গ্রেফতার নয়, পিবিআই হেফাজতেই বাবুল আক্তার
১১ মে ২০২১ ২২:২২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বিভিন্ন মাধ্যমে বাবুল আক্তারকে মিতু হত্যা মামলায় গ্রেফতারের তথ্য ছড়িয়ে পড়লেও পিবিআই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মামলার বাদী হিসেবে তাকে ওই মামলায় গ্রেফতারের আইনি কোনো সুযোগ নেই।
এর আগে মঙ্গলবার (১১ মে) সকালে বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ে যান। সেখানে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) সন্তোষ কুমার চাকমাসহ ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের একটি টিম বিভিন্ন বিষয়ে জিজজ্ঞাসাবাদ করেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখছে পিবিআই।
রাত সাড়ে ৯টায় যোগাযোগ করা হলে পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, মামলার বাদী হিসেবে বাবুল আক্তারের সঙ্গে তারা শুরু থেকে যেভাবে কথাবার্তা বলছেন, সেটি অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুন- মিতু হত্যা: সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ
বাবুলকে আটক কিংবা গ্রেফতার করা হয়েছে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুযোগ নেই।’ তদন্তে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল আক্তারের জড়িত থাকার কোনো তথ্যপ্রমাণ বা ইঙ্গিত পাওয়া গেছে কি না— এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা বলতে পারছি না। হাইকোর্টের রুলিং আছে।’
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিনি (বাবুল আক্তার) আগেও এসেছিলেন। আজকেও (মঙ্গলবার) পিবিআইতে গেছেন। মামলার বাদী হিসেবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হাইকোর্টের রুলিং আছে, এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না।’
রাত পৌনে ১০টার দিকে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের বরাত দিয়ে সংস্থার সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়নি। তাকে মামলা তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর বাইরে কোনো তথ্য নেই।’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছিলেন, পিবিআইয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হয়েছেন। এজন্য সোমবার তিনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছেন।
একই সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মামলার বাদীকে সরাসরি ওই মামলায় আটক বা গ্রেফতার করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি যদি এই মামলায় দোষী হয়ে থাকেন বলে পুলিশ তথ্যপ্রমাণ পায়, সেক্ষেত্রে আগের মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। এরপর নতুন মামলা দায়ের করে আগের মামলার বাদীকে আসামি দেখিয়ে আদালতকে অবহিত করে গ্রেফতার করতে হবে তাকে।
বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে বুধবার (১২ মে) একই আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বলে পিবিআই সূত্র সারাবাংলাকে জানিয়েছে।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মিতুকে। এই ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
২০১৬ সালে হত্যাকাণ্ডের বছরখানেক পর থেকেই মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন দাবি করে আসছিলেন, বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় ও নির্দেশে তার মেয়ে মিতুকে খুন করা হয়েছে।
মিতু হত্যা মামলায় ওই বছরের ৮ জুন ও ১১ জুন নগর গোয়েন্দা পুলিশ হাটহাজারি উপজেলা থেকে আবু নসুর গুন্নু ও বায়েজিদ বোস্তামী থানার শীতল ঝর্ণা থেকে শাহ জামান ওরফে রবিন নামে দু’জনকে গ্রেফতারের খবর জানায় পুলিশ। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, মিতু হত্যায় তাদের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর তারা জামিনে মুক্তি পান।
ওই বছরের ২৪ জুন রাতে ঢাকার বনশ্রীর শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুল আক্তারকে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর ফলে সন্দেহের তীর যায় বাবুলের দিকে। হত্যায় বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়। এসময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাবুল আক্তার স্বেচ্ছায় চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন।
২৬ জুন মো. আনোয়ার ও মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম নামে দু’জনের গ্রেফতারের খবর প্রকাশ করে পুলিশ। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। জানান, মিতু হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি তাদের ভোলা দিয়েছিল।
এরপর এহেতাশামুল হক ভোলা ও তার সহযোগী মো. মনিরকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে পয়েন্ট ৩২ বোরের একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়, যেটি মিতু হত্যায় ব্যবহৃত হয়েছে বলে পুলিশের ভাষ্য। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে ভোলা ও মনিরকে আসামি করে একটি অস্ত্র মামলাদায়ের করা হয়।
এরপর ১ জুলাই মোটরসাইকেল সরবরাহ করার অভিযোগে মুছার ভাই সাইদুল আলম শিকদার ওরফে সাক্কু ও শাহজাহান নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। ভোলা, সাইদুল ও রবিন এরই মধ্যে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
কিছুদিন নিশ্চুপ থাকার পর ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন বাবুল আক্তার। নানা নাটকীয়তা শেষে ৬ সেপ্টেম্বর বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাটি তদন্ত করে আসছিল নগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআইকে।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর