এসএমএস ছাড়াও ভ্যাকসিন দিচ্ছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল!
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২৩:২৪
ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন নিতে এরই মধ্যে নিবন্ধন করেছেন ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। ‘সুরক্ষা’ প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধন ছাড়া কাউকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না বলে নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। এ ক্ষেত্রে শুরুতে স্পট রেজিস্ট্রেশনের সুবিধা থাকলেও পরে বলা হয়, রেজিস্ট্রেশন করে তবেই ভ্যাকসিন নিতে যেতে হবে। আরও জানানো হয়, ভ্যাকসিন নেওয়ার নিবন্ধন করার পর নিবন্ধিত ব্যক্তির মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে যে তারিখ দেওয়া হবে, সেই তারিখ অনুযায়ীই নিতে হবে ভ্যাকসিন। রাজধানীর অধিকাংশ কেন্দ্রে এই নিয়ম মানতে দেখা গেলেও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, এসএমএস না পাওয়া অনেককেই দেওয়া হচ্ছে ভ্যাকসিন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বিষয়টি স্বীকার করে জানিয়েছে, নিবন্ধনের পর ভ্যাকসিন কার্ড নিয়ে গেলেই তারা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, পরিবর্তিত নিয়মের কারণে এসএমএস না পাওয়া কেউ ভ্যাকসিন নিতে গেলেও তাকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি কোনো কেন্দ্রে এসএমএস না পাওয়া কাউকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৫ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, এই কেন্দ্রে ভ্যাকসিন নিতে এসেছে ২৬ বছর বয়সী জামিল ইসলাম (ছদ্মনাম)। ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য তিনি নিবন্ধন করেছিলেন ৯ ফেব্রুয়ারি। কোনো এসএমএস না পেলেও তিনি এদিন সরাসরি উপস্থিত হয়ে ভ্যাকসিন নেন।
জানতে চাইলে সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে জামিল বলেন, আমার একজন পরিচিত আছেন এখানে। তিনি আমাকে বলেছেন, শুধু নিবন্ধন করা থাকলেই চলে। এসএমএসের প্রয়োজন নেই। সে কারণেই ভ্যাকসিন নিতে এসেছি।
দেশে বর্তমানে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে ৪০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিক ও কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত সম্মুখযোদ্ধাদের। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যসেবাকর্মীসহ কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ভূমিকা রাখা ব্যক্তিরা এক্ষেত্রে প্রাধান্য পাচ্ছেন। ২৬ বছর বয়স্ক জামিল ইসলাম কোন ক্যাটাগরিতে কিভাবে নিবন্ধন করেছেন, জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
একই সময়ে ভ্যাকসিন নিতে দেখা যায় সাজ্জাদ ইসলাম নামের একজনকে। তার বয়স ৪১ বছর। সে হিসাবে তিনি নিয়ম মতোই নিবন্ধন করেছেন। তবেও তিনিও জানালেন, এসএমএস না পেলেও রেজিস্ট্রেশনের কাগজ দেখানোর পরেই ভ্যাকসিন দিয়েছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভ্যাকসিন প্রয়োগের ক্ষেত্রে এসএমএস দেখার কোনো বালাই না থাকলেও একই দিন রাজধানীর অন্যান্য ভ্যাকসিন প্রয়োগ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, ভ্যাকসিন নিতে আসা প্রত্যেকের ভ্যাকসিন কার্ডের পাশাপাশি এসএমএস-ও যাচাই করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, একই দিনে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, নিবন্ধন করলেও ভ্যাকসিন নেওয়ার তারিখ দেওয়া এসএমএস না থাকার কারণে একাধিক ব্যক্তিকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি। এসএমএস পাওয়ার পর তাদের ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য আসতে বলা হয়।
শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা একজন স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্পট রেজিস্ট্রেশন করে ভ্যাকসিন দেওয়ার সুযোগ ছিল। এরপর থেকে আর কাউকে এসএমএসের মাধ্যমে তারিখ না জানানো হলে পারতপক্ষে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে না। ওই স্বেচ্ছাসেবক আরও জানান, কেউ যদি এসএমএসে উল্লেখ করা তারিখে ভ্যাকসিন নিতে যেতে না পারেন, পরবর্তী কোনো একটি তারিখে গেলেও তাকে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রেও তার এসএমএস যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
রাজধানীর আরেক ভ্যাকসিন প্রয়োগ কেন্দ্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। ১৫ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই প্রতিষ্ঠানেও ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে এসএমএস আছে কি না, তা যাচাই করে নেওয়া হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিনি সারাবাংলাকে বলেন, যারা এসএমএস নিয়ে আসছেন, তাদের আমরা ভ্যাকসিন দিচ্ছি। প্রতিদিন আমাদের এখানে যারাই আসছেন, তাদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। স্পট রেজিস্ট্রেশনের কারণে শুরুর দিকে এসএমএস তেমনভাবে দেখা না হলেও বর্তমানে এটিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
এসএমএস না থাকলেও ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। তারা বলছে, ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য শুধু নিবন্ধন করা কপি নিয়ে গেলেই তারা প্রয়োগ করছে।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ শাহাদাত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য যারা সুরক্ষা প্লাটফর্মে নিবন্ধন করেছেন, তাদের একটি ভ্যাকসিন কার্ড দেওয়া হচ্ছে। সেই কার্ডটি নিয়ে এলেই আমরা ভ্যাকসিন দিচ্ছি। এক্ষেত্রে এসএমএস না এলেও কেবল সেই ভ্যাকসিন কার্ড ও এনআইডি থাকলেই ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।
এসএমএসের মাধ্যমে তারিখ না জানালে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা না— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপাধ্যক্ষ বলেন, আমরাও বিষয়টি শুনেছি, অন্য কেন্দ্রগুলোতে এমনটি করা হচ্ছে। এভাবে করতে পারলে আমাদেরও সুবিধা হতো। শুরু থেকে অনেককে স্পট রেজিস্ট্রেশন করাতে গিয়ে আমাদের কিছু সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছিল। পরে স্পট রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করা হলেও এসএমএস ছাড়া ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে না— এমন নির্দেশনা আসলে পাইনি।
তিনি বলেন, এখনো যারা এসএমএস ছাড়া আসছে, তাদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও একটি সমস্যার মুখোমুখি আমরা হচ্ছি। কারণ যারা এসএমএস ছাড়া আসছেন, তাদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হলেও অনেকেরই ডাটা এন্ট্রি আমরা রাখতে পারছি না। সেগুলো ধীরে ধীরে করা হচ্ছে। এসএমএস না পেলে কাউকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে না— এ বিষয়টি নির্দেশনা আকারে বলা হলে আমরা অবশ্যই সেভাবে কাজ করব। যদি অন্য কেন্দ্রগুলোতে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, তাহলে আমরাও সেটি অনুসরণ করব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, প্রথম দিকে স্পট রেজিস্ট্রেশন থাকলেও সেটি এখন বন্ধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যারা নিবন্ধন করছেন, তাদের এসএমএস পাঠানো হচ্ছে। এসএমএস ছাড়া আসলে কাউকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই।
এসএমএসের মাধ্যমে ভ্যাকসিন প্রয়োগের তারিখ জানানো না হলে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে না— এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ডা. নাজমুল বলেন, কিছু ক্ষেত্রে নিয়মের শিথিলতা আছে। তবে সেটি সব সময়ের জন্য নয়। দেখা গেল, কোনো কেন্দ্রে একজন প্রবীণ ব্যক্তি ভ্যাকসিন নিতে এসেছেন যার ভ্যাকসিন নেওয়ার তারিখ আগের দিন ছিল। তাকে কেন্দ্র থেকে না ফিরিয়ে দিয়ে আমরা ভ্যাকসিন দিয়ে দেবো। এসএমএস না থাকলেও ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়টি হওয়ার কথা নয়। তাছাড়া সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ২৬ বছর বয়সী একজনের ভ্যাকসিন নেওয়ার যে ঘটনাটি জানা গেছে, সেটি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া হবে। ভ্যাকসিন প্রয়োগ একটি দীর্ঘ কার্যক্রম। এখানে সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করতে হবে। আমরা সেটিই করে যাচ্ছি।
নিবন্ধন করেও দীর্ঘ সময় এসএমএস না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে অনেকের। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই কর্মকর্তা বলেন, যারাই নিবন্ধন করছেন, তারা সবাই এসএমএস পাবেন। সেটি নিয়ে কেন্দ্রে গেলেই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। আমরা এরই মধ্যে এক দিনে দুই লাখের বেশি ব্যক্তিকে ভ্যাকসিন দেওয়ার নজির গড়েছি। ২০ লাখেরও বেশি নিবন্ধন হয়ে গেছে। যারা এসএমএস পাননি, তারাও খুব দ্রুতই এসএমএস পেয়ে যাবেন বলে আশা করছি।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর
এসএমএস করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিবন্ধন ভ্যাকসিন প্রয়োগ সুরক্ষা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল