Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষার্থীদের জীবন চলমান থাকুক, সেটিই আমরা চাই: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩০ জানুয়ারি ২০২১ ১৩:৩৬

ঢাকা: শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটি বছর যেন নষ্ট না হয়ে যায়, সে কারণেই আগের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার মূল্যায়নভিত্তিক ফল প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থী যারা, তাদের জীবন থেকে একটি বছর নষ্ট হয়ে যাক— সেটা তো আমরা চাই না। তাদের জীবনটা চলমান থাকুক— সেটাই আমরা চাই। সে কারণেই আমরা এই ফলাফলটা ঘোষণা দিলাম। আমি আশা করি যে সবাই এই ফলে আনন্দিত হবে এবং তাদের পড়ালেখা অব্যাহত থাকবে।

শনিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলপ্রকাশের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত ছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন-

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি আকারে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে। আমরা এই ভাইরাস মোকাবিলা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই পরিস্থিতি থেকে যখন মানুষ মুক্তি পাবে, তখন আবার যথারীতি নিয়মিত ক্লাস হবে এবং আমাদের শিক্ষার্থীরা সবাই ক্লাসে যেতে পারবে। যারা প্রমোশন পাচ্ছে, তারা আগামী দিনে পড়ালেখা করবে এবং পরবর্তী পরীক্ষার ফলের ওপর তাদের ভাগ্য নির্ভর করছে।

চলমান পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা না নিয়ে সবাইকে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা ও এসএসসি-জেএসসির ফলের ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়নের মাধ্যমে এইচএসসি’র ফল ঘোষণা নিয়ে অনেকে সমালোচনা করছেন।

তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকেই অনেক কথা বলছেন। আমার মনে হয়, খুব বেশি কথা বা এটা নিয়ে বেশি তিক্ততা তৈরি করা উচিত না। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে— আমাদের ছোট শিশুরা, ছেলেমেয়েরা, তাদের জীবনের দিকে তাকাতে হবে। তারা যেন কোনোভাবেই হতাশাগ্রস্ত না হয়ে পড়ে, সেদিকে নজর দিতে হবে। এমনিতেই ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। এটি তাদের জীবনে একটি বড় বাধা তৈরি করছে। সে ক্ষেত্রে যদি আবার এই ফল নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা হয়, বা ফল দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা হয়— এগুলো তাদের জন্য তাদের মানসিক চাপ হয়ে দাঁড়াবে।

‘তাই যারা এ ধরনের কথা বলছেন, তাদের বিরত থাকার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি। আর করোনাকালে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম যেন অব্যাহত থাকে, তার জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে ও নিচ্ছে,’— বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা যেটুকু শিক্ষা পেয়েছে, শিক্ষার যে ফলটা বা শিখন ফল— পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের জন্য তারা নিজেদের তৈরি করতে পারবে। তারা এভাবে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমটা চালিয়ে রাখতে পারে। তার ফলে তাদের ভবিষ্যতের শিক্ষাটা চালু থাকবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকবে— এ প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণের ফলে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, শিক্ষকরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, অন্যান্য কর্মচারীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখে, অর্থ্যাৎ তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই এই ব্যবস্থাগুলো নিতে আমরা বাধ্য হয়েছি।

তিনি বলেন, অনেকেই সেন্টিমেন্টাল হচ্ছেন, অনেকে অনেক কথা বলছেন— ক্লাস করবেন, পরীক্ষা দেবেন। কিন্তু এগুলো করতে গিয়ে কেউ যদি সংক্রামিত হয়, তার দায়-দায়িত্ব কে নেবে? যারা এই পদ্ধতিতে রেজাল্ট দেওয়ার সমালোচনা করছেন, তারা নেবেন দায়িত্ব? নিশ্চয়ই তারা নেবেন না। তখন তারা নতুনভাবে আবার সমালোচনা শুরু করবেন। এটাই আমাদের সবচেয়ে দুভার্গ্য যে কিছু লোক থাকেই, কিছু একটা করতে গেলেই তাদের কাজ খুঁত বের করা। কিন্তু ফলাফলটা কী হবে, সেটা তারা চিন্তাও করে না।

বিভিন্ন শ্রেণিতে মূল্যায়ন পদ্ধতি চালুর বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাচ্ছি যে আমাদের বার্ষিক পরীক্ষাটা হোক। সারাবছর পরে একবার পরীক্ষা হয়। কিন্তু এই পরীক্ষার পরিবর্তে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে পারমিটিভ অ্যাসাইনমেন্টের প্রচলন করা হয়েছে, যা বাংলাদেশে একটা নতুন ধরনের পদ্ধতি। তাতে একটি শিক্ষার্থীর যে মেধা, সেই মেধার একটা মূল্যায়ন করার ভালো সুযোগ হয়। কাজেই সেটা আমি মনে করি অন্তত বিজ্ঞানসম্মত, এটা খুব খারাপ কিছু না।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা ভাল থাকুক, আমরা সেটা চাই। আর তাছাড়া এখন আধুনিক প্রযুক্তি বের হয়েছে। সেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা আমাদের জীবনমান উন্নত করব। সেটাই আমরা চাচ্ছি।

করোনা পরিস্থিতিতে গণভবন থেকে বের হতে না পারাকে বন্দি দশা বলে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে ঘরে বসে থেকেও সব ধরনের অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত হযে কথা বলতে পারছেন— এ নিয়ে সন্তোষ জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসে সারাবিশ্ব স্থবির। আমার কাছে অনেকটা মনে হচ্ছে যেন জেলখানায় বন্দি। সেই একটা বন্দিত্বের মধ্যে চলতে হচ্ছে। ভাগ্যিস আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছিলাম। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি বলেই অন্তত রাষ্ট্রপরিচালনা থেকে শুরু করে সব কাজগুলো আমরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে করতে পারছি। আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে আজকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ছেলেমেয়েরাও সেইভাবে তৈরি হবে। বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ। কাজেই বাংলাদেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য তারা নিজেদেরকে তৈরি করবে— সেটাই আমরা চাই।

শিক্ষার্থীরা যেন পড়ালেখা অব্যাহত রাখে, সেদিকে সবাইকে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। শিক্ষক-অভিভাবক-শিক্ষার্থী সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা আরেকটু কষ্ট করেন। ছেলেমেয়েরা যেন পড়াশোনার দিকে মনোযোগী হয়, সে ব্যাপারে আপনারা আরও মনযোগী হন। এই ফলাফলের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীদের জীবনটা যেন সুন্দর হয়, সফল হয়। সবার জন্য আমার দোয়া-আর্শীবাদ রইল।

বক্তব্য রাখার আগেই মাউস ক্লিকের মাধ্যমে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলসহ শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের পর শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরা নিজ নিজ বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষার ফল হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এই ফল গ্রহণ করেন।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা এইচএসসি’র ফল এইচএসসির ফলপ্রকাশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর