জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতেই ভ্যাকসিন নিয়েছি— ট্রাফিক সার্জেন্ট দিদারুল
২৭ জানুয়ারি ২০২১ ২০:৪০
ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন নেওয়া দেশের প্রথম পাঁচ জনের একজন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মো. দিদারুল ইসলাম। জনগণের সেবক ও তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতেই এই ভ্যাকসিন নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ভ্যাকসিন নেওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দিদারুল মোবাইলে সারাবাংলাকে বলেন, ‘জনগণের সেবক হিসাবে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে চাই, যেন তারা সবাই ভ্যাকসিন নিয়ে দেশকে করোনামুক্ত করতে সাহায্য করেন।’
বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে দেশের চতুর্থ নাগরিক হিসেবে ভ্যাকসিন নেন মো. দিদারুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এই অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।
আরও পড়ুন-
- ভ্যাকসিন প্রয়োগে প্রস্তুত ৫ হাসপাতাল
- এ ভ্যাকসিন সবচেয়ে নিরাপদ: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- প্রথম যে ৫ জন পেলেন করোনার ভ্যাকসিন
- দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু
- ‘ভ্যাকসিন নিতে ব্যথা পাইনি, খারাপও লাগছে না’
- ‘লক্ষ্য ছিল জনগণের সুরক্ষা, সেভাবেই ভ্যাকসিন পেয়েছি’
- ‘জয় বাংলা’য় উজ্জীবিত ভ্যাকসিন হিরোরা, প্রধানমন্ত্রীর অভিবাদন
- ‘ভালো না লাগা’ রোগের ভ্যাকসিন আছে কি না জানি না: প্রধানমন্ত্রী
দিদারুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের জামষাইটে। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। ২০১৭ সালে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে সার্জেন্ট পদে যোগ দেন তিনি।
উদ্ভাবনের পর থেকেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে অনেকের মধ্যেই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাজ করছে। এ অবস্থায় একদম শুরুর ধাপেই ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রক্রিয়ায় কেন ও কিভাবে যুক্ত হলেন— সারাবাংলার পক্ষ থেকে প্রশ্ন রাখা হয় দিদারুলের কাছে।
জবাবে দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে করোনার ভ্যাকসিন আসবে— এ খবর শোনার পর থেকেই টিকা নেওয়ার ব্যাপারে আমার প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। সিনিয়র স্যারদের নির্দেশ ও আমার প্রবল আগ্রহে টিকার নেওয়ার প্রথম পাঁচ জনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের সেবক হিসেবে প্রথমেই টিকা নিয়েছি, যেন জনগণ উদ্বুদ্ধ হয়। পুলিশ থেকে আমাদের নাম চাওয়া হয়েছিল। কে, কেন ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী— তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। আমি জানিয়েছিলাম, আমি নিতে ইচ্ছুক। আমার ইচ্ছা থাকার কারণেই আমি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছি। কেবল প্রথম দিন নয়, প্রথম পাঁচ জনের মধ্যেই ভ্যাকসিন নিতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। একইসঙ্গে টিকা নিতে পেরে জনগণের সেবক হিসাবে গর্ববোধও করছি।’
দিদারুল আরও বলেন, ‘প্রথম ধাপেই ভ্যাকসিন নেওয়ার কারণ হচ্ছে, আমরা জনগণের সেবক। পুলিশকে দেখে অনেকেই অনেক কাজে উদ্বুদ্ধ হয়। আমাকে দেখে জনগণ যেন ভ্যাকসিন নেওয়ার ব্যাপারে উদ্ধুদ্ধ হয়, আগ্রহী হয়— এ কারণেই প্রথম ধাপে ভ্যাকসিন নিয়েছি।’
ভ্যাকসিন নেওয়ার পর শারীরিকভাবে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না— জানতে চাইলে এই পুলিশ সদস্য বলেন, ‘ভ্যাকসিন নেওয়ার পর আমাদের আধা ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। কিন্তু ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে যেমন ছিলাম, এখনো তেমনই আছি। বাড়তি কিছুই মনে হচ্ছে না। আমরা একসঙ্গে যে পাঁচ জন টিকা নিয়েছি, সবাই ভালো আছি। কারও কোনো সমস্যা হতে দেখিনি।’
দিদারুল বলেন, ‘দেশে করোনার ভ্যাকসিন আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের কারণেই আমি টিকা নিতে পেরেছি। এজন্য প্রধামন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।’
কুর্মিটোলা হাসপাতালে অবশ্য একা আসেননি দিদারুল। সঙ্গে স্ত্রী আঁখি মনিকেও নিয়ে এসেছিলেন। প্রথম দিনেই ভ্যাকসিন গ্রহণ প্রসঙ্গে তার প্রতিক্রিয়া কী ছিল— জানতে চাইলে দিদারুল বলেন, প্রথম কয়েকজনের মধ্যেই ভ্যাকসিন নেব শুনে প্রথমে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিল। পরে অবশ্য সাহস দিয়েছে। আমার সঙ্গে এসেছে। সাপোর্ট করেছে। আমি ভ্যাকসিন নেওয়ার পর এখন সেও খুব খুশি।
দিদারুলের সঙ্গে যখন সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের কথা হচ্ছিল, তখনো পাশে ছিলেন তার স্ত্রী আঁখি মনি। কথা হয় তার সঙ্গেও। আঁখি মনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভ্যাকসিন নেওয়ার কথা শুনে প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। কান্নাকাটিও করেছি। বাড়ির সবাই কান্নাকাটিও করেছে। পরে অবশ্য সবাই সাহস দিয়েছি। আর বলেছি, ভ্যাকসিন নেওয়ার সময় আমাকে সঙ্গে রাখতে হবে। সঙ্গেই ছিলাম, এখনো আছি।’
আঁখি মনি বলেন, এখন পর্যন্ত ও (দিদারুল) সুস্থ আছে। আশা করি সুস্থ থাকবে। দেশের সেবক হিসেবে সে প্রমাণ করেছে— সে সচেতন নাগরিক, সে সত্যিকার অর্থেই জনগণের সেবক।
এর আগে, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগের প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এরপর একে একে একই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আহমেদ লুৎফুল মোবেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক মতিঝিল বিভাগের কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।
এই পাঁচ জনকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের পুরো সময়টায় গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ভ্যাকসিন গ্রহীতাকে পাঁচ জনকেই অভিবাদন ও ধন্যবাদ জানান।
পরে কুর্মিটোলা হাসপাতালেই বিভিন্ন শ্রেণিপেশার আরও ২১ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এ নিয়ে প্রথম এই দিনটিতে মোট ২৬ জন ভ্যাকসিন পেলেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) এই হাসপাতাল ছাড়াও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে। একেকটি হাসপাতাল চার থেকে পাঁচশ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পর একসপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপর সারাদেশে শুরু হবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
করোনার ভ্যাকসিন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল টপ নিউজ ট্রাফিক সার্জেন্ট ট্রাফিক সার্জেন্ট দিদারুল ভ্যাকসিন গ্রহণ মো. দিদারুল ইসলাম