২ ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়া সবার মাঝেই তৈরি হচ্ছে অ্যান্টিবডি
২৫ মে ২০২১ ২১:৪৩
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জাতীয় গণটিকাদান কর্মসূচির আওতায় পর্যায়ে প্রয়োগ করা হচ্ছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি কোভিশিল্ড নামের এই ভ্যাকসিনের দুই ডোজ গ্রহণের পরে গ্রহীতাদের মাঝে তৈরি হচ্ছে শতভাগ অ্যান্টিবডি।
সর্বমোট ৫০০ জন ভ্যাকসিন গ্রহীতার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের পরে অ্যালাইজা পদ্ধতিতে এই অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয় রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরে মানবশরীরে কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য এই গবেষণাটি করেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক।
গবেষণায় বিভিন্ন বয়সসীমার ভ্যাকসিনগ্রহীতাদের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তরুণদের মাঝে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার হার বেশি হলেও ষাট বছরের বেশি মানুষের তুলনামূলকভাবে কম।
৩৬০ জন পুরুষ ও ১৪০ জন নারীর প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণের পরে এ গবেষণা করা হয়। এদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। ৪১ থেকে ৬০ বছরের উপরে ৩০ শতাংশ ও ১০ শতাংশ ষাট বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের ওপরে এই গবেষণা চালানো হয়। এতে দেখা যায়, ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মাঝে সর্বোচ্চ টাইটার লেভেল রয়েছে ১১। একই সঙ্গে গবেষণায় সর্বনিম্ন টাইটার লেভেল ছিল ৩।
গবেষণারই অংশ হিসেবে কোনো ভ্যাকসিন নেওয়ার পূর্বেই ৫০০ জনের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়। তখন তাদের মাঝে ৮০ জনের অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়। এর মাঝে ৪০ জনের আগে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। কিন্তু ৪০ জনের কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত না হলেও তাদের মাঝে অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের গবেষক ও সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রথমে ৫০০ জনের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করি ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে। পরবর্তী সময়ে প্রথম ডোজ দেওয়ার পরে সেই ৫০০ জনের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়। আবার তারা দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ফের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়। পরে তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সবার মাঝেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, যা মানুষকে সুরক্ষা দিবে। আক্রান্ত হবে না এমনটা কোনো বৈজ্ঞানিক সূত্র দিয়ে বলার সুযোগ নেই। কিন্তু সংক্রমণের মাত্রা অনেকটা কম হবে।’
তিনি বলেন, ‘২০ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মাঝে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে বেশি। অপটিক্যাল ডেনসিটি বিবেচনা করলে দেখা যায়, তাদের অ্যান্টিবডি টাইটার লেভেল ছিল ৮। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ টাইটার হিসেবে আমরা ১১ও পেয়েছি। তবে যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি তাদের মাঝে অপেক্ষাকৃত কম অ্যান্টিবডি দেখা যায়। তবে সবারই যে কম বিষয়টি তাও নয়। এক্ষেত্রে আমরা টাইটার সর্বনিম্ন টাইটার লেভেল পেয়েছি ৩।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা ভ্যাকসিন নিচ্ছেন তাদের সবার মাঝেই কিন্তু অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরে শতভাগ অ্যান্টিবডির মাত্রা পাওয়া যাচ্ছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পরে একজন ব্যক্তি যখন সুস্থ হয়ে উঠে তখন নির্দিষ্ট সময় পরে তার মাঝে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরেও প্রায় একই মাত্রার অ্যান্টিবডি দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ ভ্যাকসিনের উপকারিতা কিন্তু সবাই পাচ্ছেন।’
আরও পড়ুন: ভ্যাকসিন নেওয়া পুরুষদের চেয়ে নারীদের শরীরে অ্যান্টিবডি বেশি
ডা. আশরাফুল বলেন, ‘ভ্যাকসিন গ্রহণের পরে একটা নির্দিষ্ট সময় পরে মানুষের মাঝে এই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এমন অবস্থায় যদি কারও মাঝে সংক্রমণ শনাক্তও হয়ে থাকে তবে সেটির মাত্রা কম হবে। অর্থাৎ মৃত্যুঝুঁকি কিন্তু অনেকেরই কমে আসবে। ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তিদের কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির হারও কমে আসে।’
তিনি বলেন, ‘যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি তাদের মাঝে অ্যান্টিবডির মাত্রা কম দেখা যাচ্ছে। কারণ বিবেচনা করতে গেলে দেখা যায়, বয়স নিজেই কিন্তু একটি রোগ। সেক্ষেত্রে বার্ধক্যের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। সেই হিসেবে বয়ষ্কদের মাঝে অ্যান্টিবডি একটু কম তৈরি হচ্ছে। কিন্তু যতটুকু তৈরি হচ্ছে তাতেও যদি কেউ তীব্র মাত্রায় সংক্রমিত হয়ে থাকে তবে মৃত্যু ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যাবে। এক্ষেত্রে যেহেতু যাদের বয়স অপেক্ষাকৃত বেশি তাদের মাঝে অ্যান্টিবডির মাত্রা কম পাওয়া যাচ্ছে। তাই ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমেও কিছুটা পরিকল্পনা আনা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যে গবেষণাটি করেছি সেটি আসলে আরও বড় আকারে করা যেতে পারে। আর এ ধরণের গবেষণার ফলাফল কিন্তু মানুষকে ভ্যাকসিন নেওয়ায় উৎসাহ দেবে। মহামারিকালে এটি খুবই জরুরি। তাই আমরা সামনের দিনগুলোতেও আমাদের গবেষণা ও তথ্য পর্যালোচনার কাজ চালিয়ে যাব।’
গবেষক দল সম্পূর্ণ কাজ শেষ করে দ্রুতই জার্নালে তাদের গবেষণা প্রকাশ করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন ডা. আশরাফুল।
এর আগে, গত ২৭ জানুয়ারি দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। ওইদিন মোট ২৬ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।
পরদিন ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালে ভ্যাকসিন দেওয়া হয় ৫৪১ জনকে। এই ৫৬৭ জনকে ১০ দিন পর্যবেক্ষণের পর ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি শুরু হয়। ওইদিন ৩১ হাজার ১৬০ জন ভ্যাকসিন নেন।
দেশে এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৯ জন। এর মাঝে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জন। ২৪ মে পর্যন্ত দেশে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪০ লাখ ৫০ হাজার ৩৭৫ জন।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম
২ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন অ্যান্টিবডি করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিন