খুনের পর বাকপ্রতিবন্ধীর ‘চোর-পুলিশ খেলা’
১৯ জুলাই ২০২১ ১৯:৪৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের মীরসরাই ইকোনমিক জোনে নির্মাণাধীন একটি কারখানার শ্রমিককে খুনের ১০ দিন পর জড়িত একমাত্র ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার ব্যক্তি বাকপ্রতিবন্ধী। শিল্পজোনের ভেতরে তিনি ইয়াবা বিক্রি করতেন। ইয়াবা বিক্রির পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে ওই শ্রমিককে খুন করা হয়েছে।
খুনের ঘটনায় রোববার (১৮ জুলাই) রাতে গ্রেফতারের পর বাকপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি পুলিশকে বিভ্রান্ত করে নিরীহ দু’জনকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেফতার মো. শফিক বশর (২৯) মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার ইছাখালী ইউনিয়নের শাহাজীবাজার এলাকার মো. খোরশেদ আলমের ছেলে।
খুন হওয়া মো. মনিরের (২৫) বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলায়। তিনি জোরারগঞ্জ থানার মীরসরাই ইকোনমিক জোনে নির্মাণাধীন মডার্ণ সিনট্যাক্স কারখানার শ্রমিক ছিলেন। পাঁচ মাস আগে কাজে যোগ দেওয়া মনিরের লাশ গত ৮ জুলাই সন্ধ্যায় কারখানার পাশ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তার আগে তিনি ৩৬ ঘণ্টা ধরে নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনায় মনিরের ভাই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
জোরারগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুহম্মদ হেলাল উদ্দিন ফারুকী সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, একই কারখানায় কাজ করা ভাতিজা ইমনের মোবাইল ব্যবহার করতেন মনির। তাকে খুনের পর মোবাইলটি নিয়ে যায় খুনি। সেই মোবাইলের সূত্র ধরে শফিককে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে।
‘শ্রমিক মনির কারখানায় কাজে যোগ দেওয়ার পর ইয়াবা আসক্ত হয়ে পড়েন। শফিকের কাছ থেকে ইয়াবা কিনে সেবন করতেন। এভাবে মনিরের কাছে শফিকের পাওনা জমে পাঁচ হাজার টাকা। গত ৮ জুলাই আবার ইয়াবা নিয়ে টাকা না দিয়ে চলে যাবার সময় বাকপ্রতিবন্ধী শফিক পেছন থেকে তার শার্ট টেনে ধরে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মনির তাকে ঘুষি মারে। তখন বদমেজাজি শফিক তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় এবং গলা টিপে খুন করে। লাশ শনাক্ত করতে যাতে সমস্যা হয় সেজন্য মনিরের মুখে কাঁদা মেখে দেয়। পরে মনিরের মোবাইল নিয়ে চলে যায়।’
পুলিশ পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন জানান, শফিক মোবাইলটি স্থানীয় নাছির সওদাগরের কাছে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করে। নাছির সেটি আবার আট হাজার টাকায় আরেকজনের কাছে বিক্রি করেন। পুলিশ প্রথমে নাছিরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। নাছির জানান, তিনি বাকপ্রতিবন্ধী শফিকের কাছ থেকে মোবাইলটি কিনে আরেকজনের কাছে বিক্রি করেছেন। পুলিশ দ্বিতীয় ক্রেতার খোঁজে অভিযান চালায়। কিন্তু তাকে পাওয়া না গেলেও ঘরে তল্লাশি করে মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়।
‘এরপর গতকাল রোববার রাতে আমরা শফিককে আটক করি। সন্দেহের তীর যাতে তার দিকে না যায় সেজন্য সে নিখুঁত অভিনয় করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকারী হিসেবে দু’জনকে শনাক্ত করে। একজনকে আটক করে শফিকের মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আরেকজনকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু দেখা গেছে, শফিকের তথ্য মিথ্যা। আরও জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শফিক স্বীকার করে সে’ই খুন করেছে মনিরকে। যে দু’জনের কথা সে বলেছিল, তাদের কাছে আগে মারধরের শিকার হয়েছে শফিক। এর প্রতিশোধ নিতেই তাদের ফাঁসিয়ে দেওয়ার নিখুঁত পরিকল্পনা করেছিল সে।’
গ্রেফতার শফিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনের কয়েকজন সদস্যের সহযোগিতায় আজ (সোমবার) হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন বলে জানান পুলিশ পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ফারুকী।
সারাবাংলা/আরডি/এনএস
ইয়াবা বিক্রি বাকপ্রতিবন্ধীর ‘চোর-পুলিশ খেলা’ মীরসরাই ইকোনমিক জোন শ্রমিককে খুন