভাঙন, শীতে খটখটে চর। নেই রাজশাহী শহরের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থাও। বর্ষাকালে যদিও নৌকায় চলাফেরার অনেক পথ তৈরি হয়, শীতে শুকনো চরে না চলে নৌকা, না চলে গাড়ি-ঘোড়া। তার ওপর চার কিলোমিটারের পথের দূরত্ব বেড়ে হয় ১৭ কিলোমিটার। এর ফলে মুমূর্ষু রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া বা তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে হলেও পড়তে হয় বিপাকে।

স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসেছেন, ভারতীয় জলসীমার ৪ শ মিটার অংশ ব্যবহারের অনুমতির জন্য। তাহলে জরুরি প্রয়োজনে রোগী নিয়ে রাজশাহী শহরে পৌঁছাতে পারবেন। বিশেষ করে প্রসূতি নারী ও মুমূর্ষুদের জীবনরক্ষায় বড় সহায়ক হতে পারে। তাছাড়া নদীপথ ব্যবহার করতে পারলে তাদের উৎপাদিত ফসলও নৌকায় করে শহরের হাটে নিতে পারবেন।

চর মাজারদিয়ার আব্দুল জব্বার সারাবাংলাকে জানান, শীতকালে হাঁটু পানি হয়ে যায় পদ্মায়। তখন রাজশাহী শহরের সঙ্গে নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা দুঃসাধ্য হয়ে যায়। নদী উত্তাল থাকলে ভারতের অংশ ব্যবহার করতে হয় না। বারবার ভাঙনে পদ্মার অবস্থান পরিবর্তন হওয়ায় এ সমস্যা হচ্ছে। বিএসএফ ওই পথ ব্যবহারের অনুমতি করতে দেয় না। ওদিক গেলেই নৌকাসহ ধরে নিয়ে যায়।’

বিজ্ঞাপন

কৃষক আনিসুর রহমান নামে আরেকজন বলেন, ‘আমাদের ক্ষেতের ফসল, সবজি বাজারে নিয়ে গেলে লাভের অংশ চলে যায় নৌকা বা ট্রলার ভাড়ায়। এই গ্রাম থেকে রাজশাহী শহরে যেতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। আর শীত মৌসুমে আরও সময় বেশি লাগে।’

আবুল কালাম আজাদ নামে এক বাসিন্দা জানান, নদী পথটি তাদের ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার জন্য বিজিবি ক্যাম্পে কথা বলা হয়েছে। তাতেও কোনো লাভ হচ্ছে না। ভারতের কাছ থেকে সামান্য একটু জলপথ করিডোর হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি পেলে গ্রামবাসীর অনেক অসুবিধা কমে যেত।

ভারতীয় জলসীমাটুকু করিডোর হিসেবে ব্যবহার করতে পারলে বিজিবির জন্যেও সুবিধার। খানপুর ক্যাম্পে সহজে যাতায়াত, বর্ডার টহল ও চর মাজারদিয়া গ্রামবাসীর উন্নয়নে ওই ৪ শ মিটার ব্যবহার অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ তা ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খানপুর বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার মানিক দেবনাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গ্রামবাসী যেন ওই জলপথটুকু ব্যবহার করতে পোরেন সে ব্যাপারে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘খানপুর ক্যাম্প আক্রান্ত হলে এবং কেউ অসুস্থ হলে জরুরি অবস্থায় শহরে নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। ভারতীয় জলসীমার ৪ শ’ মিটারের মতো করিডর হিসেবে ব্যবহার করতে পারলে বিজিবির জন্যও উপকার হতো। আর এখানে হেলিকপ্টারও ল্যান্ড করার মতোও কোনো জায়গা নেই।’

বিজিবির রাজশাহী সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, ‘শীতকালে পদ্মার ভারতীয় অংশের সাড়ে ৪ শ মিটার জলপথ ব্যবহারের অনুমতির জন্য গ্রামবাসী অনুরোধ করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে আগামী ২২ ডিসেম্বর আসামের গোহাটিতে দুদেশের মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনের আলোচনা করা হবে। এরপর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চর মাজিরদিয়া জলসীমা ভারত রাজশাহী

বিজ্ঞাপন

বিদেশ বিভুঁই। ছবিনামা-১
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০০

আরো

সম্পর্কিত খবর