ইসরাইলের সঙ্গে নতুন করে প্রেম কেন?— ফখরুল
২৩ মে ২০২১ ১৬:২৯
ঢাকা: ‘ইসরাইল আসলে মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা পৃথিবীর জন্য এখন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সরকার কেন নতুন করে প্রেম করতে যাচ্ছে ইসরাইলের সঙ্গে?’ বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘অ্যাকসেপ্ট ইসরায়েল’ কথাটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখলরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রশ্ন তুলেছেন।
রোববার (২৩ মে) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে দলীয় মতামত তুলে ধরেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ইসরাইল আমাদের শত্রু, পৃথিবীর শত্রু। কারণ, তারা মানবাধিকারকে ধবংস করছে। অনেকে বলেন যে, প্যালেস্টাইন ইসলামী রাষ্ট্র সেই সমর্থনে। না, আমরা ফিলিস্তিনকে সমর্থন করি এ কারণে যে, সেটাও একটি রাষ্ট্র এবং তার মানুষগুলোও ‘মানুষ‘। বিশেষ করে শিশুরা। প্রায় একশ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে গত কয়েক দিনে। কয়েক বছর আগে প্রায় তিন লাখ শিশুকে হত্যা করা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমি একটা যোগসূত্র দেই আপনাদের (সাংবাদিক)। কয়েকদিন আগে আল-জাজিরাতে একটা রিপোর্ট হয়েছিল। সেই রিপোর্টে একটা বিশেষ সার্ভিলেন্সের যে ডিভাইস বা যন্ত্র, এই যন্ত্র অরিজিনালি ইসরায়েল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সেজন্য এখন জনগণের মাঝে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে তাহলে কি ইসরাইলের সঙ্গে সরকার আবারও ওই ধরনের কোনো চুক্তি করতে যাচ্ছে, বা কিছু করতে যাচ্ছে?’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, ইসরাইল গোয়েন্দাবৃত্তিতে পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। ওটা করে কিন্তু তারা এখন মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ হয়ে আছে। সুতরাং এই বিষয়গুলো জনগণ অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। তারা দেখছে এবং লক্ষ্য করছে যে, কোন দিকে যাচ্ছি আমরা? অলরেডি তো গেছি। অন্ধকার মধ্যযুগীয় বর্বরতার দিকে, যেখানে মানুষের ন্যূনতম অধিকারটুকু থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ইসরাইলের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। ইসরাইল বিরোধী অবস্থান আমাদের। আমরা স্ট্রেইটকাট বলতে চাই, এই যে মানবতাবিরোধী বর্বরোচিত হামলা, মধ্যপ্রাচ্যে যে অশান্তি সৃষ্টি করা এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে যে একেবারে ধবংস করে ফেলা- এর মূলে হচ্ছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক বিশ্বের উচিত ইসরায়েলকে সম্পূর্ণভাবে বিরত করা এবং ফিলিস্তিনিদের যে স্বাধিকার ও স্বাধীন রাষ্ট্রের যে অধিকার তা নিশ্চিত করা।’
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইল বাহিনীর হামলার ঘটনার নিন্দা জানানো হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
‘বিএনপি গণমাধ্যমের বন্ধু সেজে সাংবাদিকদের উসকানি দিচ্ছে— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা একেবারেই মনগড়া এবং নিজেদের অপরাধগুলোকে ঢাকার জন্য একটি মন্তব্য। সাংবাদিকতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের মনোভাব কী, সেটা দেশের মানুষ জানে। ১৯৭৫ সালে দেশে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। সেই বাকশাল প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই সমস্ত পত্রিকা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। মাত্র চারটা পত্রিকা চলবে বলা হয়েছিল, সেই চারটি পত্রিকা ছিল তাদের নিজস্ব। তাতে অসংখ্য সাংবাদিক বেকার হয়ে গিয়েছিলেন।’
ফখরুল বলেন, ‘সব সময় উনারা (সরকারের মন্ত্রীরা) দুঃস্বপ্ন দেখে। প্রতিদিন, প্রতিরাতে বিএনপি, বিএনপি, বিএনপি দেখতেই থাকে ও সবখানে ষড়যন্ত্র দেখতে থাকে। এত ভয় কেন রে ভাই? কারণ আপনাদের পায়ের তলায় মাটি নেই, আপনাদের পেছনে মানুষের কোনো শক্তি নেই। আপনারা এখন আমলাতন্ত্র নির্ভর হয়েছেন। আপনারা এখন সামরিক-বেসামরিক আমলা নিয়ে দেশ চালাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দাদের লাগিয়ে দেওয়া হয় সাংবাদিকদের পেছনে। তারা আপনাদের ফোন বলে যে, এই সংবাদ দেওয়া যাবে, এটা দেওয়া যাবে না। বাস্তবতা। আপনারা এটা কেউ স্বীকার করুন বা না করুন। আপনারা দেখুন যে, যারা এই মিডিয়া হাউজের মালিক তাদের অনেকের বাড়ি পর্যন্ত ভেঙে দেওয়া হয়েছে বুলডোজার দিয়ে, জাস্ট একটু ভিন্ন অবস্থান নেওয়ার কারণে। আবার নামকরা পত্রিকার নাম করা এডিটরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সারাদেশে একশটি মামলা দেওয়া হয়েছে নামকরা এডিটরদের বিরুদ্ধে।’
‘অপরাধ একটাই কেন সবাই তাদের তোষামোদী করছে না, কেন তাদের উচ্ছিষ্টভোগী কয়েকজন আছেন, তাদের সুরে একই সঙ্গে কথা বলছে না কেন। সবাই তো একরকম নন। দেশপ্রেম আছে, ভালোবাসা আছে, নীতিবোধ আছে, তারা তো নিশ্চয় কথা বলবেন। তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন। সেজন্য এই সাংবাদিক ভাইয়েরা-বোনদের যারা আজকে কথা বলেন তাদের ওপর বিপর্যয়, হুমকি। আমরা পরিষ্কার করে বলছি এভাবে কোনোদিনই কেউ টিকে থাকতে পারবে না। হ্যাঁ সময় নেবে। অবশ্যই তাদের বিদায় নিতে হবে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
উপ-নির্বাচনের অংশ নেবে না বিএনপি
স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ায় এবং নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতায় প্রতিটি নির্বাচনে সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে আগামীতে লক্ষীপুর-২, সিলেট-৩, ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫ আসনে উপ-নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, মহানগর মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, কাজী আবুল বাশার, আবদুল আলিম নকি, যুব দলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম