Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আপাতত’ একমঞ্চে বসে মহিউদ্দিনকে স্মরণ করলেন যুবলীগ নেতারা


২ জানুয়ারি ২০২১ ২১:২১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে প্রায় এক বছরের বিভক্তি ঘুচিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে স্মরণ করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের নেতারা। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের উপস্থিতিতে স্মরণসভায় একমঞ্চে বসেন নগর যুবলীগের আহবায়ক কমিটির বিবদমান নেতারা। তবে সভাস্থলে উপস্থিত হয়েই নিখিল যুবলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে একদফা হাতাহাতিও দেখেন।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে নগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই স্মরণসভার আয়োজন করে নগর যুবলীগ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

মহিউদ্দিনের স্মৃতিচারণ করে মোশাররফ বলেন, ‘আমি বড় একা হয়ে গেছি, আমরা যারা ছিলাম মহিউদ্দিন, বাবু, কায়সার সবাই চলে গেছে। আমাদের বয়সের তফাত খুব বেশি না। যারা ছিলাম সবাই চলে গেছে, শুধু আমি আছি। হয়তো কয়েক বছরের মধ্যে আমিও চলে যাব। শুধু কাজগুলো থেকে যাবে। মহিউদ্দিন চৌধুরী চলে গেছেন, উনার কাজ আজও দেখতে পাচ্ছি। আমরা মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। ভয় পেতেন না। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করেছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছি। বিপুল ভোটে তিন-তিনবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। যেখানেই মানুষের কষ্ট দেখত ঝাঁপিয়ে পড়তো। এমন নিবেদিত নেতা পাওয়া কঠিন।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘মহানগরীতে আবার মেয়র নির্বাচন হতে যাচ্ছে। যুবলীগকে বলব সবাই মিলে প্রতিটি কেন্দ্রে ভ্যানগার্ডের মতো যদি থাকেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীকে যেভাবে বিজয়ী করেছি সেভাবে এবারের মেয়র প্রার্থীকেও বিজয়ী করতে পারবো। মহিউদ্দিন চৌধুরী এই চট্টগ্রামে অনেক কাজ করেছেন। নেত্রীও স্বীকার করেন মহিউদ্দিন চৌধুরী অনেক উন্নয়ন করেছেন। তার আত্মা শান্তি পাবে যদি যোগ্য একজন মেয়র হন।’

যুবলীগ নেতাদের কোন্দলে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ‘ঢাকার পরেই চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের অবস্থান। আপনারা নেতাকর্মীরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকেন, আমি বিশ্বাস করি ওই কুখ্যাত রাজাকারের দল, ওই সন্ত্রাসী সংগঠন, ওই বিএনপি-জামায়াতের ধানের শীষ এই এলাকায় জিততে পারবে না কখনো। বিনয়ের সাথে অনুরোধ করতে চাই, নিজেদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি না করে নতুন শপথ গ্রহণ করুন। নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তারেক জিয়া লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্র করছে। সেই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে যুবলীগের নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

‘আমি বুঝতে পারি না, যুবলীগের নেতাকর্মীরা সবাই তো একই আদর্শের। তাহলে আহবায়ক কেন যুগ্ম আহবায়কের কথা ভেবে ভেবে রাতের ঘুম হারাম করবেন ? যুগ্ম আহবায়করা কেন আহবায়কের কথা ভেবে রাতের ঘুম হারাম করবেন ? কেন আপনারা যুবলীগের বিপরীত আদর্শের কথা ভেবে রাত পার করেন না। আপনারা যেদিন বিপরীত আদর্শের কথা ভেবে রাত পার করে ভোর হলেই ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্রকারী-জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকদের প্রতিহত করতে পারবেন, সেদিন বুঝব আপনারা সত্যিকারের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী। তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে দেশ দিয়ে গেছেন, সেই দেশকে রক্ষা করতে হবে।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে নিখিল বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে নৌকার জয়ের কোনো বিকল্প নেই। যুবলীগের ভাইদের বলবো, আপনারা কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে একে অপরের ভাই-বন্ধু হয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৌকার জয় নিশ্চিত করবেন।’

সভাপতির বক্তব্যে নগর যুবলীগের আহবায়ক মহিউদ্দীন বাচ্চু বলেন, ‘এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আমাদের অভিভাবক ছিলেন। উনার আদর্শে আমরা রাজনীতি করেছি। তিনি সাধারণ মানুষের সাথে মিশে যেতে পারতেন। আমরা যারা যুবলীগ করি, আমরাও উনার দেখানো পথ ধরে সব বাধা পেরিয়ে যাব, সকল ষড়যন্ত্রকে অতিক্রম করব। চট্টগ্রামের বিশাল যুব কাফেলা চট্টগ্রামে যুবলীগের সফল সম্মেলন করতে চাই। আমরা দায়িত্ব হস্তান্তর করতে চাই। অনেকদিন দায়িত্ব পালন করছি। আপনি (নিখিল ভাই) নিশ্চয় সে সুযোগ করে দেবেন।’

