Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রাইমারি স্কুল মিল প্রকল্প: ব্যয় কমলো ২ হাজার কোটি টাকা

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৯ মার্চ ২০২১ ০৮:৫৪

ঢাকা: নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে সরকার প্রাইমারি স্কুল মিল প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এবার সেই প্রকল্প থেকে ব্যয় কমলো ২ হাজার ৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটির জন্য প্রথম পর্যায়ে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছিল ১৯ হাজার ২৯৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কিন্তু এতে ভেটো দেয় পরিকল্পনা কমিশন। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার গঠন করা হয় ব্যয় যুক্তিযুক্তকরণ কমিটি। ফলে এই টাকা কমিয়ে এখন ১৭ হাজার ২৯০ কোটি ২২ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ১৪ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। এটি এখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী সকল শিক্ষার্থীকে পর্যায়ক্রমে স্কুল মিল কার্যক্রমের আওতায় এনে তাদের শিক্ষা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় অবদান রাখা; নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা; শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমার এবং ভর্তি ও উপস্থিতির হার বাড়ানো।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমানো, শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতির হার বাড়ানোর জন্য ২০২৩ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে স্কুল মিলের আওতায় আনার বিষয় উল্লেখ রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ সালে শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং ঝরে পড়ার হার হ্রাস করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ অপুষ্টি নিরসনে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এ খাতে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ২০৩০ অর্জনের জন্য বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। তারপরও দেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুপুষ্টি ঘাটতিসহ ক্রমবর্দমান অপুষ্টিজনিত সমস্যা এখনও বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু অপুষ্টিজনিত সমস্যা শিশুর বিকাশে, বিশেষ করে শিক্ষা অর্জনে বড় চ্যালেঞ্জ।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সর্বপ্রথম ২০০১ সালে বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি শুরু করে। এ কর্মসূচির ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মাধ্যমে ২০১০ সালের জুলাই হতে ২০১৪ সালের জুনে দারিদ্র্য পীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং শীর্ষক একটি প্রকল্প দেশের ছয়টি বিভাগের ২৩টি জেলার নির্বাচিত ৮৬টি উপজেলায় বাস্তবায়নের জন্য নেয়। পরবর্তী সময় প্রকল্পটি তিন বার সংশোধন করা হয়।

সর্বশেষ দেশের আট বিভাগের ৩৯টি জেলার নির্বাচিত ১০৪টি উপজেলায় ৩১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতিদিন পুষ্টিকর বিস্কুট সরবরাহের জন্য ৪ হাজার ৯৯১ কোটি ৯৭ লাখ টাকার প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই (তৃতীয় সংশোধনীসহ) একনেকে অনুমোদিত হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

এ প্রকল্পে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ৩৩৮ কিলোক্যালরি খাদ্য নেওয়াসহ দৈনন্দিন অনুপুষ্টি চাহিদার ৬৭ শতাংশ পূরণ করেছে। তাছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সমতাভিত্তিক ভর্তি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক ভর্তির হার ২০১০ সালের ৮৪ দশমিক ৮০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯ সালে ৯৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ হয়েছে।

চলমান প্রকল্পটির পাশাপাশি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ২০১৩ সালে সরকারের অনুমোদন নিয়ে নিজস্ব অর্থে বরগুনা জেলার বামনা ও জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মৌসুমী তাজা সবজি ও খাদ্যদ্রব্য দ্বারা পরিচালিত স্কুল মিড মডেল পরীক্ষামূলক চালু করে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে নতুন করে বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার স্কুলের শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে পাঁচদিন রান্না করা উচ্চ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার এবং একদিন (বৃহস্পতিবার) উচ্চ পুষ্টিসমৃদ্ধ বিস্কুট সরবরাহ করে। উচ্চ পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ চাল, ডাল, পুষ্টিসমৃদ্ধ ভেজিটেবল ওয়েল এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবজি দিয়ে স্কুলে খাবার রান্না করা হয়।

এ পর্যায়ে চলমান দারিদ্র্য পীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি (তৃতীয় সংশোধীত) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে ডব্লিউএফপির কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে বামনা ও ইসলামপুর উপজেলা এবং আরও ১৪টি উপজেলাসহ মোট ১৬টি উপজেলায় সরকারি অর্থায়নে পাইলট হিসাবে বিস্কুটের পাশাপাশি রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হয়।

অপরদিকে ডব্লিউএফপির অর্থায়নে বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় বিস্কুট ও রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। এ জন্য চলমান প্রকল্পের আওতায় মোট ১০৪টি উপজেলার মধ্যে ৮৭টি উপজেলায় শুধু বিস্কুট বিতরণ এবং ১৭টি উপজেলায় বিস্কুটের পাশাপাশি রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে, যা ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত চলমান থাকবে। তবে কোভিড-১৯ এর উদ্ভুত পরিস্থিতে বর্তমানে শুধু বিস্কুট বিতরণ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটি দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পর্যায়ক্রমে উচ্চ পুষ্টিমানসমৃদ্ধ ফার্টিফাইড বিস্কুট ও প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, পর্যাপ্ত প্রোটিন এবং ক্যালরিসমৃদ্ধ রান্না করা গরম খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দৈহিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। শিক্ষার্থী ভর্তি ও উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত হবে এবং ঝরে পড়ার প্রবণতাও উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। যা সার্বিকভাবে শিক্ষার হার ও মান বৃদ্ধিতে এবং শিক্ষিত ও সুস্থ জাতি গঠনে সুদুরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে।’

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর