৪ মিনিটের জন্য ক্যাম্পাসে ভিসি কলিমউল্লাহ!
১৭ মার্চ ২০২১ ২১:১৮
রংপুর: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ক্যাম্পাসে এসে মাত্র চার মিনিট অবস্থান করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এরপর ঘণ্টাখানেক বাংলোতে অবস্থান করে আবারও বাংলোর পেছনের দরজা দিয়ে চলে গেছেন।
দীর্ঘদিন পর বুধবার (১৭ মার্চ) সকালে ক্যাম্পাসে আসেন তিনি। এঘটনায় নতুন করে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আবারও অবমাননার অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিত থাকার পাশাপাশি জাতীয় দিবসগুলোতেও আসেন না ক্যাম্পাসে ভিসি। তাই উপাচার্যের বিরুদ্ধে দেড় শতাধিকেরও বেশি অভিযোগের তদন্ত হওয়ায় উচ্চমহলের চাপে পড়ে বুধবার ক্যাম্পাসে আসতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী কর্মকর্তা সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুর রহিম জানান, সকাল ৯টা ২মিনিটে উপাচার্য ক্যাম্পাসে আসেন। তবে ব্যক্তিগত গাড়িতে না এসে প্রক্টরিয়াল বডির একটি কালো মাইক্রোতে করে যখন আসেন তখন ক্যাম্পাস পুরোপুরি ফাঁকা। হাতেগোনা কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর তাড়াহুড়ো করে প্রশাসনের ভবনের ভিতর দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের সামনে আসেন। এসময় ট্রেজারার হাসিবুর রশীদ, উপ-উপচার্য সরিফা সালোয়া ডিনা, রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তাফা কামাল ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নাজমুল হককে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেন। এরপরই ওই কালো মাইক্রোতে করে প্রধান ফটক দিয়ে বের হয়ে যান। এরপর বাংলোর পেছনের দরজা দিয়ে বাংলোতে প্রবেশ করেন।
তিনি বলেন, পতাকা উত্তোলন থেকে ফুল দেওয়া পর্যন্ত উপাচার্য মাত্র ৪ মিনিট ছিলেন সেখানে। উপাচার্য এই ক্যাম্পাসকে নিজের সম্পত্তি মনে করেন তাই যখন যেটা ইচ্ছা তখন সেটাই করে যাচ্ছেন।
এদিকে উপাচার্যের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে বাংলোতে প্রবেশ করতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দেন। এ সময় উপাচার্যের একান্ত সচিব আমিনুর রহমানকে ফোন করে উপাচার্যের সাথে সাক্ষাতের সময় চাওয়া হলে তিনি উপাচার্যের সাথে কথা বলে জানাবেন বলে জানান। পরে তাকেও একাধিকবার ফোন করে পাওয়া যায়নি।
উপাচার্যের বাংলোর একটি সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে উপাচার্য ফুল দিয়ে এসে বাংলোতে প্রায় তিন ঘণ্টা অবস্থান করেন। এর কিছুক্ষণ পরই উপাচার্য তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কালো একটি জিপে করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়েন।
উপাচার্যের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষার্থী পোমেল বড়ুয়া বলেন, ‘উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই জাতীয় দিবসগুলোতে অনুপস্থিত থেকেছেন। তার অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে তদন্ত কমিটি তদন্ত করছে সেটির চাপেই তিনি আজ ক্যাম্পাসে আসতে বাধ্য হয়েছেন। শিক্ষার্থীরা আশা করেছিল বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে উপাচার্যকে নিয়ে ফুল শ্রদ্ধা জানাব। কিন্তু উপাচার্য তো লুকোচুরি খেলাতেই ব্যস্ত।’
উপাচার্যের এমন কর্মকাণ্ড বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার শামিল উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুর পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, ‘উপচার্যের বিরুদ্ধে যতগুলো অভিযোগ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা। টাকা নয়-ছয় করে ১০ লাখ দিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বানিয়েছেন। গত বছরে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে উপাচার্যের নেতৃত্বে উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্টার জুতা পায়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের বেদিতে জুতা পায়ে উঠে বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননারও অভিযোগ। এছাড়াও বুদ্ধিজীবী দিবসে জুতা পায়ে ফুল দিয়ে শহিদ বুদ্ধিজীবীদেরও অসম্মান করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘উপাচার্য এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ধারণ করতে পারেনি। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিভাবে অর্থ লোপাট করা যায় সেদিকে সবসময় নজর দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে দেড় শতাধিকেরও বেশি অভিযোগ তদন্ত করছে আরেকটি তদন্ত কমিটি, সেটির চাপে পড়েই উপাচার্যের বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাসে আসা। তবে আমরা চাই আজকের চলে যাওয়া যেন উপচার্যের শেষ যাওয়া হয়।’
ড. কলিমউল্লাহর এমন কর্মকাণ্ডকে নাটক ও দায় এড়ানো স্বভাব আখ্যায়িত করে উপাচার্যবিরোধী সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহবায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন, ‘উপাচার্য অনিয়ম করে একাই তিনটি গাড়ি ব্যবহার করলেও আজকে ক্যাম্পাসে প্রক্টরিয়াল বডির গাড়িতে গোপনে এসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে আবারও পালিয়ে গেলেন। উপাচার্য নিয়োগ পাবার পর থেকেই পলায়নবৃত্তি করেই যাচ্ছেন। ক্যাম্পাসে আসা থেকে শুরু করে যাওয়া পর্যন্ত কমপক্ষে চার মিনিট ছিলেন। এরপরই ক্যাম্পাস ত্যাগ করে চলে যান।’
তিনি বলেন, ‘ড. কলিমউল্লাহ যেসব অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন সেসবের জন্য উপাচার্য পদে থাকার যোগ্যতা অনেক আগেই হারিয়েছেন। সরকারের প্রতি অনুরোধ অতিদ্রুত তাকে অপসারণ করে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেওয়া।’
সারাবাংলা/পিটিএম