Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভারতেও ইয়াবার কারখানা!


২০ ডিসেম্বর ২০২০ ১১:০০

ঢাকা: গত তিন মাসে (সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর) রাজশাহী পদ্মার চরের শেষ গ্রাম খানপুর সীমান্ত দিয়ে প্রায় এক হাজার ইয়াবা পিস উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবির দাবি, মিয়ানমারের ইয়াবা প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার পথ ঘুরে খানপুর সীমান্ত দিয়ে কখনো আসতে পারে না। যেসব ইয়াবা এই সীমান্ত থেকে উদ্ধার করা হয়, এসব ইয়াবা ভারতের কোথাও তৈরি করা হয় বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ বিষয়গুলো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিজিবির খানপুর ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার মানিক দেবনাথ সারাবাংলাকে বলেন, বিজিবি সদস্যরা টহল দেওয়ার সময় ব্যাগ বা বস্তা উদ্ধার করে। পরে ওই ব্যাগ বা বস্তা থেকে ইয়াবা ও ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। গত ৩০ নভেম্বর একটি ব্যাগ থেকে ৮২ পিস ইয়াবা ও ৮৯ পিস ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। তার আগে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে কয়েক দফায় প্রায় এক হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, মজার বিষয় হলো এসব ইয়াবার সাথে কাউকে পাওয়া যায় না। আসামি ছাড়াই মামলা করতে হয়। বিজিবির ধারণা, এপারের লোকের আত্মীয় স্বজন ওপারে থাকে। তাদের কেউ কেউ এসব ব্যাগ বা বস্তায় ইয়াবা ফেনসিডিল রেখে চলে যায়। পরে একে অপরকে ফোন করে জানায় যে, ওই জায়গায় ব্যাগ রাখা আছে, সেখানে ইয়াবা রয়েছে। পর হয়তো এপারের কেউ ওই ব্যাগ বা বস্তা নিয়ে আসে।

বিজিবির ক্যাম্প কমান্ডার বলেন, এপারের সকলের সাথে যোগাযোগ রয়েছে। এরমধ্যে দুই তিন জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের সবসময় নজরদারি করা হয়। এই গ্রামের কেউ মাদকের সাথে যুক্ত নয় বলেও মন্তব্য করেন কমান্ডার।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইয়াবা উদ্ধারের পরই থানায় জমা দেওয়া হয়। ওইসব ইয়াবা আসল নাকি নকল পরবর্তীতে তা আর জানা যায়নি। এই সীমান্ত দিয়ে সব ধরনের চোরাচালান প্রতিরোধ করা হয়ে থাকে। খানপুরের এই সীমান্ত দিয়ে কোনো চোরাচালান হয় না।

খানপুর সীমান্ত দিয়ে মাদক চোরাচালানের বিষয়ে ৭৮ বছর বয়সী রজত আলী সারাবাংলাকে বলেন, খানপুর গ্রামের কেউ মাদকের সাথে যুক্ত নয়। এমনকি অন্যকোনো চোরাচালানের সাথেও জড়িত নয়। এই গ্রামের সবাই কৃষিকাজ, মাছ ধরা ও পশু লালন-পালন করে। এখানকার লোক সংখ্যা বর্তমানে প্রায় দুই হাজারের মতো। সবাই সবাইকে চেনেন এখানে। এমনকি বিজিবির সদস্যরাও সবাইকে জানে ও চেনে কে কি করে।

বিজ্ঞাপন

খানপুর সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা আসে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ৯০ বছর বয়সী আব্দুস সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, ইয়াবা কি জিনিস তার নামই শুনিনি। আগে এই গ্রামে (বিলীন হওয়া চর খিদিরপুর) যখন ২০ লোকের বাস ছিল তখন গরু ও ফেনসিডিল আসত। গত ১০ বছরে এরকম কিছু এসেছে তা শুনিনি। বিজিবির সদস্যরা সব সময় তৎপর এখানে। ভারতীয় সীমানায় কেউ যেন না যায়, সেজন্য বিজিবির সদস্যরা সবসময় সকলকে সচেতন করেন।

মাদক চোরাচালানের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবির রাজশাহী সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি সদস্যরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। এজন্য আগের চেয়ে টহল বাড়ানো হয়েছে। টহলের জন্য বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, চার চাকার ভেইকেল ও ইঞ্জিনচালিত স্পিডবোটসহ যাবতীয় সরঞ্জামাদি দেওয়া হয়েছে। চোরাচালান আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।

গত ৫ ডিসেম্বর রাজশাহীতে মুজিব শতবর্ষ উযযাপন উপলক্ষে ২৫ জন জেলেকে নৌকা বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সীমান্তের অনেক স্থানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর দেওয়া হয়েছে। কয়েকদিন আগে এক নারীর সংবেদনশীল জায়গা থেকে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে, গরুর পেটে ইয়াবা বহন করা হচ্ছে। গরুর পেটে তো তল্লাশি করা সম্ভব না। আমরা সবধরণের চেষ্টা করছি, মাদক চোরাচালান যাতে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

ইয়াবার কারখানা পদ্মার চর ভারত রাজশাহী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর