অনুমোদনহীন রিক্রুটিং এজেন্সির আড়ালে মানবপাচার, গ্রেফতার ২
১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:৪২
ঢাকা: বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণার অভিযোগে মানবপাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা অনুমোদন ছাড়াই রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যবসার খুলে বসেছিল। এর মাধ্যমে তারা ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে মানবপাচারের কাজ করতো। এভাবে ইতোমধ্যে প্রায় ৬৭ লাখ টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে তারা।
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে সিআইডি ঢাকা মেট্রো পশ্চিমের একটি টিম। গ্রেফতারের পর এসব তথ্য নিশ্চিত করে সিআইডি।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- জালিস মাহমুদ (৩২), ও অমল জয়ধর (৪১)। এ সময় তাদের কাছে থেকে, নগদ ১০ লাখ টাকা, ৭১টি পাসপোর্ট, মালয়েশিয়ার ১১টি জাল ভিসা, ফ্রান্সের তিনটি জাল ভিসা, বিএমইটি ছাড়পত্রের ভুয়া ২৪টি ফটোকপি, আটটি ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট ও ১০টি ভুয়া বিমান টিকিট জব্দ করা হয়।
দুপুরে মালিবাগে সিআইডি প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক জানান, এস এম এন্টারপ্রাইজ নামে ভুয়া রিক্রুটিং এজেন্সি পরিচালনা করে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকায় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক জালিস মাহমুদ ও ফিল্ড অফিসার অমল জয়ধরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান রিপন মাহমুদ এখনো পলাতক। তাকে ধরতে অভিযান চলছে। বর্তমানে বনানীতে প্রতিষ্ঠানটির ভাড়া করা রুম থাকলেও নেই কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী। সবাই গা ঢাকা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘রিক্রুটিং লাইসেন্স না থাকলেও ২০১৮ সাল থেকে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা করে আসছিল এস এম এন্টারপ্রাইজ নামের রিক্রুটিং এজেন্সি।’
ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে ওমর ফারুক বলেন, ‘বিদেশে লোক পাঠানোর নামে এই চক্রটি ২০১৯ সালের মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৬৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২৫ জন ভুক্তভোগী সিআইডিতে অভিযোগ দায়ের করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশ যেতে ইচ্ছুক স্বল্প শিক্ষিত লোকজনদের টার্গেট করে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে ভিসা যাচাই প্রক্রিয়া দেখাতো ভুক্তভোগীদের। তৈরি করত জাল টিকিট-ভিসা। এমনকি বিএমইটি কার্ডও জাল করতো তারা। তাদের একটি অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ টিম রয়েছে। স্বল্প সময়ে লোকজনদের প্রতারিত করতো। তবে বিএমইটি কার্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কারও যোগসূত্র রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে সিআইডি।’
ঘটনা ২০১৯ সালে হলেও ভুক্তভোগীরা কয়েকদিন আগে মামলা করেছে কেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এজেন্সিকে টাকা দিয়ে তা ফেরত নেওয়ার জন্য বারবার ওই প্রতিষ্ঠানের লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তারা। কিন্তু এজেন্সি টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বরাবরই সময় নিয়েছে। এছাড়া ভুক্তভোগীরা স্বল্পশিক্ষিত হওয়ায় আইনি প্রক্রিয়ায় কীভাবে যেতে হবে সে বিষয়ে তাদের ধারণা কম ছিল। পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকজন মানবপাচারকারী গ্রেফতারের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় সেই পরিপ্রেক্ষিতে তারা আইনগত ব্যবস্থা নেয়।’
অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, ‘বিদেশের লোক পাঠিয়ে প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। যত ক্ষমতাধর হোক, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
এদিকে ভুক্তভোগীরা জানান, ভাগ্য বদলানোর জন্য মালয়েশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য নিজেদের সম্পদ বিক্রি করেছেন তারা। ভুক্তভোগীরা বিমানবন্দরের যাওয়ার পর বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন তারা। পরে সেই এসএম এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা ফেরতের বিষয়ে কথা বলতে গেলে তারা বারবার সময় চায়। কিন্তু সময় নিয়েও শেষ পর্যন্ত টাকা ফেরত দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বিভিন্ন সময় তাদের রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে ভয়-ভীতি দেখানো হয় বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
সারাবাংলা/এসএইচ/পিটিএম