শারীরিক উপস্থিতিতে কোর্ট চালুর উদ্যোগ নেব: আব্দুল আলীম
৭ মার্চ ২০২১ ২১:৪৫
ঢাকা: বার নির্বাচনে বিজয়ী হলে প্রথমেই শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারিক কার্যক্রম চালু এবং আইনজীবীদের বসার জন্য নতুন ভবন নির্মাণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) ২০২১-২২ সালের নির্বাচনে সম্পাদক প্রার্থী আব্দুল আলীম মিয়া জুয়েল।
সারাবাংলা.নেটের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘লিগ্যাল চেম্বারস’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মো. আব্দুল আলীম মিয়া জুয়েল এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন। গত বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) রাতে প্রচারিত এ অনুষ্ঠানটি পরিকল্পনা ও সঞ্চালনা করেন আইনজীবী ইফফাত গিয়াস আরেফিন।
সারাবাংলার ‘লিগ্যাল চেম্বারস’ অনুষ্ঠানে চার জন প্রার্থী অংশ নিয়ে তাদের মতামত ও প্রতিশ্রতির কথা তুলে ধরেন।
আগামী ১০ ও ১১ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ১৪টি পদে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
১৯৯০ সাল থেকে নিয়মিতভাবে আইন পেশায় কাজ করছি উল্লেখ করে সম্পাদক প্রার্থী আব্দুল আলীম মিয়া জুয়েল বলেন, ‘আমি আইনজীবীদের সমস্যা সম্পর্কে অবগত রয়েছি। এর মধ্যে প্রথম সমস্যা হলো- মহামারি করোনার কারণে অধিকাংশ কোর্ট বন্ধ ছিল। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের অধিকাংশ কোর্ট ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে চালু থাকা কোর্টের সংখ্যা অত্যন্ত কম। এই মহামারিতে আইনজীবীরা অর্থনৈতিকভাবে মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষতি থেকে উত্তরণে পথ আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সমস্ত অনুষ্ঠান শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টেও বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে। এখন খুব শিগগিরই কোর্টকে শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে পরিচালনার জন্য কোর্ট খুলে দেওয়া প্রয়োজন। কারণ অনেক আইনজীবী বন্ধু আর্থিক কষ্টে আছেন। এটা বর্তমানে বড় সমস্যা। সেটার জন্য বার থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’
আইনজীবীদের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে ইনশাল্লাহ, প্রধান বিচাপতির সঙ্গে আলোচনা করে পূর্ণাঙ্গভাবে সশরীরে অর্থাৎ শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে কোর্ট চালু জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। দ্বিতীয় বিষয় হলো আইনজীবীদের উন্নয়ন। এটাকে আমি দুটো ভাগে ভাগ করতে চাই। এর একটা হলো- অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও আইনজীবীদের পেশাগত মান উন্নয়ন।’
‘অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়ে আমি বলতে চাই- গত ২০১৯-২০ সালের সুপ্রিম কোর্ট বারের কার্যকরি কমিটির সভাপতি ছিলেন বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। উনার একক প্রচেষ্টায় উনি বারের সাবেক সম্পাদক, বর্তমান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ১৭ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে নিয়েছেন। তবে সেটা দিয়ে আমাদের বারের নির্মাণ কাজ চলছে। আমি ইতোমধ্যে কথা বলেছি, আমাকে যদি নির্বাচিত করা হয়, আমি যদি নির্বাচিত হই তাহলে আমি সরকারের আর্থিক