তোরে না নিয়া বাড়ি যাব না : মাহমুদের বাবা
১৯ মার্চ ২০১৮ ১২:৫৪
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা : ‘বাবা আয়। আমার কাছে আয়। তোরে না নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাবো না। আমার বাবার লাশ আসতে কতো দেরি?’- কথাগুলো বলছিলেন নেপালে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত রানার অটোমোবাইলের কর্মী এস এম মাহমুদুর রহমানের বাবা এস এম মশিউর রহমান।
সোমবার (১৯ মার্চ) সকালে রাজধানীর নিকুঞ্জে মাহমুদের বাসায় গিয়ে দেখা যায় শোকে স্তব্ধ পরিবারের সদস্যরা। ক্ষণে ক্ষণেই চিৎকার করে কেঁদে উঠছেন উঠছেন মা লিলি বেগম। বাবা অপেক্ষা করছেন কখন লাশ আসবে। কখন ছেলেকে নিয়ে যাওয়া হবে বাড়ি।
নিহত এস এম মাহমুদুর রহমান রানার অটোমোবাইলসের হেড অব সার্ভিস ও সিনিয়র ম্যানেজারের (কাস্টমার কেয়ার) দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে। নেপালে যাচ্ছিলেন রমন মোটরস কর্মীদের বিক্রয়োত্তর সেবার প্রশিক্ষণ দিতে। তার সঙ্গে রানারের আরও দুই কর্মী ছিল। তারা হলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মো. মতিউর রহমান, জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ফোরম্যান নুরুজ্জামান বাবু। ১৭ মার্চ পর্যন্ত তাদের নেপালে থাকার কথা ছিল।
সোমবার সকালে নিকুঞ্জ-২’র জীবন নেছা ভিলায় গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের সবাই অপেক্ষার প্রহর গুনছেন কখন লাশ আসবে? শোক চাপা দিয়ে মাহমুদের ছোট ভাই রূপম লাশ দাফনের ব্যাপারে কথা বলছেন পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে।
রূপমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজার পর মহমুদের লাশ নিয়ে যাওয়া হবে রানা অটোমোবাইলের অফিসে। সেখানে জানাজা শেষে লাশ রাখা হতে পারে সিএমএইচ হাসপাতালে।
মঙ্গলবার ভোরে মাহমুদের লাশ ফরিদপুরের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাগল প্রায় মাহমুদের বাবা। তিনি বলছিলেন, ‘আমার ছেলেকে নিয়ে আমি আজই বাড়ি যাব। আমারটা আমি নিয়ে চলে যাব। বাবাকে ছাড়া আমি কিছুতেই যাব না।’
কান্না থামিয়ে মাহমুদের মা লিলি বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেক কষ্টে আমার ছেলেটা লেখাপড়া করছে। অনেক উপরে উঠার ইচ্ছে ছিল। উপরে উঠছেও। এখন আমার ছেলেটা নেই।’
বলেই আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কিছুক্ষণ পর কান্না থামিয়ে বলেন, ‘আবার বাবা ঘর করতেছিল। অনেক ভালো একটা ঘর করার ইচ্ছে ছিল তার। ছাদ দিয়া দালান ঘর। ছাদ হইছে। কোনো রকম থাকার ব্যবস্থা হইছে। আমার বাবাটা আর নেই।’
মাহমুদের পরিবারের তথ্যমতে, সে ৬ বছর ধরে রানারে কাজ করতেন। বিপদে অন্য সহকর্মীদের পাশে দাঁড়াতেন। কেউ কোনো ভুল কাজ করলে তারও দায় নিতেন তিনি। গ্রামে মানুষকে নানাভাবে সাহায্য করতেন। মসজিদ মাদ্রাসায় আর্থিক সাহায্য ছাড়াও সমাজ সেবামূলক কাজেও যুক্ত ছিলেন।
মাহমুদের স্ত্রী সানজিদা আফরিন ঝর্ণা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সে (মাহমুদ) প্রচণ্ড কাজ পাগল মানুষ ছিল। কাজ ছাড়া কিছুই বুঝত না। কাজের তাগিদে প্রায়ই বিভিন্ন দেশে বেড়াতে।’
তিনি বলেন, ‘অফিসে যদি কেউ ভুল করত তাদের বাঁচাতে গিয়ে সে বলত- এ ভুলটা আমি নিজে করেছি।’
ঝর্ণা আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় সে উড়োজাহাজে থাকা অবস্থায় কাউকে বাঁচাতে গিয়ে মরা গেছে। এটা আমার আত্মবিশ্বাস। উনি যে ধরনের মানুষ, আমার বিশ্বাস ভুল হতে পারে না।’
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিএম/একে
আরও পড়ুন
নেপাল থেকে মরদেহ আসছে আজ, জানাজা আর্মি
মেন্টাল ট্রমায় শাহরিন,শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল
বৃহস্পতিবার সারাদেশে শোক, শুক্রবার প্রার্থনা
কটেশ্বরের দমকা পাহাড়ি হাওয়া কেড়ে নিলো ৫১ প্রাণ!
নেপালের বিমানবন্দরে ৭০টির বেশি দুর্ঘটনা
পরিবারগুলোর জন্য আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি : প্রধানমন্ত্রী
কাঠমান্ডুর প্লেন দুর্ঘটনায় জাতিসংঘের শোক
নেপালে গেল বাংলাদেশের মেডিকেল টিম
৭ জনকে ছাড়পত্র, দেশে ফিরছেন ৪ জন
দেশে ফিরছে শাহরিন, রেজওয়ানুল ভর্তি সিঙ্গাপুরে
তদন্তে লাগতে পারে দীর্ঘ সময় : সিভিল অ্যাভিয়েশন
ঢামেকে নেওয়া হচ্ছে শাহরিনকে, প্রস্তুত আইসিইউ
দেশে ফিরছেন আরও ৩ জন
উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য দোয়া-প্রার্থনা