Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যে কারণে সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে যাবেন মোদি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৪ মার্চ ২০২১ ২২:৪০

সাতক্ষীরা: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সফরকে ঘিরে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুরে যশোরেশ্বরী কালীমন্দির সংস্কার থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আগামী ২৭ মার্চ তিনি সেখানে আসবেন। সফরটি খুব সংক্ষিপ্ত হলেও আয়োজনে কোনো ঘাটতি রাখছে না জেলা প্রশাসন। কিন্তু কেন এই যশোরেশ্বরী কালীমন্দির মোদির কাছে গুরুত্বপূর্ণ? কারণ হলো এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতের পশ্চিম বাংলার নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এ সফরটি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ হলেও তিনি বাংলার সর্বদক্ষিণের জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগরকে বেছে নিয়েছেন ধর্মীয় অনুভূতি থেকে। এই মন্দিরের সঙ্গে পৌরাণিক আখ্যানের যোগ রয়েছে। যে কারণে মোদির সফরের তালিকায় এই স্থানটি রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাড়ে ৪০০ বছরের পুরাতন সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার এই যশোরেশ্বরী কালীমন্দির। ১৫৬০ থেকে ১৫৮০ সাল পর্যন্ত রাজা লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বকালে তিনি স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে ঈশ্বরীপুর এলাকায় এই মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরটি নির্মাণের পর সেটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে মন্দিরটি জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে ওঠে।

সে সময় শ্যামনগরের ধুমঘাট ছিল বাংলার ১২ ভূঁইয়ার এক ভূঁইয়া রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী। রাজা প্রতাপাদিত্য এসময় দেখতে পান, ওই জঙ্গল থেকে এক আলোকরশ্মি বেরিয়ে আসছে। তিনি তখন মন্দিরটি খোলার নির্দেশ দেন। মন্দিরটি খুলেই সেখানে দেখা মেলে চন্ডভৈরবের আবক্ষ শিলামূর্তি। তখন থেকে সেখানে পূজা শুরু হয়।

ইতিহাসের তথ্য মতে, দক্ষ রাজার কনিষ্ঠ কন্যার নাম ছিল সতীবালা। তিনি জন্ম থেকে মহাদেবের পূজারিণী ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি স্বেচ্ছায় মহাদেবকে বিবাহ করেন। এতে দক্ষ রাজার ঘোর আপত্তি ছিল। এক অনুষ্ঠানে দক্ষ রাজার উপস্থিতিতে মহাদেব আসেন। কিন্তু মহাদেব রাজাকে তার শ্বশুর বলে পরিচয় দেননি। এতে তিনি চরম অপমানবোধ করেন।

পরে দক্ষরাজা যজ্ঞ শুরু করলে এতে সতীবালা ও মহাদেব নিমন্ত্রিত ছিলেন না। এতে অপমান বোধ করেন সতীবালা। কিছুক্ষণ পরেই সতী দেহত্যাগ করেন। এ খবর পেয়ে কৈলাস থেকে দ্রুতবেগে নেমে আসেন মহাদেব। তিনি দক্ষ রাজার মুণ্ডু কেটে বলির জন্য নিয়ে আসা ছাগলের মাথায় কেটে বসিয়ে দিয়ে দক্ষযজ্ঞ লণ্ডভণ্ড করে দেন। পরে তিনি মৃত স্ত্রী সতীবালাকে কাঁধে নিয়ে কৈলাস পাহাড়ে চলে গিয়ে ক্ষোভে ও দুঃখে ব্রহ্মান্ড ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেন।

এ খবর পেয়ে ব্রহ্ম ও নারায়ণ সিদ্ধান্ত নেন মহাদেবকে ঠাণ্ডা করতে হলে তার কাছ থেকে সতীর মৃতদেহ সরিয়ে নিতে হবে। সে অনুযায়ী ত্রিশূল দিয়ে সতীকে ৫১ খণ্ড করে ত্রিশূলে ঘোরানো হয়। এর একখণ্ডই এসে পড়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে। সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হয় যশোরেশ্বরী কালীমন্দির। অপর খণ্ডগুলো পশ্চিমবঙ্গের কালীঘাট, আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।

শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরের পুরোহিত দিলীপ মুখার্জী জানান, প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এ মন্দিরে পূজা অর্চনা অনুষ্ঠিত হয়। এই দু’দিন পূজা উপলক্ষে শত শত ভক্তের সমাগম ঘটে এখানে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও শনিবার আসছেন।

এদিকে, মোদির আগমণ ও তার বিশ্রামের বিষয়টিও মাথায় রেখে স্থানীয় ভূমি অফিসকেও সাজানো হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে। ইতিমধ্যে সেখানে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার, ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার রাজেশ কুমার রায়না, জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালসহ প্রশাসনের ঊদ্ধর্তন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন।

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদির নিরাপত্তার বিষয়টি এসএসএফ এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মহিদ উদ্দীন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। গত ১ মার্চ থেকে মন্দিরসহ আশপাশের এলাকা পুলিশি নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় আনা হয়েছে। চেকপোস্ট তৈরি করে সাধারণের চলাচলের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। স্থানীয় হোটেল, ছাত্রাবাসসহ বিভিন্ন স্থান গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর নির্বিঘ্ন করতে সমন্বয় করে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কয়েক দফা শ্যামনগর পরিদর্শন করেছেন। যেহেতু এটি রাষ্ট্রীয় সফর তাই কোনো কিছুই কমতি রাখা হবে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সামনে বাংলাদেশ তথা সাতক্ষীরার ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরতে জেলা প্রশাসন দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। রাস্তাঘাট, হেলিপ্যাড নির্মাণসহ সব ধরনের কাজ দ্রুত শেষ করা হচ্ছে।’ মোদির সফরের শেষ মূহূর্ত পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের সব কর্মকর্তা সজাগ থাকবে বলেও জানান তিনি।

সারাবাংলা/এমও

টপ নিউজ নরেন্দ্র মোদি যশোরেশ্বরী কালীমন্দির সাতক্ষীরা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কুষ্টিয়া থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৮

সম্পর্কিত খবর