ভ্যাকসিন কিনতে সিরামকে ৫০৯ কোটি টাকা পাঠাল বাংলাদেশ
৫ জানুয়ারি ২০২১ ২৩:২৮
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার ভ্যাকসিন কেনার জন্য ৫০৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটকে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এই টাকা দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে।
মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ভ্যাকসিন পেতে বাংলাদেশ সরকার, বেসরকারি ফার্মাসিউটিক্যালস বেক্সিমকো ও ভারতের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সিরামের মধ্যে সই হওয়া চুক্তি অনুযায়ী এই টাকা পাঠানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্রগুলো বলছে, চুক্তিতে বলা হয়েছিল— ভ্যাকসিন পেতে সিরাম ইনস্টিটিউট বরাবর অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। সেই অনুযায়ী ভ্যাকসিনের দাম বাবদ মঙ্গলবার ৫০৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে। সিরামের উৎপাদন করা ভ্যাকসিন বেক্সিমকো দেশে এনে প্রয়োগ করলে ওই সময় বেক্সিমকোকে টাকা দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন-
- এখনই টিকা রফতানি করবে না ভারত
- একনেকে ভ্যাকসিন ক্রয়সহ ৬ প্রকল্প অনুমোদন
- ভ্যাকসিন কবে পাব এখনই বলা যাচ্ছে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- জি-টু-জি বিষয় নয়, ভ্যাকসিন পেতে দেরি হবে না: স্বাস্থ্য সচিব
- বেক্সিমকোকে ভ্যাকসিন আমদানির অনুমতি দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন
- ‘ভ্যাকসিন রফতানি নিয়ে ভারতের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের জন্য নয়’
- টক অব দ্য টাউন: করোনা ভ্যাকসিন রফতানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা
- সব দেশেই করোনার টিকা রফতানির অনুমোদন রয়েছে: সিরাম সিইও
- রফতানির অনুমতি পেতে কয়েকমাস লেগে যেতে পারে— জানাল সিরাম
- আগেই চুক্তি হওয়ায় সিরামের ভ্যাকসিন পেতে সমস্যা হবে না: বেক্সিমকো
এর আগে, সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার তিন কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন আনতে গত ৫ নভেম্বর ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হয়। পরে ১৩ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত ক্রয়চুক্তি সই করে সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছে পাঠানো হয়।
এর মধ্যে গত রোববার (৩ জানুয়ারি) ভারত সরকার করোনা প্রতিরোধে দেশটির ওষুধ নির্মাতা সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার ভ্যাকসিন জরুরি প্রয়োগের জন্য অনুমোদন দেয়। ওই সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশ পায়, ভারত সরকার দেশের চাহিদা না মেটানো পর্যন্ত এই ভ্যাকসিন রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
ভ্যাকসিন রফতানিতে ভারতের এই নিষেধাজ্ঞায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশে। তবে সোমবার (৪ জানুয়ারি) স্বাস্থ্যমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিব আশ্বস্ত করেন, এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় বাংলাদেশ পড়বে না। ত্রিপাক্ষিক চুক্তির অন্যতম বেক্সিমকো’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল হাসান পাপন ওই দিন (সোমবার) বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে জানান, ভারত সরকার ভ্যাকসিন রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও আগে থেকেই চুক্তি হয়ে যাওয়ার কারণে সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে ভ্যাকসিন পেতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
ঢাকায় ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনারের সঙ্গে কথা বলে সোমবার দুপুরেই স্বাস্থ্যসচিব জানান, টিকা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। চুক্তি অনুযায়ীই টিকা পাবে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করে ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে। বিকেলে সংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানান, ভারত সরকার তাদেরকে জানিয়েছে, সিরাম প্রধানের বক্তব্য অপরিপক্ব। যথাসময়ে টিকা পাবে ঢাকা।
পরে সোম ও মঙ্গলবার সিরাম ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকেও জানানো হয়, ভ্যাকসিন রফতানিতে তাদের কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। আগের প্রচারিত সংবাদটি পুরোপুরি সঠিক নয়। সোমবার সিরাম জানায়, রফতানির অনুমতি পেতে তাদের কয়েকমাস লাগতে পারে। তবে মঙ্গলবারই আবার তারা জানায়, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই তারা ভ্যাকসিন রফতানির কার্যক্রম শুরু করতে পারে।
এদিকে, নাজমুল হাসান পাপন ব্রিফিংয়ে জানান, চুক্তি অনুযায়ী সিরামকে অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করা হলে এবং বাংলাদেশে ভ্যাকসিনটির নিবন্ধন দেওয়া হলে সময়মতোই এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আসবে। এর মধ্যে সোমবারই ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর বেক্সিমকোকে এই ভ্যাকসিন আমদানির জন্য অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দিয়েছে। আজ মঙ্গলবার সিরামকে অগ্রিম অর্থও পরিশোধ করল বাংলাদেশ সরকার।
করোনাভাইরাস করোনার ভ্যাকসিন কোভিড-১৯ বাংলাদেশ সরকার বেক্সিমকো ভ্যাকসিন ভ্যাকসিনের টাকা সিরাম ইনস্টিটিউট