Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্যবহার হবে ড্রোন ও তথ্যপ্রযুক্তি, সুন্দরবন মনিটরিং হবে অনলাইনে

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৬ মে ২০২১ ২৩:৫৯

ঢাকা: সুন্দরবনের পরিবেশ সুরক্ষা এবং বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সুরক্ষা প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় একদিকে যেমন সুন্দরবনের রক্ষণাবেক্ষণে জনবল নিয়োগের সংস্থান রাখা হয়েছে, তেমনি নতুন জলযান কেনা, সুন্দরবনের বাসিন্দা প্রাণীদের খাওয়ার পানির জন্য পুকুর খননের পরিকল্পনাও রয়েছে। একদম নতুন ধরনের উদ্যোগের মধ্যে এই প্রকল্পের আওতায় বনের ভেতরের ছবি তোলার জন্য ড্রোন কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসঙ্গে বনের প্রহরীদের মধ্যেকার যোগাযোগ শক্তিশালী করতে তাদের ওয়াকি-টকি কিনে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পের আওতায় আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ঢাকা ও খুলনায় বসেই সুন্দরবনের ভেতরের সব ধরনের কর্মকাণ্ড মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, বন প্রহরীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ছোট আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়ার চিন্তাভাবনাও রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের।

সুন্দরবনের সুরক্ষায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদিত প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সরকারি প্রকল্পটি ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগ ধানসিঁড়ি স্টেশনের কাছে বনের এরিয়ায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হতে পারে। কারণ ওই এলাকা থেকে মানুষ পায়ে হেঁটে বিভিন্ন পথ ধরে সুন্দরবনের প্রবেশ করে থাকে। কেউ ধানসিঁড়ি স্টেশন থেকে পাস নিয়ে চোরাই পথে ঢুকে যায়। আবার সুন্দরবনের এই এলাকাটিতেই প্রতিবছর আগুন লেগে থাকে। আগুন লাগার ঘটনা প্রতিরোধে এলাকাটিকে সুরক্ষিত রাখতে কাঁটাতারের বেড়া ও টহল জোরালো করার ব্যবস্থা নেওয়অ হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সুন্দরবনকে দুইটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি পশ্চিম, আরেকটি পূর্ব। পশ্চিম বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করে খুলনা বন বিভাগ। পূর্ব অংশটি নিয়ন্ত্রণ করে বাগেরহাট বন বিভাগ। এই দুই বিভাগে বন পাহার দেওয়ার জন্য ১৭০ জন ফরেস্ট গার্ড রয়েছেন। বট ম্যান রয়েছেন ২৭৫ জন। তবে এসব কর্মীদের চলাচলের জন্য যে পরিমাণ জলযান রয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এর মধ্যে আবার কয়েকটি জলযানের ইঞ্জিল বিকল। বাকিগুলো চলছে জোড়াতালি দিয়ে। ফলে ফরেস্ট গার্ডদের বনের ভেতরে যাতায়াতের জন্য জেলেদের নৌকার সাহায্য নিতে হয়।

বিজ্ঞাপন

বন বিভাগ জানিয়েছে, সুন্দরবনের দুই বিভাগে বনরক্ষকদের ক্যাম্প রয়েছে ৭০টি। বন বিভাগ স্টেশন রয়েছে ১৭টি। বনরক্ষীদের ক্যাম্পে কোনো কোনো জায়গায় দুই-তিন জন কাজ করে থাকেন। অথচ একেকটি ক্যাম্পে ছয় থেকে সাত জন বনরক্ষী থাকা প্রয়োজন।

সুন্দরবন ঘিরে এমন নানা সমস্যা সমাধান করতেই সুন্দরবন সুরক্ষায় প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বন ও পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, সুন্দরবনের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব সমস্যা শিগগিরই সমাধান হয়ে যাবে। মন্ত্রণালয় থেকে এজন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব আহমেদ শামিম আল রাজি সারাবাংলাকে বলেন, সুন্দরবনের পরিবেশের সুরক্ষা এবং বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব মোকাবিলা করতে সুরক্ষা প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সুন্দরবনের হরিণ শিকার বন্ধ হবে, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও মোকাবিলা করা সহজ হবে। কেবল প্রকল্প বাস্তবায়ন নয়, সুন্দরবনে পর্যটকদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, সুন্দরবনের বন কর্মকর্তা ও বনরক্ষীদের জন্য বাসভবন, এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে যোগাযোগের জন্য টহলরত বনরক্ষীদের মধ্যেকার যোগাযোগের জন্য ওয়াকিটকির ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে প্রকল্পে। সুন্দরবনের ভেতরের ছবি তোলা এবং ঢাকা ও খুলনায় বসে মনিটরিং করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য ড্রোন কেনা ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে বেশি। আশা করা যায় প্রকল্পটি কার্যকর হবে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

সুন্দরবন সুন্দরবনের সুরক্ষা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর