মেয়েকে ধর্ষণ মামলা, বাবার বিরুদ্ধে রায় আজ
২৮ জানুয়ারি ২০২১ ০৮:১৮
ঢাকা: রাজধানীর বাড্ডায় নিজের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বাবা কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা আজ (২৮ জানুয়ারি)।
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার এ রায় ঘোষণা করবেন। ট্রাইব্যুনালে এই প্রথম বাবা কর্তৃক নিজ মেয়েকে ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপক্ষ আসামি কামালের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড আশা করছে।
সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আফরোজা ফারহানা (অরেঞ্জ) সারাবাংলাকে বলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অভিযোগ প্রমাণ করা হয়েছে। আসামি নিজেও দোষ স্বীকার করেছে। মামলার অন্যান্য আলামত ও ডিএনএ আসামির সঙ্গে ম্যাচ করেছে। রায়ে আমরা সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড আশা করছি। সেই সঙ্গে এ রায়টি যেন হয় সমাজের কিছু পাষণ্ড বাবা নামক পশুদের জন্য বার্তা হবে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নেই। সেটি বাবা হোক বা অন্য কেউ। অপরাধীকে তাদের কৃতকর্মের সাজা পেতেই হবে।’
তিনি বলেন, ‘মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালীন ভিকটিমকে বিচারকে জিজ্ঞেসা করেছিলেন, তুমি কী সাজা চাও? মেয়েটা তখন বিচারককে বলে, আমি কোনো সাজা চাই না। তখন বিচারক আবার বলে, ‘কেন সাজা চাও না।’ ভিকটিম তখন বলে, এটা আমার ‘বাবা।’
বিচারক আবার জিজ্ঞেসা করেন, ভিকটিম যদি তোমার মেয়ে হতো? আর তোমার স্বামী তাকে ধর্ষণ করলে তুমি কী করতে?
তখন মেয়েটা উত্তরে বলে, ‘তাকে আমি ফাঁসি দিতাম।’
এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ আসামি বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তাই আমরা আশা করি রায় আসামির পক্ষেই যাবে।’
রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৯ জানুয়ারি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার এ রায়ের তারিখ ধার্য করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ভিকটিমের বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে যাওয়ায় ভিকটিম তার দাদির কাছে থাকত। স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের পর আসামি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। গত বছরের এপ্রিল মাসে ভিকটিমকে তার বাবা রূপনগর আবাসিক এলাকার বস্তিতে নিয়ে যান। এ নিয়ে তার সৎ মায়ের সঙ্গে বাবার ঝগড়া হয়। পরে ২ মে ভিকটিমকে নিয়ে তার বাবা বাড্ডার আব্দুল্লাহবাগ এলাকায় বাসা ভাড়া নেয়। ৪ মে এবং ৫ মে কামাল হোসেন ভিকটিমকে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় ভিকটিম নিজে বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় মামলা করেন।
মামলাটি তদন্ত শেষে রাজধানীর বাড্ডা থানার এসআই আল-ইমরান আহম্মেদ কামাল হোসেনকে একমাত্র অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। গত ১২ অক্টোবর আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু আদেশ দেন।
২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬ জনের সাক্ষ্য নেন আদালত। মামলা দায়েরের পর কামাল হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মহিবুল হাসান আপেল বলেন, ‘মামলার বিচার চলাকালে বাদী আদালতে বলেছে, তার বাবা তাকে জন্ম দিয়েছে। তাই সে বিচার চায় না। যেহেতু বাদী বিচার চায় না সেক্ষেত্রে আদালত বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘বাদী নিজেই তো আসামির বিচার চাই না। তাই হয়ত আদালত দয়া করে তাকে খালাস দিতে পারেন। আশা করছি, আদালত তাকে খালাস দিবেন।’
ভিকটিমের মামা বলেন, ‘আমার বোন ও তার স্বামীর যখন ডিভোর্স হয়ে যায় তখন ওরা দুই ভাই-বোন ছোট ছিল। নিজ হাতে খাইয়ে, গোছল করিয়ে আদর যত্নে চোখের সামনে বড় করেছি। বাবা-মায়ের অভাব বুঝতে দেয়নি। একটু বড় হওয়ার পর তার বাবা কামাল হোসেন তাদের এসে নিয়ে যায়। ইচ্ছা থাকলেও তাদের আটকাতে পারিনি। এরপর তো এ ঘটনা ঘটছে।’
তিনি বলেন, ‘ছেলে-মেয়ের আশ্রয়স্থল পিতা-মাতার কোল। সেখানে যদি সন্তানরা নিরাপদ থাকতে না পারে। তাহলে সন্তানরা যাবে কোথায়? আসামির যেন দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয় সেটিই আশা করছি।’
সারাবাংলা/এআই/একে