সিজারের নিরাপত্তা মঞ্চের ফল পাচ্ছেন ঢাবির হাজারো শিক্ষার্থী
১০ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:০৮
ঢাবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান নাঈম। তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলায়। গত ডিসেম্বর মাসে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের হাতে তার পরিবার টানা তিনবার হামলার শিকার হন। অনন্যোপায় হয়ে নাঈম সাহায্য চাইলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চের কাছে। মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়াস সিজার তালুকদারের তাৎক্ষণিক তৎপরতায় দ্রুত বিচার পান নাঈম। জেলা অ্যাডিশনাল এসপিকে জানালে তিনি পুলিশ পাঠিয়ে দুজন আসামিকে গ্রেফতার করেন।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসেরই মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী যোগাযোগ করেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিরাপত্তা মঞ্চের কাছে। অভিযোগ—তার অমতেই পরিবারের পছন্দের পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এদিকে এই শিক্ষার্থীর ইচ্ছে—পড়াশোনা শেষে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। যথারীতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় নিরাপত্তা মঞ্চ। যোগাযোগ করা হয় ওই শিক্ষার্থীর ইউনিয়নের এসিল্যান্ডের সঙ্গে। এসিল্যান্ড সেই শিক্ষার্থীর বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে অমতে বিয়ে দেওয়া আটকাতে সক্ষম হন।
বলছিলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে উঠা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেকোনো সমস্যায় এই সংগঠনের সহায়তা পায়। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রসংসদের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জি এস) জুলিয়াস সিজার তালুকদার।
সারাবাংলাকে স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটির গোড়ার দিককার গল্প শোনান সিজার। সিজার বলেন, `আমি দেখলাম, করোনা মহামারির সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী নিজের গ্রামে গিয়ে নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছিলেন। গত ১৯ জুন টাঙ্গাইলে একজন প্রাক্তন ছাত্র খুন হওয়ার ঘটনা ঘটে। পরদিন টাঙ্গাইলে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি মানববন্ধনের আয়োজন করতে চাইলাম। প্রতিক্রিয়ায় দেখলাম, মানববন্ধন হওয়ার আগ এর আয়োজনের খবর শুনেই স্থানীয় প্রশাসন ওই ঘটনা নিতে খুব তৎপর হলো। বুঝতে পারলাম, একটা শক্তি আছে আমাদের। সেই ঘটনা থেকেই মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ প্রতিষ্ঠার চিন্তাভাবনা।’
নিরাপত্তা মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত আছেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে সুপারিশপ্রাপ্ত-প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও কর্মরত প্রায় ২ হাজার ৬ শ ব্যক্তি। এরা সকলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া পুলিশ-প্রশাসনে কর্মরত প্রায় ৩৫০ জন কর্মকর্তা মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত আছেন।
জুলিয়াস সিজার বলেন, `যখন কোনো শিক্ষার্থী তার সমস্যা নিয়ে মঞ্চের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তখন আমরা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করি৷ এতে করে দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়।’
দেশের যেকোনো প্রান্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়লো—হোক তা জমি-সংক্রান্ত, নারী নির্যাতন সংক্রান্ত, সন্ত্রাসী হামলা সংক্রান্ত কিংবা এই ধরনের অন্য কোনো সমস্যায় পড়লো—নিরপত্তা মঞ্চে যোগাযোগ করলেই পাওয়া যায় সহযোগিতা।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই নিয়ে প্রায় ১৪০ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়েছে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। এ ছাড়া ৩০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে আত্মহত্যার দোরগোড়া থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন সংগঠনটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনটির সবশেষ তথ্যমতে, ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ফেইসবুকে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়েছেন—এমন ৫৬টি অভিযোগ তাদের কাছে এসেছে।
জুলিয়াস সিজার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবকটি ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রীদের সহায়তা দিয়েছে নিরাপত্তা মঞ্চ। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় প্রতারকদের গ্রেফতার করা হয়ে থাকে।`
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে ২৫ হাজারেরও অধিক সদস্যবিশিষ্ট একটি গ্রুপ রয়েছে সংগঠনটির। এছাড়া রয়েছে একটি পেইজ। সংশ্লিষ্টদের ফোন করে কিংবা ফেইসবুক পেইজ-গ্রুপে পোস্ট বা মেসেজ করে সমস্যার কথা জানিয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেতে পারেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।