মেয়রের নামে চাঁদাবাজি, কাউন্সিলর রতন বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে
১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৯:২২
ঢাকা: মেয়রের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ওরফে ‘ম্যাজিক রতন’ কে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। অবৈধ দোকান বৈধ করে করার আশ্বাস দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তাকে এই নোটিশ দেন ডিএসসিসির বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস।
তবে নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করে শোকজ নোটিশের জবাবও দিয়েছেন রতন। কিন্তু মাস পার হয়ে গেলেও এখনও ঝুলে আছে সে জবাবের সিদ্ধান্ত।
গত ১৭ ডিসেম্বর পূর্বঘোষণা অনুযায়ী দুপুর ১২টা থেকে গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেটে নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদে অভিযান শুরু করে ডিএসসিসি। অভিযান শুরুর পর সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে দোকানের ব্যবসায়ীরা কাউন্সিলর রতনের বিরুদ্ধে বর্তমান মেয়রের নাম ভাঙিয়ে ‘কোটি কোটি টাকা, বস্তায় বস্তায় ভরে’ নেওয়ার অভিযোগ করেন।
এ সময় বাংলাদেশ ইলেক্সটিক্স অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আলিমুজ্জামান আলমসহ কয়েকজন অভিযোগ করেন, বর্তমান মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নাম করে কাউন্সিলর রতন অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ করে টাকা নিয়ে গেছেন। তারা এভাবে টাকা নেওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানান। একইভাবে আগেও সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের নামেও কাউন্সিলর রতন অবৈধ দোকান বৈধ করার কথা বলে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন তারা।
ব্যবসায়ীদের এসব অভিযোগ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইম গণমাধ্যমে প্রচার হলে বিষয়টি নজরে আসে মেয়র তাপসের। আর এ পরিপ্রেক্ষিতে এদিন সন্ধ্যায় কাউন্সিলর রতনকে নোটিশ দেওয়া হয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে।
ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে কাউন্সিলর রতনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, গুলিস্তানের পুরান বাজার হকার্স মার্কেটসহ কয়েকটি মার্কেটে বর্তমান মেয়রের নাম ব্যবহার করে দোকান বরাদ্দ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন কাউন্সিলর রতন। এমন খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী এটা অসদাচরণ। এতে ডিএসসিসির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। কাউন্সিলরের এমন কার্যকলাপের কারণে কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার জবাব দিতে বলা হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে মেয়রের কাছে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় চিঠিতে।
নোটিশ পাওয়ার প্রায় ১২ দিন পর গত ২৯ ডিসেম্বর নিজেকে নির্দোষ দাবি করে শোকজের জবাব দেন কাউন্সিলর রতন। অর্ধশত পৃষ্ঠার নোটিশের জবাবে কাউন্সিলর রতন গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারে অবৈধ দোকান বৈধ করার নামে বাণিজ্য হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তবে রতনের দাবি, এ বাণিজ্যে সে জড়িত নয়।
উল্টো তিনি অভিযোগ করেছেন, সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের অসাধু কিছু কর্মকর্তা ও সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের ‘দালাল’ হিসেবে পরিচিত কিছু অসাধু ব্যক্তি এই টাকা নিয়েছে। যদিও শোকজের জবাবপত্রে সেসব ‘দালাল’ কিংবা টাকা নেওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় উল্লেখ করেনি কাউন্সিলর রতন।
এমনকি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে মেয়রের কাছে বিনীত অনুরোধ জানিয়ে শোকজের জবাব পত্রে রতন উল্লেখ করেছেন, কারণ দর্শানো নোটিশে আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে অসদাচরণ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ পূর্বক বলতে চাই যে, আমার প্রতিপক্ষ আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার হীন চেষ্টায় যে সমস্ত মিথ্যা অভিযোগে গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছে, তা আমলে না নিয়ে বিগত দিনে আপনার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও আস্থা রেখে যে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছি দয়া করে তা বিবেচনায় নেবেন। আপনি দেশের একজন স্বনামধন্য আইনজীবী হিসেবে উপরিউক্ত বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে আমাকে এই সমস্ত কথিত মিথ্যা অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেবেন।
অভিযোগের বিষয়ে কোনো শুনানির আয়োজন করা হলে কাউন্সিলর রতন সেখানে উপস্থিত থাকতে রাজি বলে রতন তার জবাবে উল্লেখ করেন।
রতনের এমন শোকজের জবাবপত্র যেদিন করপোরেশনে পাঠানো হয় সেদিন ডিএসসিসির মেয়র শেখ তাপস দেশে ছিলেন না। তাই সেই জবাবপত্রটি ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীর কাছে জমা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জানতে চাইলে এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেয়র দেশে আসার পর শোকজের জবাবপত্রটি উনার কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শোকজের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে জানতে পারিনি। হয়ত মেয়র বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করছেন।’
তবে অর্ধশতপৃষ্ঠার জবাব পত্রে কাউন্সিলর রতন নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও ডিএসসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, তার এমন নির্দোষ দাবি করা আর চোর কখনও দোষ স্বীকার না করার সমান। এমনকি স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবরা চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘চোরে কখনও দোষ স্বীকার করে না, যে সে চুরি করেছে। তেমনি রতনও কখনও দোষ স্বীকার করবে না। চোরের বড় গলা এটাই সত্য কথা। কেন এত লোক থাকতে দোকানদাররা তার নাম বলবে? সে যদি চাঁদাবাজি না করে? সে তো সাধারণ মানুষ ছিল। এত টাকা কোথায় পেল সে?’
তিনি বলেন, ‘সমস্যা হলো রতনের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীরা মৌখিক অভিযোগ দিলেও লিখিতভাবে দিচ্ছে না। কারণ একটিই, রতনের সন্ত্রাসী কাণ্ডের ভয়। তাই কেউ লিখিত অভিযোগ সিটি করপোরেশনকে দিচ্ছে না। কিন্তু আমরা বসে থাকব না। এরইমধ্যে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলো নিয়ে দরখস্ত রেডি করেছি। খুব শিগগিরই তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাব।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে