চট্টগ্রামের ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ নুরু নোয়াখালী থেকে গ্রেফতার
৯ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:৩৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পাহাড় দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৩০ মামলার আসামি চট্টগ্রামের এক দুর্ধর্ষ অপরাধীকে সহযোগীসহ নোয়াখালী থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) রাতে নগরীর আকবরশাহ থানা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম জোনের সদস্যরা যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে তাকে নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার শান্তিরহাট থেকে এক সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতার দুজন হল- নুরে আলম ওরফে নুরু (৪০) এবং সহযোগী মো. কাউছার (৩৮)।
শনিবার দুপুরে সিএমপির উপ-কমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গ্রেফতার নুরু নগরীর আকবর শাহ থানার তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। নুরু ও কাউছারকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আকবর শাহ এলাকার লেকসিটি পাহাড়ের নাছিয়াঘোনা এলাকায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে নুরুর আস্তানায় মাটির নিচ থেকে একটি ওয়ান শুটার গান, একটি রিভালবার, দুইটি কিরিচ ও একটি রাম দা এবং ৪ শ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
গত ২৬ ডিসেম্বর আকবর শাহ থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যরা যৌথভাবে নাছিয়াঘোনায় অভিযানে গেলে নুরুর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। সেদিন নুরুর এক সহযোগীকে গ্রেফতার করা হলেও নুরু পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এরপর আবার অভিযান চালিয়ে তার আরও ১৩ সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়।
উপপুলিশ কমিশনার ফারুক বলেন, ‘পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় নুরু সেই সুবিধা কাজে লাগিয়ে সেসময় পালিয়ে যায়। কিন্তু থানা পুলিশ ও ডিবির একটি যৌথ দল তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এবং অনুসন্ধানের বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে নোয়াখালীর প্রত্যন্ত চর অঞ্চল থেকে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। তবে সেখানে সে বারবার স্থান পরিবর্তন করছিল।’
নগরীর নাছিয়াঘোনার ১ নম্বর ঝিল এলাকায় জন্ম নেওয়া নুরু বিনোদন কেন্দ্র ফয়’স লেক পরিচালনাকারী কনকর্ড গ্রুপের একজন কর্মচারী ছিলেন।
আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফয়’স লেকের কাছে পাহাড়ে বসবাস করে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তোলে নুরু। প্রথমে বিভিন্ন ছোট ধরনের অপরাধ, চুরি করলেও পরে পাহাড় কাটায় জড়িয়ে পড়ে। গড়ে তোলে ৫০-৬০ জন সদস্যের সক্রিয় বাহিনী। পাহাড় দখল করে, কেটে অবৈধভাবে ঘর ও প্লট তৈরি করে বিক্রি করছিল। এমনকি ফয়’স লেক কেন্দ্রিক পাহাড়ের মূল্যবান গাছ কেটে কাঠ পাচারেও জড়িত নুরু। এক যুগ ধরে পাহাড় দখল, পাহাড় কাটা, গাছ কেটে পাচার, অপহরণ, ধর্ষণ ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত সে। তার আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’
অভিযানে অংশ নেওয়া নগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম জোনের পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘পাহাড় দখলের জন্য ভুয়া কবর তৈরি করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয় নুরু। পরে সেখানে ঘর বানিয়ে বিক্রি করে। গ্রেফতার এড়াতে পাহাড়ে তৈরি করেছে বিভিন্ন গোপন পথ। নিজস্ব বাহিনী আছে যারা পুলিশের গতিবিধিও নজরদারি করে। সশস্ত্র সদস্যদের পাহারায় চলাফেরা করত। এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা আমরা পেয়েছি। তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে নগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম বিভাগের উপকমিশনার মনজুর মোরশেদ, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবুল কালাম শাহীন এবং সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) এ এ এম হুমায়ুন কবিরও ছিলেন।