পুলিশের ‘ম্যাজিক্যাল’ ভূমিকায় চমৎকৃত পরীমনি
১৫ জুন ২০২১ ১৯:৪৩
ঢাকা: ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়িকা পরীমনির ধর্ষণের ও হত্যাচেষ্টার শিকার হওয়ার ঘটনা ফেসবুক স্ট্যাটাসে ও সংবাদ সম্মেলন করে জানানোর পর পুলিশ অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যেই মামলা নিয়েছে। আসামিদেরও গ্রেফতার করেছে মামলা নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। পুলিশের এই ভূমিকাকে ‘ম্যাজিক্যাল’ বলে অভিহিত করছেন পরীমনি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেফতারের ঘটনায় চমৎকৃত পরীমনি পুলিশকে আন্তরিক ধন্যবাদও জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৫ জুন) সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে মিন্টো রোডের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ের গেটে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন পরীমনি। এর আগে, বিকেল ৪টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে আসেন তিনি।
ডিবি কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকরা ঘিরে ধরলে পরীমনি বলেন, আমাকে যারা নির্যাতন করেছে, তাদের গ্রেফতারে পুলিশের ভূমিকা ছিল ম্যাজিক্যাল। ভাবতেই পারিনি যে তারা এত তাড়াতাড়ি গ্রেফতার হবে। ঘুমাতেও পারলাম না, তার আগেই আসামিরা গ্রেফতার হয়ে গেল! সেটাই ঘটলো! এখন সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে যেন আসামিদের শাস্তি হয়, সেটাই আশা করছি।
আরও পড়ুন-
- ‘আমি সুইসাইড করার মেয়ে না’
- অমির বাসায় লুকিয়ে ছিলেন নাসির
- ভয়ংকর সে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন পরীমনি
- পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহার আদালতে
- ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন পরীমণি
- পরীমণি সম্পর্কে সোহানের আপত্তিকর মন্তব্য , সমালোচনার ঝড়
- পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা: ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনসহ গ্রেফতার ৫
- পরীমনির মামলার আসামি নাসির-অমি মাদকের মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে
বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদকে ধন্যবাদ জানিয়ে পরীমনি বলেন, ঘটনার পর আমি থানায় গিয়েছি। সেখান থেকে ফেরার পর শিল্পী সমিতিতে গিয়েছে। জায়েদ খানকে বলেছি, আমি আইজিপি বেনজীর আহমেদের কাছে যেতে চাই। আমি একটি মামলা করতে চাই। সেটি আইজিপি স্যার ছাড়া হচ্ছে না। স্যারের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করো। এরপর আমি সংবাদ সম্মেলনে আসি। আইজিপি স্যার জানার পরপরই তড়িৎ গতিতে ব্যবস্থা নিয়েছেন। আসামিরা গ্রেফতার হয়েছেন। আমি জানতাম তিনি একমাত্র ভরসার জায়গা। এজন্যই আমি বারবার তার কাছে পৌঁছাতে চেয়েছি। ধন্যবাদ আইজিপিকে।
পুলিশের সহযোগিতার কথা জানিয়ে এই তারকা অভিনেত্রী বলেন, হারুন স্যার (ঢাকা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ) বলেছেন, দ্রুত গতিতে আসামিদের গ্রেফতার করেছেন। তারা আমাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সহযোগিতা করছেন। আমি কাজে ফিরতে চাই। সে বিষয়েও সহযোগিতা পাচ্ছি।
ঘটনার পরই ঘটনাস্থল আশুলিয়া এলাকা থেকে ফিরে বনানী থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছিলেন পরীমনি। তবে ওই সময় পরীমনি অপ্রকৃতস্থ অবস্থায় ছিলেন বলেও জানিয়েছিল পুলিশ। এ বিষয়েও পরীমনির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
জবাব পরীমনি বলেন, আমি কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে বলেছি, আমাকে জোর করে মদ খাওয়ানো হয়েছিল। মামলার এজাহারেও সে কথা বলা হয়েছে। আর পুলিশ আমাকে সহযোগিতা করেনি, সেটা আমি বলিনি। আমি অনেক জায়গায় গিয়েছি, কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাইনি। এটাই বলতে চেয়েছি।
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে দেশের বিনোদন জগতের অন্যতম শীর্ষ এই তারকা বলেন, আপনারা সঙ্গে ছিলেন, আপনাদের ধন্যবাদ। আমি কাজে ফিরতে চাই। আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমি সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
এর আগে, গত ৮ জুন রাতে আশুলিয়া এলাকার ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার শিকার হন পরীমনি। সেদিন রাতে পরীমনি তার বনানীর বাসা থেকে বোন বনি, কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ও তার বন্ধু অমির সঙ্গে গাড়ি করে উত্তরার দিকে রওনা দেন। পরীমনির অভিযোগ, অমি কৌশলে তাদের বোট ক্লাবে নিয়ে যান। সেখানে অমির সহযোগিতায় নাসির উদ্দিন মাহমুদ তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন এবং তাকে শারীরিকভাবেও জখম করেন।
আরও পড়ুন-
- কে এই ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন?
- অমির ফাঁদে পড়ে ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমনি
- নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে পরীমনির মামলা
- নাসিরসহ গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা করবে ডিবি
- ‘নাসিরকে রিমান্ডে নিলে উচ্চ মহলের কিছু কালোমুখের সন্ধান পাব’
- অবশেষে পরীমনির বাসায় পুলিশ, অভিযোগ পাঠানো হলো সাভার থানায়
এ ঘটনার চার দিন পর রোববার (১৩ জুন) রাতে পরীমনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট দিয়ে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার শিকার হওয়ার কথা জানান। এ ঘটনায় ন্যায় বিচার প্রার্থনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। পরে রাতেই তিনি বনানীর নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঘটনার পর তিনি বনানী থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলেও অভিযোগ নেওয়া হয়নি। এরপর তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনের বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কেউ সহায়তা করেননি। এ ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ায় তিনি প্রাণভয়ে ভীত বলেও জানান সাংবাদিকদের।
পরে রোববার দিবাগত রাতেই রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান সরদারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পরীমনির বাসায় যায়। পরীমনির অভিযোগের ঘটনাস্থল সাভার থানার অধীন হওয়ায় তার কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ নিয়ে সেই অভিযোগ সাভার থানার কাছে পৌঁছে দেয় রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সাভার থানায় মামলাটি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়ের হয়।
মামলায় নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তার বন্ধু তুহিন সিদ্দিকী অমির নাম উল্লেখ করে আরও চার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এরপর দুপুরেই অভিযান চালিয়ে নাসির উদ্দিন মাহমুদ, তুহিন সিদ্দিকী অমি ও তিন নারীকে উত্তরা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে মাদক উদ্ধার হলে বিমানবন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের হয়। এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত তাদের রিমান্ডে দিয়েছেন। পরীমনির দায়ের করা মামলাতেও পুলিশ রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছেন। মাদকের মামলার রিমান্ড শেষ হলেও ওই মামলার রিমান্ড শুনানি হবে আদালতে।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর