‘স্বৈরাচারি’ সিদ্ধান্তের কারণে জি এম কাদেরকে নিয়ে অসন্তোষ জাপা’য়
১৩ মার্চ ২০২১ ২৩:২২
ঢাকা: দল পরিচালনার ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ‘স্বৈরাচারি’ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে চলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জাপা চেয়ারম্যানের এমন সব একক সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাদের অনেকেই নীতিগতভাবে জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তারা দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবছেন।
নেতাকর্মীরা বলছেন, জি এম কাদের দলের মহাসচিবসহ সাংগঠনিক সব ফোরাম ও গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে স্বৈরাচারি কায়দায় একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একটি গণতান্ত্রিক দলে এ ধরনের ব্যক্তিকেন্দ্রিক চর্চা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবে চেয়ারম্যান বিভিন্ন সিদ্ধান্ত তৃণমূল পর্যন্ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে তাতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অসন্তোষ বাড়তে থাকবে, যা দলের জন্য সুফল বয়ে আনবে না।
জাপা’র একাধিক সূত্র বলছে, পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেওয়া একাধিক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ ঢাকা মহানগর কমিটির নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। এরই মধ্যে তারা বনানীতে দলের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে গিয়ে এরকম কিছু সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভও করেছেন। এখন তারা দলটির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার কথা ভাবছেন। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বলছেন, চেয়ারম্যান যদি ‘স্বৈরাচারি’ এসব সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করেন, প্রয়োজনে তারা বিষয়টি নিয়ে আইনি লড়াইয়ের কথাও ভাববেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জি এম কাদের একের পর এক একক কর্তৃত্বে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দলের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে ঢাকা মহানগরের একজন নেতা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের উপস্থিতিতেই বলেন, গঠনতন্ত্র বহির্ভূত চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। চেয়ারম্যানের নেওয়া সিদ্ধান্ত দলের তৃণমূলের সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হচ্ছে না। তিনি কাউকে কাউকে দলের মধ্যে বাড়তি ক্ষমতা দিতে চাইলে বিদ্যমান সব কমিটি বাতিল ঘোষণা করে দিলেই হয়!
মহানগর কমিটির ওই নেতা আরও বলেন, এভাবে চলতে থাকলে একজন পিয়ন আর টাইপিস্টকে নিয়েই দল চালাতে পারবেন চেয়ারম্যান। প্রয়োজনে আমরা দল ছেড়ে চলে যাব। কিন্তু আমরা দলে থাকতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে দেবো না। কারণ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সুখ-দুঃখকে সঙ্গী করে আমরাই এতদিন ধরে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছি।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে বলছে, ওই নেতার এমন বক্তব্যের জবাবও কঠোর ভাষায় দিয়েছেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, আমার সিদ্ধান্তে দল চলবে। ইচ্ছা হলে কেউ দলে থাকতে পারে, ইচ্ছা না থাকলে দল ছেড়ে চলেও যেতে পারেন।
পার্টি চেয়ারম্যানের এমন জবাবে আগে থেকেই বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা আরও ফুঁসে ওঠেন। তারা বলছেন, চেয়ারম্যানের কাছ থেকে এমন বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে জি এম কাদেরের অনুসারীরা বলছেন, দল চালাতে গেলে এমন কঠোর হওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। সব মিলিয়েই জাপা’য় এখন চেয়ারম্যানের অবস্থান ঘিরে তৈরি হয়েছে দুইটি বলয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাপা’র একাধিক নেতা সারাবাংলাকে বলেছেন, দলের একটি অংশ উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিয়ে দলে ঐক্য ধরে রাখতে চান। চেয়ারম্যানের কর্তৃত্বপরায়ণতা নিয়ে যারা ক্ষুব্ধ, তাদেরও কোনোভাবে বুঝিয়ে ভাঙন ঠেকাতে চান। তবে দলের আরেকটি অংশের মত, চেয়ারম্যান তাদের কথা না শুনলে তারা প্রয়োজনে আলাদা হয়ে যাবেন।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এ পরিস্থিতিতে পার্টিতে কাগজে-কলমে শীর্ষ পদ প্রধান পৃষ্ঠপোষকের দায়িত্বে থাকা রওশন এরশাদ এখন পর্যন্ত তেমন ভূমিকা রাখছেন না। তবে অনেকের ধারণা, তিনি নিজেও জি এম কাদেরের একক কর্তৃত্ব মেনে নিতে নারাজ। সেক্ষেত্রে জি এম কাদেরের বিরোধিতাকারী নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়ে উঠলে রওশন এরশাদ কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটি আগে থেকে বলা মুশকিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপা’র একজন সংসদ সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, দলের চেয়ারম্যানই দলকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তার নেওয়া প্রায় সব সিদ্ধান্তই একতরফা। একক সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি সাংগঠনিক কাঠামোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন, যা দলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এরকমভাবে চলতে থাকলে জাপা’র ভবিষ্যৎ অন্ধকার হতে সময় লাগবে না।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে এসব বিষয়ে কথা হয় মহাসজিব জিয়াউদ্দিন বাবলুর সঙ্গে। তিনি অবশ্য নেতাকর্মীদের অসন্তোষ বা চেয়ারম্যানের বিরোধিতার কথা অস্বীকার করেন।
জাপা মহাসচিব সারাবাংলাকে বলেন, জাপায় কোনো গ্রুপিং নেই। দলটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আমরা শক্তিশালী হচ্ছে। জাপা’য় কোনো বিভক্তি নেই।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
একক কর্তৃত্ব চেয়ারম্যানের বিরোধিতা জাতীয় পার্টি জাপা জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের স্বৈরাচারি সিদ্ধান্ত