লাকিংমের জন্য ‘ভালোবাসার প্রদীপ’ জ্বেলে খুনের বিচার দাবি
২১ জানুয়ারি ২০২১ ২০:৪৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মর্মান্তিক মৃত্যুর শিকার কক্সবাজারে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তরুণী লাকিংমে চাকমার জন্য ‘ভালোবাসার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন’ করেছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিক।
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে নগরীর চেরাগি চত্বরে যৌথভাবে এই কর্মসূচির আয়োজন করে চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদ হাসান।
প্রদীপ প্রজ্বলনের আগে আয়োজিত সমাবেশে নাগরিকরা লাকিংমে চাকমাকে খুন করা হয়েছে দাবি করে হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাওয়া হয়েছে।
সমাবেশে রাশেদ হাসান বলেন, ‘যদি দেশের সংবিধান সকল জাতিগোষ্ঠীর অধিকার স্বীকার করে তাহলে কেন কিছুদিন পরপর অধিকারের দাবিতে আদিবাসীদের পথে নামতে হয়? সবার রক্তে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। মাত্র ১৫ বছরের কিশোরী লাকিংমেকে অপহরণ করা হয়। কখনোই তা আইনসম্মত নয়। এটি দীর্ঘ চক্রান্ত, নারীর প্রতি অবিচার কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। একটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে না পারলে আরো অন্যায় হবে। লাকিংমে চাকমার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করছি।’
ওয়ার্কার্স পার্টির চট্টগ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান বলেন, ‘আমরা লাকিংমে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। দোষীদের গ্রেফতার করা হোক। লাকিংমের জন্য আমাদের ভালোবাসা অব্যাহত থাকবে। অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরী লাকিংমেকে জোরপূর্বক ধর্মান্তর করা হয়। আমরা এরও বিচার চাই। চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা লাকিংমের পরিবারের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ বলেন, ‘লাকিংমে চাকমাকে নির্মমভাবে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে। তার পরিবার এর ন্যায্যবিচার পায়নি। লাকিংমে কোনো একক ঘটনা নয়। পাহাড়ে ও সমতলে এরকম অনেক ঘটনা ঘটছে। জিয়াউর রহমান শান্ত পাহাড়ে অশান্তির আগুন জ্বেলে দিয়েছে। সেই দাবানল আজো জ্বলছে। সরকার মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে নানা চেষ্টা করলেও দুষ্টচক্র সক্রিয়। লাকিংমের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার চাই।’
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা শ্রাবণ চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজী, ন্যাপের সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাশগুপ্ত, সাংবাদিক প্রীতম দাশ, সাংস্কৃতিক সংগঠক সুনীল ধর, হাবিবুল হক বিপ্লব, শৈবাল পারিয়াল, কাবেরী আইচ, বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল আইচ, পাহাড়ি শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জগৎ চাকমা, সহ সভাপতি ডিয়াস তঞ্চঙ্গ্যা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুখী কুমার তঞ্চঙ্গ্যা।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শীলখালী গ্রামের চাকমা পাড়ার লালা অং চাকমার মেয়ে ১৫ বছর বয়সী লাকিংমে চাকমা ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি অপহরণের শিকার হন। প্রায় একবছর পর গত ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় লাকিংমের বাবা-মা কক্সবাজার সদর হাসপাতালে তাকে মৃত অবস্থায় পান। নানা আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে গত ৪ জানুয়ারি তার মরদেহ বাবা-মার কাছে হস্তান্তর করা হয়। মৃত্যুর পর ২৬ দিন মর্গেই পড়েছিল লাকিংমের মরদেহ।
সারাবাংলা/আরডি/এমও