সহায়তা—আমাদের আবাসন সমস্যা, আমাদের বসার জায়না নেই। আমাদের জুনিয়র বন্ধুদের বসার কোনো স্কোপ নেই। আজকে একটি কিউরিকাস নিতে হলে একজন বন্ধুকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে। অথচ আমাদের পুরনো ভবন সরকারি অনুদানে তৈরি। নতুন অ্যানেক্স বার ভবন সরকারি অনুদানে তৈরি। সেখানে আমরা যারা কিউরিকাস পেয়েছি আমাদের কোনো অর্থ দিতে হয়নি। তরুণ আইনজীবী যারা তারা টাকা পাবে কোথায়? ওদের আমরা কেন বার্ডেন দিচ্ছি। কাজেই সরকারি অর্থায়ন ছাড়া বড় বহুতল ভবন নির্মাণ করা সম্ভব না। আমি যদি নির্বাচিত হই। তাহলে বহুতল একটি ভবন নির্মাণ করব। সবার সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে। যাতে করে আমাদের সকল আইনজীবী বন্ধুদের স্থানের সংকুলান হয়। জুনিয়র বন্ধুদের বর্ধিত টাকা যেন না দিতে হয়। এই হলো অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়ে আমার কথা—বলেন আব্দুল আলীম মিয়া জুয়েল।
পেশাগত মান উন্নয়নে কাজ করবেন জানিয়ে আব্দুল আলীম মিয়া জুয়েল বলেন, ‘এই কোভিড-১৯-এর কারণে অনেক সিনিয়র আইনজীবী কোর্টে আসছেন না। তারা আসতে পারছেন না। আমি যখন জুনিয়র ছিলাম তখন সিনিয়রদের অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। এই পেশাটা হলো গুরুমুখী বিদ্যা। এটা হাতে-কলমে ট্রেনিংয়ের বিষয়। সেখান থেকে আমাদের বন্ধুরা বঞ্চিত হচ্ছে। আগে একটা কোর্স ছিল। সেই কোর্সের ভেতর আমাদের বারের সবচেয়ে জানাশোনা আইনজীবী যারা আছেন, তাদেরকে নিয়ে ক্লাস নেওয়া হতো। সেখানে তাদের বাস্তব জ্ঞান দেওয়া হতো। সেখানে কীভাবে একটা ড্রাফট তৈরি করতে হবে। কিভাবে মুভ করতে হবে। আমাদের একটা কার্টেসি রয়েছে, ঐতিহ্য রয়েছে। ম্যানার, কন্ডাক্ট ইস্যু সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়া হতো। দীর্ঘদিন ধরে সেটা দেওয়া হচ্ছে না। সেটা আমাদের নিতে হবে।’
তরুণ আইনজীবীদের সহযোগিতা ও পেশার মান উন্নয়নে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একদিন আমি থাকবো না। আমার পূর্বসূরি যারা ছিলেন আজকে তারাও নাই। এই কোর্টে তারা যে জ্ঞান অর্জন করেছেন, তারা এখানে যে অবদান রেখেছেন। তারা যে আইনি জ্ঞান অর্জন করেছেন সেটা আমাদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে রিলে-রেসের মতো। সেই বিজ্ঞ সিনিয়রদের ধারাবাহিকতায় সেই বিষয়ে তাদের দীক্ষিত করে তোলা।’
বারের বর্তমান সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তার সহযোগিতায় অত্যন্ত আধুনিক উন্নত মানের একটা লাইব্রেরি হয়েছে। সেই লাইব্রেরিতে তরুণদের পাঠের সুযোগ করে দিতে হবে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পাঠের সুযোগ জুনিয়র বন্ধুরা যেন পেতে পারে। আমি নির্বাচিত হলে আইনজীবীরা যাতে অনলাইনে এগুলো পায়, সে ব্যবস্থা করে দেব। যেন বাসায় বসে তারা জ্ঞান চর্চা করতে পারে সে ব্যবস্থা করে দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট হচ্ছে সংবিধানে অবিভাবক আর সুপ্রিম কোর্ট বার হচ্ছে জাতির বিবেক। অতীতে জাতির মধ্যে যত সমস্যা আর্বিভূত হয়েছে। সেটার সমাধানে নেতৃত্ব দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন। আমাদের সেই গৌরবোজ্জ্বল অতীত থেকে আমরা বোধহয় দূরে সরে যাচ্ছি। আমাদের সেই ঐতিহ্যকে আমি ধারণ করতে চাই। আমাদের সেই ঐতিহ্যকে ধারণ করে একটি আধুনিক এবং গৌরবোজ্জ্বল বারের ঐতিহ্যকে সমন্বিত করে রাখতে চাই। এবং বারকে শক্তিশালী করতে চাই। বার ও বেঞ্চের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে আইনজীবীদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেন হয়রানির শিকার না হতে হয় সে ব্যবস্থা করতে চাই। বিশেষ করে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে সেকশনের দৌরাত্ম, বেঞ্চ অফিসারের দৌরাত্ম, এই দুর্ভোগ আমি লাঘব করতে চাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আইনজীবী বন্ধুগণ আগামী ১০ ও ১১ মার্চ নির্বাচনে আমাকে ভোট দেবে, আমাকে নির্বাচিত করবে। আমাদের সভাপতি প্রার্থী আবদুল মতিন খসরুসহ আমাদের সাদা প্যানেলের সবাইকে নির্বাচিত করবে এই প্রত্যাশা আমি রাখছি।’
সহসম্পাদক পদ প্রার্থী এ বি এম নূরে আলম (উজ্জ্বল) বলেন, ‘আমি এর আগে ২০১৭ সালে সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছিলাম। তখন আমি বারের লাইব্রেরির উন্নয়নে কাজ করেছিলাম। হল রুমের উন্নয়নেও আমি ভূমিকা রেখেছি। আমি সারা বছরই আইনজীবীদের খোঁজ খবর রেখেছি, একই সঙ্গে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেছি। আমি একজন নিয়মিত প্র্যাকটিশনার হিসেবে সকালে কোর্টে এসে রাতে বাসায় যাই। আইন পেশাই আমার একমাত্র পেশা। আমি যদি নির্বাচিত হতে পারি, তাহলে শুধু লাইব্রেরি উন্নয়ন বা হল রুমের উন্নয়ন নয়; সার্বিক বিষয়ে আমি সব ক্ষেত্রে সাহায্য করার চেষ্টা করব।’
সদস্য পদপ্রার্থী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি আইনজীবী পরিবারের সন্তান। আমার পিতা একজন আইনজীবী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি একজন বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি ২০০৯ সাল থেকে আইন পেশায় রয়েছি। আমি একজন নিয়মিত প্র্যাকটিশনার। আমি বাবার কারণে অনেক সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কাজের সুযোগ পেয়েছি। আমি নির্বাচিত হলে আমি অবশ্যই বারের সমস্যাগুলো সবার সামনে নিয়ে আসব। এবং আইনজীবীদের কল্যাণে সবার সঙ্গে কাজ করব।’
সদস্য পদপ্রার্থী মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি মনে করি বারের একজন কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হওয়ার জন্য নিজেকে যোগ্য মনে করি। আমি ২০১০ সাল থেকে সুপ্রিম কোর্টে কাজ করে আসছি। আমি বারের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তগুলো টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে দক্ষতার বাস্তবায়ন করতে পারবো। বার কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সদস্যরা সবচেয়ে বেশি কাজ করে থাকে। সে ক্ষেত্রে আমি নিজেকে টিমের সদস্য হিসেবে ভালো কাজ করতে পারবো। এ জন্য আমি নিজেকে একজন টিম প্লেয়ারও মনে করি। সে ক্ষেত্রে আমি সবাইকে সহযোগিতা করতে পারবো। আরেকটি বিষয় হলো- আমি নিজেকে একজন অগ্রসরমুখী মানুষ হিসেবে মনে করি। আমি নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। সামনে আমাদের আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স আসছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ল’ ফার্মগুলি, কোর্টগুলি শত শত অ্যাপস ও সফটওয়ার ব্যবহার করছে। সেসব বিষয়েও আমাদের এগুতে হবে। আমাদের আরও বেশি টেকনোলজি ওরিয়েনটেড হতে হবে। কভিড-১৯ আমাদেরকে টেকনোলজিতে অনেক এগিয়ে দিয়েছে। আমরা টেকনোলজির মাধ্যমে অনেক কিছু করছি। আমি যদি নির্বাচিত হই তাহলে টেকনোলজিক্যাল বিষয়গুলোতে সহযোগিতা করতে পারবো।’
সারাবাংলা/কেআইএফ/এমআই