Sunday 20 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাওয়া ফেরিঘাটে গ্রামমুখী মানুষের ভিড়

হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটোকরেসপন্ডেন্ট
৩০ জুন ২০২১ ১৭:০১

মাওয়া ফেরিঘাট থেকে: আবীদ আলী। পেশায় একজন শ্রমিক। কাজ করেন যাত্রাবাড়ী আড়তে। কঠোর বিধি-নিষেধে বন্ধ থাকবে আড়ৎ। টানা সাত দিন কর্মহীন থাকতে হবে তাকে। তাই কঠোর বিধি-নিষেধের আগের দিন বুধবার (৩০ জুন) সকালে নিজ জেলা বাগেরহাটের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। সকাল ১০ টায় মাওয়া ঘাটে ফেরিতে ওঠার আগে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তার।

প্রচণ্ড ভিড় ঠেলে ফেরিতে ওঠার সময় সারাবাংলাকে আবীদ আলী বলেন, ‘আমার বাড়ি বাগেরহাট। আমি প্রতিদিন ভোর রাত থেকে সকাল ১০/১১ টা পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী আড়তে মাল উঠানো-নামানোর কাজ করতাম। লকডাউনের মধ্যে নাকি ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। তাহলে ঢাকা থেকে আর কী করব। তাই গ্রামে চলে যাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

গ্রামেও তো করোনা, সেখানে গিয়ে কী করবেন?— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেখানে গিয়ে কী করব, সেটা তো এখনো ভেবে দেখি নাই। আগে যেয়ে দেখি কী করা যায়। পরিবারের সবাই তো গ্রামেই থাকে। ক’টা দিন তাদের সাথে থেকে আসি।’

শুধু আবীদ আলী নয়, সাত দিনের কঠোর লকডাউনের ঘোষণা আসার পর থেকেই গত কয়েক দিন ধরে হাজার হাজার মানুষ মাওয়া ফেরিঘাট হয়ে দেশের পশ্চিম-দক্ষিণ অঞ্চলে ছুটছেন। এদের বেশির ভাগই ঢাকার নিম্ন আয়ের মানুষ। এদের কেউ দিনমজুর, কেউ ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কেউ কলকারখানা, শপিং মল ও দোকান-পাটের শ্রমিক। যেহেতু কঠোর বিধিনিষেধের সাতদিন প্রায় সব কিছু বন্ধ থাকবে, তাই নিম্ন আয় এবং ‘দিন আনে দিন খায়’ শ্রেণির এসব মানুষ স্রোতের মতো গ্রামের দিকে ছুটছেন। ফলে ঢাকা থেকে গ্রামে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ রুট মুন্সিগঞ্জ ফেরিঘাটে যথারীতি সৃষ্টি হয়েছে জনজট।

সঙ্গত কারণেই এত মানুষের ভিড়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই সেখানে। দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়ে কেবলমাত্র পণ্যবাহী পরিবহন পারাপারের জন্য যে সীমিত সংখ্যক ফেরি চালু রাখা হয়েছে, সেগুলোতেই গাদাগাদি করে পদ্মাপার হচ্ছেন যাত্রীরা। সাধারণ যাত্রীদের সাথে চাপাচাপি করে নারী, শিশু, বৃদ্ধরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন প্রমত্মা পদ্মা।

বিজ্ঞাপন

কথা হয় বিআইডব্লিউটিএ’র টিসি বশির আহমেদ’র সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পরিবহন এবং মানুষের চাপে আমাদের ফেরি লোড-আনলোড করতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। আর মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নাই। আমরা চেষ্টা করেও মানুষের চাপ সামলাতে পারছি না। সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে ঢাকা থেকে মাওয়াঘাটে পৌঁছানো সাধারণ যাত্রীদের সাথে মোটামুটি ভালো ব্যবহার করার চেষ্টা করছে ঘাট কর্তৃপক্ষ।’

নৌ পুলিশের মাওয়াঘাট ইনচার্জ সিরাজুল কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘সকাল থেকেই মানুষের মারাত্মক চাপ। আমরা চেষ্টা করছি মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধির সচেতনতা তৈরি করতে এবং নিরাপদে ফেরিতে তুলে দিতে। কেউ যেন কোনো দুর্ঘটনায় না পড়ে যে জন্য আমারা কাজ করছি।’

কথা হয় গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেওয়া সুফিয়া বেগমের সঙ্গে। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘স্বামী-সন্তান নিয়ে মিরপুরে থাকি। ফুটপাতে ছোট চায়ের দোকান সংসারে একমাত্র আয়ের উৎস। লকডাউনের কারণে ওই দোকান আর চালানো যাবে না। ঢাকা থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। তাই গ্রামের বাড়িতে চলে যাচ্ছি।’

গাড়ির হেলপার সুমন শেখও গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের উদ্দেশে ফেরিতে উঠেছেন। ফেরিতে দাঁড়িয়েই কথা হয় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘লকডাউন এলেই সবার আগে বন্ধ হয় গণপরিবহন। অন্যরা কিছু করে খেতে পারলেও আমরাদের সেই সুযোগ নাই। সে কারণেই গ্রামে চলে যাচ্ছি। লকডাউন যে ক’দিন থাকবে, সে ক’দিন গ্রামেই থাকতে হবে।’

সারাবাংলা/এইচআর/এজেড/পিটিএম

গ্রামমুখী মানুষ টপ নিউজ মাওয়া ফেরিঘাট

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর