‘আহমদ শফী হত্যা মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে বাবুনগরী-মামুনুল’
২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:৫৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমীর প্রয়াত শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা ‘হত্যা’ মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি পাওয়ার অভিযোগ করেছেন বাদী মো. মঈন উদ্দিন। সংগঠনটির বর্তমান আমীর জুনাইদ বাবুনগরী এবং তার অনুসারীরা এই হুমকি দিচ্ছেন বলে দাবি তার।
শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শাহ আহমদ শফীর শ্যালক মঈন উদ্দিন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর শতবর্ষী ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব শাহ আহমদ শফীর জীবনাবসান হয়। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বড় মাদরাসা হিসেবে পরিচিত দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদরাসার মহাপরিচালক ছিলেন তিনি। তিনদিন ধরে ওই মাদরাসায় আহমদ শফীকে অবরুদ্ধ করে ছাত্র বিক্ষোভ হয়। এর মধ্যেই গুরুতর অসুস্থ শফীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় এবং ঢাকায় হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর থেকে শফীর অনুসারীরা তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে আসছিলেন।
শফীর মৃত্যুর পর গত ১৫ নভেম্বর প্রতিনিধি সম্মেলন করে হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে আমীর নির্বাচিত হন আগের কমিটির সহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী। মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছিলেন নুর হোসাইন কাসেমী, যিনি কয়েকদিন আগে মারা গেছেন। নতুন কমিটিতে শফীপন্থীদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এরপর গত ১৭ ডিসেম্বর আহমদ শফীকে নির্যাতনের মাধ্যমে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ এনে তার শ্যালক মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বাদি হয়ে হেফাজতের ৩৬ নেতার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলা তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।
গত ২৩ ডিসেম্বর জুনাইদ বাবুনগরী এক সংবাদ সম্মেলনে ‘রাজনৈতিক চক্রান্তে’ এই মামলা দায়ের করা হয়েছে দাবি করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
তিনদিনের মাথায় পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে এসে শফীর শ্যালক মঈন উদ্দিন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘শফী হুজুরকে হত্যা করার পর আমরা সত্য কথা বলতে পারিনি। আমাদের পরিবারের সকল সদস্যকে একের পর এক হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের পরিবার থেকে আমি বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছি। নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে মামলা যাতে প্রত্যাহার করে নিই।’
‘জুনায়েদ বাবুনগরী যদি অপরাধী হয়ে থাকেন তদন্তে যদি প্রমাণ হয় তবে তার শাস্তি দাবি করছি। দোষী না হলে তা তদন্তে প্রমাণ হবে। আমাদের মামলা প্রত্যাহার করার হুমকি কেন দিচ্ছেন। এর তীব্র নিন্দা জানাই। সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি মামলাটির তদন্ত যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। অন্যায়কারীদের শাস্তি বাস্তবায়ন হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘পিবিআই মামলার তদন্ত করছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় জুনায়েদ বাবনগরী মামুনুল হক গংরা একের পর এক হুমকি দিয়ে চলেছে মামলা প্রত্যাহারের জন্য। আমরা জানতে পেরেছি হাটহাজারী মাদরাসার নিরীহ শিক্ষক ও ছাত্রদের জুনায়েদ বাবুনগরী ব্যক্তিগতভাবে উসকানি দিচ্ছেন। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হাটহাজারী মাদরাসাকে ব্যবহার করে সংবাদ সম্মেলন করেছে। হাটহাজারী মাদরাসার মতো পবিত্র জায়গাকে কলুষিত করার জন্য তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে বাবুনগরী মিথ্যাচার করেছেন উল্লেখ করে মঈন উদ্দিন বলেন, ‘২৩ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন শফী হুজুরের মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল। এটা মিথ্যাচার। পরিবারের পক্ষ থেকে করা মামলা ষড়যন্ত্রমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলেছেন। বাবুনগরী মিথ্যাচার করেছেন।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর শফী হুজুরকে হাটহাজারী মাদরাসায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। ১৬ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর মাদরাসায় কি কি ঘটেছে তা আপনারা জানেন। হুজুরের রুম কিভাবে ভাঙচুর ও লুটতরাজ করা হয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। জোরপূবর্ক শফী হুজুরকে মাদরাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাঈনুদ্দিন রুহী বলেন, ‘শফী হুজুরকে সরাসরি হত্যা করা হয়েছে বলছি না। তবে এটা অ্যাট এইম টু মার্ডার। হত্যার জন্য যা যা করা দরকার সবই করা হয়েছে। তাই এখানে লাশ তুলে ময়না তদন্তের দরকার নেই। এটা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে তাঁর মৃত্যুর কারণ।’
প্রশ্নের জবাবে মঈন উদ্দিন বলেন, ‘ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। হুমকির বিষয় প্রতিনিয়ত পুলিশকে অবহিত করা হচ্ছে।’
শাহ আহমদ শফীর বড় সন্তান মোহাম্মদ ইউসুফের সংবাদ সম্মেলন করার কথা থাকলেও হুমকির পর নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা বিবেচনায় তিনি আসেননি বলে জানানো হয়েছে।