তারা বিএনপিতেই আছেন
২৮ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:০৫
ঢাকা: দল ও দলীয় প্রধান বিরুদ্ধে বক্তব্য এবং চেইন অব কমান্ড ভেঙে নিজের মতো করে মাঠ গরম করতে গিয়ে ‘শোকজ খাওয়া’ তিন শীর্ষ নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দীন আহমেদ ও শওকত মাহমুদের ব্যাপারে বিএনপি অনেকটাই নমনীয়। আপাতত তারা বিএনপিতেই থাকছেন। নতুন করে কোনো ‘ঝামেলা’ না পাকালে তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেবে না বিএনপি।
দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতারা সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তারা বলেছেন, দলীয় ঐক্য ধরে রাখতে এবং দলের বৃহত্তর স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বিএনপিতে শওকত মাহমুদের ভবিষ্যৎ খুব একটা উজ্জ্বল নয় বলে জানিয়েছে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র।
দলীয় সূত্রমতে, ২০২১ সালজুড়ে বিএনপির মূল লক্ষ্য সার্বজনীন ব্যাপকতার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্ত্রী উদযাপন ও দলীয় ঐক্য ধরে রাখা। এ লক্ষ্যে দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকা বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সক্রিয় করার চেষ্টা করছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রমের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে যোগাযোগ করা হয়। এর ফলে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন মেজর (অব.) হাফিজ।
দলের কিছু নীতি-কৌশলের সমালোচনা করায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদকে এবং দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙে সরকার পতনের লক্ষে হঠাৎ গণজমায়েত করায় শওকত মাহমুদকে গত বছরের শেষে দিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিএনপি। তারা লিখিতভাবে নোটিশের জবাব দেন। নোটিশের জবাব দেওয়ার দিন নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে মেজর হাফিজ বিএনপি ছাড়ার ইঙ্গিত দেন।
সূত্রমতে, মেজর (অব.) হাফিজকে নোটিশ পাঠানোর ঘটনায় দলের ভেতরে–বাইরে প্রতিক্রিয়া হয়। নীতি-কৌশলের সমালোচন করায় একজন শীর্ষ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ায় দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ না থাকার বিষয়টি সামনে চলে আসে বলে অনেকে মত দেন। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দলের পক্ষ থেকে মেজর (অব.) হাজিফ উদ্দিনের আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। দলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখা এবং দলের স্বার্থবিরোধী বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য তাকে আহ্বান জানানো হয়।
বিএনপির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান বর্ষীয়ান রাজনীতিক শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তার এই বক্তব্য ভাইরাল হওয়ার পর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে বিএনপি। যদিও তাকে কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়নি। তারপরও নিজের বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন শাহ মোয়াজ্জেম। তার এই ‘আত্মোপলব্ধি’কে বিএনপি ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। নতুন করে ‘বেফাঁস’ কিছু না বললে বা ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ কিছু না করলে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেবে না বিএনপি।
তবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদের বিষয়টি একটু ভিন্ন। দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে এই মুহূর্তে হয়তো শওকত মাহমুদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা নেবে না বিএনপি। কিন্তু বিএনপিতে এই সাংবাদিক নেতার ভবিষ্যৎ খুব বেশি উজ্জ্বল নয়। এর আগেও তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার নানা খবর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পৌঁছেছে। তবে দলীয় ঐক্য ও শৃঙ্খলা ধরে রাখার স্বার্থে এ যাত্রায় রক্ষা পেয়ে যাচ্ছেন শওকত মাহমুদ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন দূরত্ব তৈরি বা বিভাজনের সময় নয়। দলকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ চলছে। তাদের (শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর হাফিজ ও শওকত মাহমুদ) সঙ্গে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, সেটি কমে গেছে। তারা দলের সঙ্গেই আছেন।’
অবশ্য এ ব্যাপারে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর হাফিজ ও শওকত মাহমুদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দলীয় সূত্রমতে, আপাতত গণমাধ্যমে যেকোনো ধরনের বক্তব্য, বিবৃতি, মতামত দেওয়া থেকে তাদের বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর
বিএনপি মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দীন আহমেদ শওকত মাহমুদের শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন