কয়লার অভাবে বড়পুকুরিয়ার ২ ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:৩৯
ঢাকা: চলতি সেচ মৌসুম এবং আসছে গ্রীষ্ম ও রমজানকে সামনে রেখে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় বিশেষ শিডিউল তৈরি করেছে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়লা স্বল্পতার কারণে তিনটি ইউনিটের একটির আংশিক চালু রেখে বাকি দুই ইউনিট আগের মতো অলস বসে থাকছে।
সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ওই ইউনিট চালু রাখার জন্য ৩৫৪ দিনের একটি বিশেষ শিডিউল তৈরি করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে চলতি সেচ মৌসুম আর আসছে গ্রীষ্ম ও রমজানের সময় ১০৯ দিনের জন্য খানিকটা বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। বাকি ২৪৫ দিন উৎপাদন কমিয়ে আনা হবে। গত ১২ জানুয়ারি থেকে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ১০৯ দিন বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র সর্বোচ্চ ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করবে। এ জন্য প্রতিদিন ১ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন করে কয়লা সরবরাহ করা হচ্ছে।
এই সময়ে মোট ২ লাখ ১২ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হবে। আর এখন কোল ইয়ার্ডে ১ লাখ ২২ হাজার ৫৩৪ মেট্রিকটন মজুত রয়েছে। আর ১ মে থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১৬০ থেকে ১৮০ মেগাওয়াট লোডে কেন্দ্র পরিচালিত হবে। তখন কয়লার প্রয়োজন হবে ১৮০০ মেট্রিক টন। এরপর ১ নভেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্র চলবে ১৫০ থেকে ১৭০ মেগাওয়াট লেডি। তখন কয়লার প্রয়োজন হবে দৈনিক ১৬০০ মেট্রিক টন।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ- পিজিসিবি কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলে চাহিদার তুলনায় কম উৎপাদন হওয়ায় বিদ্যুতের যোগান অন্য এলাকা থেকে সরবরাহ করতে হয়। একাজ করতে গিয়ে রংপুর এবং রাজশাহী অঞ্চলে লো ভোল্টেজ দেখা দেয়। এ কারণে ওই অঞ্চলের জন্য একক বিদ্যুৎকেন্দ্র হলেও বড়পুকুরিয়া কেন্দ্রটিকে সচল রাখা জরুরি হয়ে পড়ে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিডিবির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আমদানি করা কয়লা দিয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল রাখা কঠিন। কয়লা পরিবহন করা সবচেয়ে বড় সমস্যা। জলপথে বহন করার মতো বড়পুকুরিয়া পর্যন্ত নদীগুলোতে নাব্যতা কমে গেছে। রেলপথ নেই। তাছাড়া দেশের রেল ওয়াগনে কয়লা পরিবহন করার নজিরও নেই। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল রাখতে হলে এই অঞ্চলেই কয়লার জোগান থাকতে হবে। না হলে ভবিষ্যতেও বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অলসই বসিয়ে রাখতে হবে।
জানা গেছে, ২০০৬ সালে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়ায় ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এই তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। এরমধ্যে ১২৫ মেগাওয়াট করে মোট ২৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার দুটি কেন্দ্র প্রথমে নির্মাণ করা হয়। এরপর ২৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার তৃতীয় ইউনিট নির্মাণ করা হয়।
এই তিন ইউনিটের মধ্যে প্রথম দুটি ইউনিট সারা বছরই বন্ধ থাকে। তৃতীয় ইউনিটও সারা বছর গড়ে অর্ধেক বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে না।
এখানে কয়লা সংকট দেখা দিতে পারে সে আশঙ্কা থেকে তৃতীয় ইউনিট নির্মাণ না করার জন্য পিডিবিকে পরামর্শ দিয়েছিলো পেট্রোবাংলা।
প্রতিষ্ঠানটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, এখানে যে কয়লার সংকট ভবিষ্যতে হতে পারে সে চিন্তা করেই পিডিবিকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পিডিবি তারপরেও তৃতীয় ইউনিট নির্মাণ করেছে। যার ফলাফল এখন সারাবছরেই দুই ইউনিট বসেই থাকছে।
এ প্রসঙ্গে পিডিবির চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
সারাবাংলা/জেআর/একে