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহাদত হোসেন লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন, দক্ষিণের সভাপতি আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরী, নগর কমিটির চার যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, দিদারুল আলম ও মাহাবুবুল হক সুমন।

এর আগে মাইনুল হোসেন নিখিল কনভেনশন সেন্টারের সামনে নেমে স্মরণ সভাস্থলে যাবার সময় তাকে স্বাগত জানাতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সেখানে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। পুলিশ গিয়ে নেতাকর্মীদের সরিয়ে নিখিলকে সভাস্থলের দিকে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন।

প্রায় একবছর ধরে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের মধ্যে চলে আসা বিরোধ দৃশ্যমান হয় গত বছরের ২২ অক্টোবর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সন্তান শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে। নগরীর দারুল ফজল মার্কেটে সংগঠনের কার্যালয়ে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন চার যুগ্ম আহবায়ক। এরা হলেন- দেলোয়ার হোসেন খোকা, মাহবুবুল হক সুমন, ফরিদ মাহমুদ ও দিদারুল আলম। খবর পেয়ে আহবায়ক মহিউদ্দীন বাচ্চু নিজের অনুসারী নেতাকর্মীদের নিয়ে সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। এসময় পাল্টাপাল্টি স্লোগান ও উত্তেজনায় অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করে তড়িঘড়ি করে চলে যান যুবলীগ নেতারা।

এরপর গত ১১ নভেম্বর আহবায়ক এবং চার যুগ্ম আহবায়ক পৃথকভাবে নগর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণের হুমকি ও ভাঙচুরের প্রতিবাদ করতেও দেখা গেছে তাদের পৃথকভাবে। এমনকি গত ১৭ ডিসেম্বর মৃত্যুদিবসে প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণে তাদের পাল্টাপাল্টি আয়োজন ছিল।

এরপর শনিবার মহিউদ্দিনে যে স্মরণসভা হয়েছে সেটা মূলত আহবায়ক মহিউদ্দীন বাচ্চুর আয়োজন। সেই আয়োজনে চার যুগ্ম আহবায়কের উপস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে ফরিদ মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চার যুগ্ম আহবায়ক ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্রের কাছে আহবায়কের বিষয়ে অভিযোগ করেছি। উনারা অভিযোগ শুনেছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য অনুরোধ করেছেন। এর মধ্যে আহবায়ক উনার একক সিদ্ধান্তে মহিউদ্দীন ভাইয়ের স্মরণসভার আয়োজন করেন। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নিখিল ভাই আমাদের সেখানে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করেন। যেহেতু নিখিল ভাই এসেছেন, আমরা তো সেই প্রোগ্রাম এভয়েড করতে পারি না। এখন আহবায়ক যদি চান, তাহলে ভবিষ্যতেও আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারব। উনি যদি সবার মতামতের ভিত্তিতে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করেন, আমাদের তো সমস্যা নেই।’

জানতে চাইলে নগর যুবলীগের আহবায়ক মহিউদ্দীন বাচ্চু সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন চট্টগ্রামের রাজনীতিতে ঐক্যের প্রতীক। আজ উনার স্মরণসভা আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে করেছি। এই সভা থেকেই তো ঐক্যবদ্ধ থাকার নতুন শপথের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে। সুতরাং ভবিষ্যতে নগর যুবলীগ ঐক্যবদ্ধ না থাকার কোনো কারণ নেই। কারণ সংগঠন মানেই ঐক্যবদ্ধ পথচলা।‘

২০১৩ সালের ১৩ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয় কেন্দ্র থেকে। ওই কমিটিতে মহিউদ্দীন বাচ্চুকে আহবায়ক ও দেলোয়ার হোসেন খোকা, দিদারুল আলম, ফরিদ মাহমুদ ও মাহবুবুল হক সুমনকে যুগ্ম আহবায়ক করা হয়। পাঁচজনই প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। তিনমাসের জন্য গঠিত ওই আহবায়ক কমিটির মেয়াদ ইতোমধ্যে সাতবছর পার হয়েছে।

এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী টপ নিউজ স্মরণসভা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

চট্টগ্রামে খালে ভাসছিল অর্ধগলিত লাশ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৩

বিএসইসি‘র চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৫১

সম্পর্কিত খবর