‘মাঠে নেমে গেছি, আর বাড়ি ফিরে যাব না’
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৯:৪৫ | আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২১:৪৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরেই বর্তমান সরকারের পতন ঘটানোর ঘোষণা নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরেই তাদের বিদায় দিতে হবে। এখন তাদের মধ্যে কম্পন শুরু হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম থেকে আন্দোলনের সূচনা করতে হবে। দিনক্ষণ বলে কর্মসূচি হয় না। যে কর্মসূচির মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন ঘটবে, সেই কর্মসূচি আসবে। আমরা নেমে গেছি মাঠে, বাড়িতে আর ফিরে যাব না। এটাই কর্মসূচি।’
শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গনে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের প্রস্তাবের প্রতিবাদে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নগর বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে।
সরকারের উদ্দেশে আমীর খসরু বলেন, ‘আপনাদের কোনো ভবিষ্যত নেই। আপনারা যতই লাঠিপেটা করেন, গুম-খুন করেন, হত্যা করেন- দেশের মানুষ কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।’
‘আমি এদের সরকার বলি না। এরা সরকার নয়। কারণ গণতন্ত্রে সরকার গঠন করে রাজনৈতিক দল। কিন্তু এরা কারা? কিছু দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, কিছু দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী, কিছু দুর্নীতিবাজ লোকজন- এরা সরকার নয়, এটা একটা মাফিয়া রেজিম।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কোনো দলের পক্ষে দায়িত্ব পালন করবেন না, জনগণের পক্ষে দায়িত্ব পালন করুন। আপনারা আপনাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করুন। আপনারা সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছেন, তার বাইরে গিয়ে যদি আপনারা কাজ করতে চান, ঠিক হবে না। এসব বন্ধ করেন।’
আওয়ামী লীগের কুকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত আছেন, তাদের আগামীদিনে ‘খবর আছে’ বলেও মন্তব্য করেছেন আমীর খসরু।
আড়িপাতার যন্ত্র কেনা নিয়ে আলজাজিরার প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘সরকার বলছে, আড়িপাতার যন্ত্র আনার জন্য জাতিসংঘের সঙ্গে তাদের চুক্তি আছে। কিন্তু জাতিসংঘ বলছে, তাদের সঙ্গে আমাদের এরকম কোনো চুক্তি নাই। জাতিসংঘ বিবৃতি দিয়ে সরকারের মুখে লাথি মেরে দিয়েছে। লজ্জা নাই তাদের। জাতিসংঘ বলছে, তোমরা মিথ্যাচার করছ। আলজাজিরায় যে প্রতিবেদন এসেছে, আমরা জবাব চাই, বিশ্ববাসী জবাব চায়। খুন, গুম, হত্যার নায়ক কারা, আজ সব স্পষ্ট হয়ে গেছে- এগুলোর সঙ্গে সরকার জড়িত। দেশ আজ দুর্নীতির চরম শিখরে পৌঁছেছে। আওয়ামী লীগের কিছু মানুষ রাষ্ট্রের সব সম্পদ কুক্ষিগত করে রেখেছে। সমস্ত জাতি আজ শঙ্কিত।’
সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানকে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামী নেতাজী সুভাস বসুর সঙ্গে তুলনা করে আমীর খসরু বলেন, ‘ইতিহাসে দু’জন বাঙালি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। একজন হচ্ছেন নেতাজী সুভাস বসু। তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। আরেকজন হচ্ছেন জিয়াউর রহমান। আর কোনো বাঙালি যুদ্ধের ঘোষণা দেয়নি। সমস্ত বাঙালিকে যুদ্ধক্ষেত্রে আর কোনো বাঙালি ডেকে আনেননি। কই, ভারতীয়রা তো নেতাজী সুভাস বসুকে অসম্মান করেনি। তার নামে বিমানবন্দর আছে।’
‘জিয়াউর রহমান প্রথম সেক্টর কমান্ডার, প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণাকারী, যুদ্ধক্ষেত্রের বীর সাহসী কমান্ডার। বীরউত্তম খেতাব দেওয়ায় জিয়াউর রহমান গৌরবান্বিত হননি, বরং বীরউত্তম খেতাব গৌরাবান্বিত হয়েছে। এই খেতাবে জিয়াউর রহমানের জন্য কোনো কিছু আসে-যায় না’- বলেন আমীর খসরু।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ‘আলজাজিরার প্রতিবেদনে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। সেজন্য তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের খেতাব নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে। একইভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় দুই বছরের সাজাও দিয়েছে। মাঠ আর বক্তব্য নয়, এবার রাজপথে হবে চূড়ান্ত ফয়সালা।’
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে নগর বিএনপি’র আহবায়ক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ইভিএম এমন এক ডিজিটাল মেশিন, যেখানে আপনারা ধানের শীষে ভোট দিয়েছেন, কিন্তু সেটা চলে গেছে নৌকায়। আওয়ামী লীগও এমন একটা যন্ত্র যেখানে গেলে রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা হয়, মুক্তিযোদ্ধা রাজাকার হয়।’
জিয়াউর রহমানের বীরউত্তম খেতাব বাতিলের প্রস্তাবকারী সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আমি জানতে চাই, আপনি কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন?’
ভোট ডাকাত, দুর্নীতিবাজ ও টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান গত মাসে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজিত মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন।
নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এনামুল হক।
সমাবেশের শেষপর্যায়ে নাসিমন ভবনের মাঠে যুবদলের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা হাতাহাতি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হয়। তবে বিএনপি নেতাদের হস্তক্ষেপে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই