গণবদলিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া, চমেকের কোভিড ল্যাব বন্ধের আশঙ্কা
৬ জুলাই ২০২১ ২১:২৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনাভাইরাস মহামারির ব্যাপক সংক্রমণের মধ্যেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের আকস্মিক গণবদলিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামের চিকিৎসকদের সংগঠনের নেতারা এর প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। এদিকে গণবদলির কারণে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আরটিপিসিআর ল্যাবে কোভিড–১৯ নমুনা পরীক্ষায় সংকট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সোমবার (৫ জুলাই) স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে জারি করা আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপনে প্রায় এক হাজার ২০০ চিকিৎসককে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালের করোনা ইউনিটে পদায়ন করা হয়। বুধবারের (৭ জুলাই) মধ্যে তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগদানের আদেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় এসব চিকিৎসককে বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত হিসেবে গণ্য করা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
গণবদলিতে চমেকের ১৫৬ শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে মাইক্রোবায়োলজি, মেডিসিন, হৃদরোগ, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি, সার্জারি, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগসহ সব বিভাগের চিকিৎসক আছেন। চমেকে ৩০০ জনের মতো চিকিৎসকের অর্ধেকর বেশি বদলি করা হয়েছে।
গণবদলির আদেশ শুনে চিকিৎসক নেতারা মঙ্গলবার (৬ জুলাই) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভিড় করেন। দিনভর চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এই বদলি ছিল আলোচনার বিষয়।
হাসপাতালে উপস্থিত বিএমএ চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ ফয়সল ইকবাল চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই বদলির আদেশটা দেখলে বোঝা যায় এটা অপরিকল্পিত এবং খুবই কাঁচা হাতের কাজ। এটা করার আগে কোনো হাসপাতালে চিকিৎসকের স্বল্পতা আছে কি না বা পদ খালি আছে কি না সেটা দেখা দরকার ছিল। তারপর সেই হাসপাতালের চাহিদা অনুযায়ী পদায়ন করা দরকার ছিল। অথচ এখন একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এত চিকিৎসককে একযোগে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। নিউরোমেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক, ডেন্টালের শিক্ষককে বদলি করে করোনা ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। তারা সেখানে কীভাবে চিকিৎসা করবেন।’
‘আজকের (মঙ্গলবার) পরিস্থিতি যদি বলি, চমেক হাসপাতালে আড়াই হাজার রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে মাত্র ২০০ রোগী কোভিড আক্রান্ত। তাহলে বাকি ২৩০০ রোগীর চিকিৎসা কী হবে না? আর যারা বদলি আদেশ দিয়েছেন শিক্ষকদের কাজ সম্পর্কে তাদের বিন্দুমাত্র ধারণা আছে বলে আমার মনে হয় না। শিক্ষকরা কলেজে পড়ান, আবার হাসপাতালে চিকিৎসা দেন। এত শিক্ষককে একযোগে বদলি করার কারণে কলেজে পাঠদানে সংকট হবে। অনলাইন ক্লাস বন্ধ হয়ে যাবে। কোভিড ল্যাবের প্রধানকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্ত’— বলেন ফয়সল ইকবাল।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিদ্যমান চিকিৎসক দিয়ে চমেক হাসপাতালে কোভিডের চিকিৎসা এবং অন্যান্য রোগের চিকিৎসা তো সুন্দরভাবে চলছে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকের কোনো সংকট নেই। বিআইটিআইডিতেও কোভিডের চিকিৎসায় কোনো সমস্যা নেই। তাহলে এতগুলো চিকিৎসককে চমেক হাসপাতাল থেকে বদলি করে জেনারেল হাসপাতাল আর বিআইটিআিইডিতে কেন দেওয়া হচ্ছে? এতে তো সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থায়ও একটা সংকট তৈরি হবে। অন্যদিকে চমেক হাসপাতালেও চিকিৎসা ব্যাহত হবে। আর চলমান লকডাউনের মধ্যে এত দূরদূরান্তে গিয়ে চিকিৎসরা কীভাবে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগ দেবেন সেটা ভেবে দেখার দরকার ছিল। আমরা এই বদলির আদেশ পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করছি।’
এদিকে চমেকের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ছয় শিক্ষককে বিভিন্ন জায়গায় সংযুক্তিতে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। এতে চমেকের ল্যাবে কোভিড টেস্টে সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বদলি হওয়া ছয়জন হলেন- কোভিড শনাক্তকরণ ল্যাব আরটিপিসিআর তত্ত্বাবধান কমিটির আহ্বায়ক মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান আবুল কালামকে বিআইটিআইডিতে, সদস্য সচিব আরিফুর রহমানকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সদস্য সাবরিনা শারমিনকে ফেনীর দাগনভূঁইয়ায় বদলি করা হয়েছে। একই বিভাগের আ ন ম সাইফুল করিমকে বিআইটিআইডিতে, জাহানারা রোজীকে চমেকের কোভিড বিভাগে এবং আফরিন সুলতানাকে খাগড়াছড়িতে বদলি করা হয়েছে। ছয়জনের মধ্যে চারজনই এমফিল ডিগ্রিধারী।
বদলির পর বর্তমানে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে চারজন শিক্ষক কর্মরত আছেন। তাদের মাধ্যমে আরটিপিসিআর ল্যাব এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের কার্যক্রম আগের মতো চলমান রাখা নিয়ে শঙ্কায় আছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় চমেকের অধ্যক্ষ বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।
জানতে চাইলে চমেক অধ্যক্ষ শাহেনা আকতার বলেন, ‘কোভিড মোকাবিলা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে অনলাইনে পাঠদান, অন্যান্য রোগীদের চিকিসাও আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে আরটিপিসিআর ল্যাবের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। বিভাগের কার্যক্রম সুন্দরভাবে চলমান রাখতে যাদের বেশি প্রয়োজন তাদের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করেছি।’
জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। আশা করছি হাসপাতালের সেবায় বিঘ্ন হবে না।’
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম