সব রেকর্ড ভেঙেছে শেষ এক সপ্তাহ
৩ এপ্রিল ২০২১ ২২:৫০
ঢাকা: দেশে সবশেষ এক সপ্তাহে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রান্ত তথ্য-পরিসংখ্যান আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। গত ২৮ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহ সময়ে করোনাভাইরাস সংশ্লিষ্ট তথ্য বিবেচনা করলে দেখা যায়, এই সময়ে দেশে অন্য যেকোনো সপ্তাহের তুলনায় বেশি মানুষ মারা গেছেন। একই সময়ে সংক্রমণও শনাক্ত হয়েছে আগের যেকোনো সপ্তাহের চেয়ে বেশি। এই সময়ে নমুনা পরীক্ষার পরিমাণও ছিল সর্বোচ্চ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নমুনা পরীক্ষা বাড়লে সংক্রমণ বাড়বে। তবে দেশে যে হারে এখন সংক্রমণ বাড়ছে, সেটি উদ্বেগজনক। একইসঙ্গে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও বেড়েছে। আর তাই এখনই সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। নইলে এই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
আরও পড়ুন-
- সোম নাকি মঙ্গলবার থেকে লকডাউন
- লকডাউনেও চলবে কল-কারখানার চাকা
- বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ হবে কি
- প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেলেই লকডাউন ঘোষণা
- সোমবার থেকে এক সপ্তাহ সারাদেশে লকডাউন
- একদিনে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫৮ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৫৬৮৩
দেশে প্রথম নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে দেশে প্রথম মৃত্যুবরণের ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। ধীরে ধীরে সংক্রমণ ও মৃত্যু— দুই-ই বাড়তে থাকে। নমুনা পরীক্ষার পরিমাণও শুরুর দিকে কিছুটা কম থাকলেও পরবর্তী সময়ে সেটি বাড়তে থাকে। একটা সময়ে গিয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কমতে থাকলেও মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই ফের বাড়ছে এই সংখ্যাগুলো।
করোনা সংক্রমণের পরিসংখ্যান
দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্তের পরে ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল পর্যন্ত অতিক্রম হয়েছে ৫৭ সপ্তাহ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমণ দেখা গেছে সবশেষ, অর্থাৎ ৫৬তম সপ্তাহেই। ২৮ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত এই সময়ে দেশে ৩৮ হাজার ৪৭১ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর আগে সাপ্তাহিক হিসেবে সর্বোচ্চ সংক্রমণ দেখা গেছে দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর ১৭তম সপ্তাহে। ২৮ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত ওই সময়ে দেশে ২৫ হাজার ৭০১ জনের মাঝে সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
সংক্রমণ শনাক্ত পরবর্তী ১৬তম সপ্তাহে শনাক্ত হয় তৃতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ। ২১ জুন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত ওই সময়ে দেশে ২৫ হাজার ২০৩ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
মৃত্যুর পরিসংখ্যান
দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের পর সংক্রমণের মতো সবশেষ ৫৬তম সপ্তাহেই সর্বোচ্চ মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এই সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন ৩৪৪ জন। এর আগে, দেশে সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর ১৮তম সপ্তাহ, অর্থাৎ ৫ জুলাই থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত সাত দিনে মারা গিয়েছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩০৮ জন। অন্যদিকে ২৮ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত সাত দিনে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩০২ জন করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গিয়েছিলেন।
নমুনা পরীক্ষার পরিসংখ্যান
দেশে সংক্রমণ শনাক্তের পরে ৫৬তম সপ্তাহেই সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। মূলত দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরুর বছর পেরিয়ে এসে মার্চ থেকেই নমুনা পরীক্ষায় রেকর্ড ছাড়াতে থাকে। ৫৬তম সপ্তাহে অর্থাৎ ২৮ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে দেশে এক লাখ ৫৭ হাজার ৭৯৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
এছাড়াও ৫৫তম সপ্তাহ অর্থাৎ ১৪ মার্চ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত সময়ে দেশে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক লাখ ৩৮ হাজার ৬৮৪টি। আর ৫৬তম সপ্তাহ, অর্থাৎ ২১ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত সময়ে দেশে তৃতীয় সর্বোচ্চ এক লাখ ৩২ হাজার ৪৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ডা. মোশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ বাড়বেই। আর তাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সুনির্দিষ্টভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করা। উৎস ও উৎপত্তিস্থলগুলো বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে যেতে পারে।
দেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলোই তো মানা হচ্ছে না। বইমেলা চলছে, ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, সভা-সমাবেশ হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনাকে তো সবাই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। এভাবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ হবে না, সম্ভবও না।
ডা. নজরুল আরও বলেন, এরকমভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তখন কী হবে? হাসপাতালে বেড বাড়ানো তো সমাধান না। সমাধান করতে হবে প্রতিরোধের মাধ্যমেই। তা না করে যদি জনসমাগম করা হয় ও স্বাস্থ্যবিধি অবজ্ঞা করা হয়, তবে আমাদের সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর