অবসায়ন নয়, পিপলস লিজিং পুনর্গঠনের নির্দেশ
২৮ জুন ২০২১ ১৬:৫৮
ঢাকা: বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডকে অবসায়ন না করে তা পুনর্গঠন বা পুনরুজ্জীবিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পিপল লিজিং পুনর্গঠন বা পুনরুজ্জীবিত করতে পরিচালনা পর্ষদ (বোর্ড) গঠন করে দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২৮ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডকে পুনর্গঠন বা পুনরুজ্জীবিত করা হবে কিনা- এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পক্ষে আইনজীবীদের মতামত শোনেন আদালত।
আদালতে ২০১ জন আমানতকারীর আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহসানুল করিম। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তানজীব-উল আলম। আর পিএলএফএসএলের সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মেজবাহুর রহমান শুভ।
আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে আইনজী মেজবাহুর রহমান শুভ বলেন, ‘আদালত পিপল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডকে অবসায়ন না করে তা পুনরুজ্জীবিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। পিপল লিজিং পুনরুজ্জীবিত করে এটি পরিচালনার জন্য একটি পরিচালনা পর্ষদ (বোর্ড) গঠন করে দেওয়া হবে। ওই বোর্ডে কারা কারা থাকবে তাও আদালত মনোনীত করে দেবেন।’
গত সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটির পুনর্গঠন বা পুনরুজ্জীবিত করার নির্দেশনা চেয়ে ২০১ জন আমানতকারী হাইকোর্টে আবেদন করেন।
আরও পড়ুন
• পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেমসহ ৩ জনকে তলব
• মাসে খরচ ১৫ লাখ, ১০ মাসে ‘আদায় হয়নি’ পিপলস লিজিংয়ের ১ টাকাও
• পিপলস লিজিংয়ের আর্থিক প্রতিবেদন আমলে নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক
• পিপলস লিজিংয়ে আটকে রয়েছে গ্রাহকের ২ হাজার কোটি টাকা
• পিপলস লিজিংয়ের ১২২ ঋণ খেলাপির বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা
• পিপলস লিজিংয়ের পরিচালকদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
• পিপলস লিজিংয়ের খেলাপি ২৮০ ব্যক্তিকে হাইকোর্টে তলব
আবেদনে বলা হয়, আইন অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের কোনো বিধান নেই। তবে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একীভূত করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের একটি পরিকল্পনা বাংলাদেশ ব্যাংক নিতে পারে। পিএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হলে আমানতকারীদের ক্ষতির বোঝা আরও বাড়বে।
পরে আইনজীবী আহসানুল করিম জানান, আদালত পিপলস লিজিংকে অবসায়ন না করার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। একে পুনরুজ্জীবিত করতে একটি বোর্ড গঠন করে দেবেন। সে বোর্ড কার নেতৃত্বে হবে, কে কে থাকবেন তা পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন আদালত।
গত ২১ জানুয়ারি পিএলএফএসএল থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন, এমন ২৮৬ জন ঋণ গ্রহীতাকে তলব করেন হাইকোর্ট। সাময়িক অবসায়ক আসাদুজ্জামান খানের দেওয়া তালিকা দেখার পর সেদিন এ আদেশ দেন উচ্চ আদালত।
ওই দিনের আদেশে আদালত ২৮৬ জনকে দুই ভাগে হাজির হতে দিন নির্ধারণ করে দেন। তাদের মধ্যে ১২২ ঋণ খেলাপি নির্ধারিত তারিখে আদালতে হাজির হননি।
এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধে সমন্বিতভাবে কীভাবে কাজ করা যায়, সে বিষয়ে গত ৯ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের বক্তব্য শোনেন আদালত। তাদের বক্তব্য শোনার পর তলবে হাজির না হওয়া ১২২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
ওই আদেশে বলা হয়, পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত তারা যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সে জন্য সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সতর্ক এবং সজাগ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
এদিকে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামানকে ওই ১২২ ব্যক্তি বা সত্তার বর্তমান ঠিকানা সরবরাহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিতে বলা হয় তাকে।
১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস লিজিংকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে মেয়াদি আমানত ও বিভিন্ন ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।
২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে লোকসান দিয়ে আসছিল কোম্পানিটি। খেলাপি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করতে না পারায় আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারেনি তারা। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিনই মামলার শুনানি শেষে অবসায়নের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন আদালত।
এ ছাড়া অবসায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার একজনকে অবসায়ক নিয়োগ দিতে বললে উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান খানকে নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে