Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘এটা একটা মার্ডার, ফোর্সড ডেথ’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১১ এপ্রিল ২০২১ ২০:৪২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ব্যবসায়িক লেনদেনের অংশ হিসেবে পাওনা টাকা আদায়ের নামে ক্রমাগত মানসিক চাপ দিয়ে চট্টগ্রামে ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল মোরশেদ চৌধুরীকে আত্মহত্যায় বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী। তিনি বলেছেন, পাওনা পরিশোধের পরও বাড়তি টাকার আশায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবশালীদের মাধ্যমে মোরশেদ ও তার স্ত্রীকে ক্রমাগত নানামুখী চাপ দিয়েছেন ব্যবসায়িক অংশীদাররা। এই চাপ সহ্য করতে না পেরে চিরকূট লিখে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন মোরশেদ।

রোববার (১১ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ইশরাত জাহান চৌধুরী বলেন, ‘এটা আমার দৃষ্টিতে এটা একটা মার্ডার। ফোর্সড ডেথ। আমি আমার স্বামীর আত্মহননের নেপথ্যে জড়িতদের বিচার চাই।’

গত ৭ এপ্রিল নগরীর পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ আবাসিক এলাকায় নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আবদুল মোরশেদ চৌধুরী। এ ঘটনায় ইশরাত বাদি হয়ে মোরশেদের তিন ফুফাতো ভাই জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, পারভেজ ইকবাল চৌধুরী ও সৈয়দ সাকিব নাঈম উদ্দীনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন।

সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের সময় উদ্ধার করা সুইসাইড নোটের অনুলিপি সাংবাদিকদের দেওয়া হয়, যাতে মোরশেদ লিখেছেন, ‌‘‌‌আর পারছি না। সত্যি আর নিতে পারছি না, প্রতিদিন একবার করে মরছি। কিছু লোকের অমানুষিক প্রেসার আমি আর নিতে পারছি না। প্লিজ সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার জুমকে (মেয়ে) সাবাই দেখে রেখ। আল্লাহ হাফেজ।’

লিখিত বক্তব্যে স্কুলশিক্ষিকা ইশরাত অভিযোগ করেন, ফুফাতো ভাই জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, পারভেজ ইকবাল চৌধুরী ও পাঁচলাইশের সৈয়দ সাকিব নাঈম উদ্দীনের কাছে থেকে ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ব্যবসাসূত্রে ২৫ কোটি টাকা নেন মোরশেদ। ২০১৮ সালের লভ্যাংশসহ তাদের পরিশোধ করা হয় ৩৮ কোটি টাকা। এরপর তারা আরও টাকা দাবি করতে থাকে।

‘এজন্য আমার স্বামীকে তারা ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিকভাবে চাপ এবং হুমকি ধমকি দিতে থাকে। ২০০১৮ সালের মে মাসে আমার স্বামীকে পাঁচলাইশের এম এম টাওয়ারে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আরও ১২ কোটি টাকা বাড়তি তারা পায় উল্লেখ করে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সই নেওয়া হয়। স্বামী, আমার ও আমার মেয়ের পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হয়। আজ পর্যন্ত তা ফেরত পাইনি।’

এই ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় তখন কোনো মামলা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ইশরাতের। এছাড়া ২০১৯ সালে তাদের হিলভিউর বাসায় হামলা করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ইশরাত বলেন, ‘প্রতিনিয়ত আমার স্বামীকে হয়রানি, মানসিক নির্যাতন ছাড়াও বাসায় হামলা, মেয়েকে অপহরণ এবং স্বামীকে খুন করার হুমকি দেওয়া হয় অনেকবার। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তুলে নিয়ে লাশ ফেলে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। মোরশেদকে এক নম্বর ও আমাকে দ্বিতীয় আসামি করে আটটি মামলা দায়ের করা হয়। তাদের নির্যাতনের কারণেই মূলত আমার স্বামী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।’

আত্মহত্যার আগেরদিন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা রাসেল পরিচয়ে একটি নম্বর থেকে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন ইশরাত।

ইশরাত আরও জানান, একজন পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যস্থতায় মোরশেদের সঙ্গে অভিযুক্তদের বৈঠক হয়েছে, যেখানে ইশরাতও ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের কয়েকজন নেতাও উপস্থিত থেকে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। এমনকি তাকে স্কুলে যেতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা এর প্রতিবাদ করেন বলে তিনি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আবদুল মোরশেদের মা নুরনাহার বেগম, বড় ভাই আবদুল আরশাদ চৌধুরী ও ১২ বছরের মেয়ে মোজাশ্বেরা জুম।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

ইশরাত জাহান চৌধুরী চট্টগ্রাম টপ নিউজ মার্ডার সংবাদ সম্মেলন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর