ফের সংশোধন হচ্ছে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প
১০ মে ২০২১ ১১:২৭
ঢাকা: চতুর্থবারের মতো সংশোধন হচ্ছে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীণদের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা ২০২০ বাস্তবায়নসহ ৬ কারণে চতুর্থবারের মতো প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
রোববার (৯ মে) অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠক। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ। বৈঠকের কার্যপত্র সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
পিইসি সভার কার্যপত্রে প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী একক গৃহ নির্মাণের জন্য ২ শতাংশ খাস জমিতে ‘ক’ শ্রেণির পুনর্বাসন এবং যার জমি আছে ঘর নেই এরূপ ‘খ’ শ্রেণির পরিবার পুনর্বাসনের জন্য নতুন ঘরের ডিজাইন অনুমোদন, ভূমিহীন ও গৃহহীন ‘ক’ শ্রেণির পরিবার পুনর্বাসনের জন্য জমি ক্রয়, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি, পুরাতন জরাজীর্ণ ব্যারাক পুনঃনির্মাণ এবং প্রকল্পের বাস্তবায়নের সময়সীমা বর্ধিতকরণ করা হবে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ছিন্নমুল, গৃহহীন ভূমিহীন পরিবারকে জমি, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, বিদ্যুৎ ও চলাচলের জন্য পাকা রাস্তা ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা দিয়ে পুনর্বাসন করা এবং পুনর্বাসিতদের ঋণ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মানির্ভরশীল করে গড়ে তোলার জন্য ১৯৯৭ সাল হতে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র পরিবার পুনর্বাসন, ঋণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা এবং আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণসহ তাদের আর্থ- সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।
সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে মোট ১ হাজার ১৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১০ সালের জুলাই হতে ২০১৪ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য আশ্রয়ণ-২ শীর্ষক মূল প্রকল্পটি ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। মূল অনুমোদিত ডিপিপির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০০টি আশ্রয়ণ গ্রাম স্থাপন করে ৫০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা।
আরও পড়ুন: আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় কমছে
পরবর্তীতে শহর এলাকায় টিনের ঘরের পরিবর্তে বহুতল ভবন নির্মাণ ও আনুষঙ্গিক সুবিধাসহ ৫০ হাজার পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য ১ হাজার ৩৫ কোটি ২ লাখ টাকা বৃদ্ধি এবং মেয়াদ তিন বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করে প্রথম সংশোধিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) মোট ২ হাজার ২০৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।
সরকার ঘোষিত সবার জন্য বাসস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় মোট ২ লাখ ৫০ হাজারটি পরিবারকে পুনর্বাসন করার জন্য প্রথম সংশোধিত ডিপিপির চেয়ে আরও ২ হাজার ৬৩৬ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি এবং মেয়াদ ২ বছর বৃদ্ধি করে মোট ৪ হাজার ৮৪০ কোটি ২৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে এবং ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুনে বাস্তবায়ন মেয়াদে প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি ২০১৭ সালের ২ মে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।
এ ছাড়া কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত করতে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে কক্সবাজারের খুরুশকুল মৌজায় পুনর্বাসনের জন্য ১৩৯টি ৫ তলা আবাসিক ভবন ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রম দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ কার্যক্রমের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২০টি ভবনের কার্যাদেশ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। অবশিষ্ট ১১৯টি ভবন কে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ শীর্ষক একটি পৃথক প্রকল্প প্রণয়ন করা হয় এবং তা এরমধ্যে একনেকে অনুমোদিত হয়েছে।
পরবর্তীতে নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি, খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ ইত্যাদি কারণে প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধন করা হয় এবং মোট ৪ হাজার ৮২৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে এবং ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়ন মেয়াদ ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদিত হয়।
এবার প্রধানমন্ত্রী মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীণদের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা ২০২০, গত বছরের ১৩ মে অনুমোদন করেন। এই নীতিমালা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভুমিহীণ ও গৃহহীন ক শ্রেণি এবং জমি আছে কিন্তু ঘর নেই এ রূপ খ শ্রেণির ৩ লাখ ৫০ হাজার পরিবারসহ মোট ৬ লাখ পরিবার পুনর্বাসন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত ডিজাইন অনুযায়ী একক গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। নীতিমালা অনুযায়ী ৩ লাখ ৫০ হাজারটি পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প সংশোধনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৭টি ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় পরিবার বাছাইকরণ, ৫ হাজার ১৪৯টি পাকা ব্যারাক, চরাঞ্চলে ৫ হাজার ৭৮টি সিআইসিট ব্যারাক, দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ব্যারাক নির্মাণ, ১২০টি বহুতল নির্মাণ, ১ হাজার ১১০টি বহুতল ভবন, সকল প্রকল্প গ্রামে অগভীর গভীর নলকূপ স্থাপন এবং ৫৬৪টি ঘাটলা, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, বক্স কালভার্ট, পাকা ড্রেন ও স্লোপ প্রোটেকশন নির্মাণ ইত্যাদি।
সারাবাংলা/জেজে/একে