অভিবাসী নারীর ৭৫% থাকেন সৌদি আরবে
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২২:০২
ঢাকা: পুরুষদের অভিবাসন ব্যয় বাড়লেও কমছে নারীদের। একসময় নারীদের বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা খুব কম থাকলেও ২০০৪ সাল থেকে তা বাড়ছে। ২০১৫ সালে সৌদি আরবের শূন্য অভিবাসন ব্যয়ে বিদেশে যাওয়ার সুযোগের পর থেকে এতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে মোট অভিবাসী নারীর ৭৫ শতাংশই থাকেন সৌদি আরবে। আর পুরুষদের অভিবাসন ব্যয় বাড়লেও নারীদের ক্ষেত্রে ব্যয় কমছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) নারী অভিবাসন বিষয়ক এক ওয়েবিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা। ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরম (ইআরএফ), গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিচার্স অ্যান্ড ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) ও দৃষ্টি রিচার্স সেন্টার (ডিআরসি) যৌথভাবে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
‘বাংলাদেশের অভিবাসন ও লিঙ্গ: একটি অনিয়মিত প্রকৃত দৃশ্যপট’ শীর্ষক ওয়েবিনারে পাঁচটি জেলার ওপর পরিচালিত জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, একটি নির্যাতনের ঘটনাও আমরা টলারেট করি না। তবে যারা বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের অধিকাংশেরই নির্যাতনের শিকার হওয়ার তথ্যটি সঠিক না। গত ১০ বছরে অন্তত ৭ থেকে ৮ লাখ নারী শ্রমিক বিদেশে গেছেন। তাদের কত জন নির্যাতিত হয়েছেন? সুতরাং যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের বিষয়টি হাইলাইট করলে নারী অভিবাসন বাড়ানো যাবে না।
র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, নব্বইয়ের দশকে ৩৫ বিলিয়নের অর্থনীতির বাংলাদেশ এখন ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশ হয়েছে। দেশের অর্থনীতির আকার যত দ্রুত বেড়েছে, সেভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়নি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো বৈশ্বিক চিত্রও এরকম। এখন দেশ থেকে দক্ষ ও শ্রমিক র ফতানির ওপর জোর দিতে হবে। আমাদের জিডিপিতে ১৩ শতাংশের কম অবদান এখন কৃষির। অথচ কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশের বেশি এ খাতে। এটা ভালো না। প্রতিবছর দেশে ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান দরকার হলেও তা হচ্ছে না।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত মাঠ পর্যায় থেকে বরগুনা, পটুয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মানিকগঞ্জ জেলার একটি করে ইউনিয়নের মোট ১২৫টি গ্রামের ৬ হাজার ৮৪৮ খানার ৮ হাজার ৪৩৭ জনের ওপর জরিপ করা হয়। জরিপ এলাকায় নারী অভিবাসী ছিলেন এক হাজার ৩২৭ জন, পুরুষ ৭ হাজার ১১০ জন। নারী অভিবাসীর হার ১৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। দেশের মোট জনশক্তির ৩৭ দশমিক ১০ শতাংশ থাকেন সৌদি আরবে। আর মোট নারী অভিবাসীর ৭৫ শতাংশ থাকেন দেশটিতে।
জরিপে উঠে এসেছে, পুরুষদের অভিবাসন ব্যয় বাড়লেও নারীদের কমছে। অভিবাসীদের ১৪ শতাংশের মতো নারী বিনা খরচে বাইরে গেছেন। পুরুষদের বেলায় অনেক বেশি খরচ করতে হয়েছে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় হয়েছে মানব পাচারসহ নানা অভিযোগে বাংলাদেশি সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল আটকের ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত কুয়েতে। প্রকৃত খরচের তুলনায় দেশটিতে ৪২১ শতাংশ বেশি ব্যয় হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাহরাইনে যেতে প্রকৃত খরচের চেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে ৩৮৭ শতাংশ। এরপর কাতারে ৩৭২ শতাংশ, ওমানে ৩২৩ শতাংশ, লেবাননে ৩১২ শতাংশ, জর্ডানে ৩০৮ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৯১ শতাংশ ও সৌদি আরবে ২৮৭ শতাংশ বেশি খরচ হয়েছে।
জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে মোট ৪৪টি দেশে শ্রমিক যান। এর মধ্যে ২২টি দেশে নারীরা যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন এসেছে ২০০৪ সাল থেকে। এরপর ২০১৫ সালে সৌদি সরকারের সঙ্গে এক চুক্তির পর ২০১৭ সালে এর পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আর পুরুষদের অভিবাসন ব্যয় বাড়লেও নারীদের ক্ষেত্রে ধীরে-ধীরে কমেছে। যেসব নারীরা বিদেশে গেছেন, তাদের মধ্যে ৫৫ দশমিক ৮০ শতাংশ আগে গৃহকর্মী ছিলেন, ১৬ শতাংশ ছিলেন তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক।
জরিপে আরও বলা হয়, কয়েকটি জেলার মধ্যে নারী-পুরুষের অনুপাতে সবচেয়ে বেশি নারী বিদেশে আছেন বরগুনা জেলা থেকে। আর সবচেয়ে কম গেছেন বাহ্মণবাড়িয়ার নারীরা। বরগুনা জেলার ২৫১ জন অভিবাসীর মধ্যে নারী ছিলেন ৬৯ জন (২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ)। দ্বিতীয় স্থানে থাকা নারায়ণগঞ্জ জেলার এক হাজার ৯৪ অভিবাসীর মধ্যে ২৬ দশমিক ৪০ শতাংশ ছিলেন নারী। এছাড়া পটুয়াখালীর ৬২৯ অভিবাসীর মধ্যে ২১ দশমিক ১০ শতাংশ, মানিকগঞ্জের তিন হাজার ৯১৭ অভিবাসীর মধ্যে ১৮ শতাংশ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২ হাজার ৫৪৬ অভিবাসীর মধ্যে ৫ দশমিক ১০ শতাংশ নারী বিদেশে গেছেন।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর
অভিবাসন ইআরএফ ডিআরসি নারী অভিবাসী শ্রমিক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী র্যাপিড