সোমবার থেকে সীমিত, বৃহস্পতিবার থেকে ‘কঠোর লকডাউন’
২৬ জুন ২০২১ ২২:২২
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড ১৯) এর প্রকোপ মোকাবিলায় সোমবার (২৮ জুন) থেকে সীমিত পরিসরে লকডাউন শুরু হবে। এর দুইদিন পর বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে সাতদিনের কঠোর লকডাউন শুরু হবে।
শনিবার (২৬ জুন) সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় এ সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার। তিনি সারাবাংলাকে জানান, সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। এ সময় সবকিছু সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। তবে সোমবার থেকে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে রোববার (২৭ জুন) দুপুরে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। কিন্তু কঠোর লকডাউন বৃহস্পতিবার ( ১ জুলাই) থেকে। ১ জুলাই থেকে পরবর্তী সাতদিন কোনো কিছু চলবে না।
সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত থেকেছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সোমবার থেকে সীমিত পরিসরে লকডাউন শুরু হবে। এই সময় থেকে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাবে। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। এ ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানও সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে।
এর আগে, শুক্রবার প্রধান তথ্য কর্মকর্তা জানান, সোমবার থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হবে। সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, জরুরি পণ্যবাহী ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। শুধু অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসাসংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত যানবাহন চলাচল করতে পারবে। জরুরি কারণ ছাড়া বাড়ির বাইরে কেউ বের হতে পারবে না। তবে গণমাধ্যম এর আওতামুক্ত থাকবে।
ওইদিন রাতে একই বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘২৮ তারিখ থেকে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ দেব। এরপর প্রয়োজন হলে সেটা আমরা বাড়াব। এটা কঠোরভাবে সবাই যেন প্রতিপালন করে সে জন্য নজর রাখা হবে। লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ-বিজিবি থাকবে। পুলিশ-বিজিবির পাশাপাশি মাঠে সেনাবাহিনীও থাকতে পারে। তবে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার কঠোর লকডাউন শুরু হবে।
এর আগে মার্চ থেকে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকলে ৫ এপ্রিল থেকে সারাদেশে নানা ধরনের বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ১৪ এপ্রিল থেকে ঘোষণা করা হয় কঠোর লকডাউন। এর আওতায় গণপরিবহন, দোকানপাট, শপিং মল, হোটেল-রেস্তোরাঁ সবই বন্ধ ছিল। তবে পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়, খুলে দেওয়া হয় দোকানপাট ও শপিং মল এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ। বলতে গেলে ধীরে ধীরে প্রায় সব বিধিনিষেধই তুলে নেওয়া হয়।
সবশেষ গত ১৬ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক নির্দেশনায় বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানো হয় ১৫ জুলাই পর্যন্ত। তবে এবারে সব ধরনের সরকারি, বেসরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। দেশের সব পর্যটনকেন্দ্র এবং সামাজিক-রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অর্থাৎ জনসমাগম হয় এমন অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার আগের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।
এর মধ্যে অবশ্য করোনা সংক্রমণের হার ব্যাপক হারে ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ২২ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ঢাকা বিভাগের সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। লকডাউনের আওতায় থাকা জেলাগুলো হলো—নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, রাজবাড়ি, গাজীপুর ও গোপালগঞ্জ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকা বিভাগের সাত জেলায় সব ধরনের কার্যক্রম ও জনসাধারণের চলাচল ২২ জুন সকাল ৬টা থেকে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
এ ছাড়া সীমান্তবর্তী অনেক জেলায় যেখানে সংক্রমণ বেশি সে সব স্থানে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা রয়েছে। এতো কিছুর পরেও সংক্রমষ কমে না আসায় সারাদেশে শাটডাউন ঘোষণা করার সুপারিশ করেছিলো কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
সারাবাংলা/জেআর/একে