Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ডাক্তার’ নাম দিয়ে ফেসবুকে প্রতারণা


১ এপ্রিল ২০১৮ ১০:৫৭

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ‘ডাক্তার’ নাম দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসকরা বোলছেন, ডাক্তার নাম দিয়ে এসব ফেসবুক আইডি এবং পেইজ থেকে কেবল প্রতারণাই করা হচ্ছে। এর সঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং চিকিৎসকদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সাধারণ মানুষ এসব আইডি-পেইজ থেকে কোনো ধরনের চিকিৎসা পরামর্শও পাচ্ছেন না। এসবের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই সময়।

বিজ্ঞাপন

ফেসবুক পেইজে দেখা যায়, ডাক্তার তানিয়া, ডাক্তার তানিয়া আক্তার, ডাক্তার ফারহানা সরকার, ডাক্তার সুমাইয়া পাখি, ডাক্তার ফারহানা সুলতানা, ডাক্তার সুমা হোসাইন, ডাক্তার সুমানা চৌধুরী, ডাক্তার ও চিকিৎসা কেন্দ্র, ডাক্তার তানিয়া, ডাক্তার তানিয়া (কিউট পুলা), নামে ফেসবুক আইডিগুলোতে ৪৫ হাজার, এক লাখ ৫১ হাজার, ৩ লাখ ২২ হাজার, ১৭ হাজার, ৪৭ হাজারের মতো লাইক রয়েছে।

ফলোয়ারদের কয়েকজন সারাবাংলাকে জানান, ‘ডাক্তার’ নামধারী এসব ফেসবুক আইডি এবং পেইজগুলো ঘুরে বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাননি তারা। প্রতিটিতে কেবল সেক্সচুয়াল নানা ডিজঅর্ডার সংক্রান্ত তথ্য, নানা ধরনের অনৈতিক ভরা। পোস্টগুলোতে পেইজের অ্যাডমিন কিংবা আইডির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর দেওয়া থাকে।

তারা বলছেন, এই সব ভুয়া আইডি থেকে যেসব পোস্ট করা হচ্ছে বা যেসব পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে- তা যদি কারও উপকারে আসত তাহলে সমস্যা হত না। একদিকে এগুলো যেমন বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, অন্যদিকে তৈরি করছে নানা বিতর্কের। একেবারেই অবৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো পোস্ট করা হচ্ছে।

এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চিকিৎসকরা বলেন, ‘ডাক্তার তানিয়া’ নামে একটি ফেসবুক পেইজের লাইক ৩ লাখ ২২ হাজার। প্রথম এই ধরনের ভুয়া পেইজ যখন তৈরি করা হয় তার মধ্যে এটা একটি। সম্ভবত এটাই প্রথম, পরে আরও পেইজ হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাসকুল্যার সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাকলায়েন ফেসবুকের কয়েকটি ভুয়া আইডি শেয়ার করে লিখেছেন, এই ভুয়া পেইজগুলো থেকে প্রতিনিয়ত বাজে পোস্ট দিয়ে সাধারণ মানুষদের প্রতারিত করা হচ্ছে। এই ফেইক, প্রতারক, ধান্দবাজরা কেউই ডাক্তার না। এদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

ডা. সাকলায়েন সারাবাংলাকে বলেন, মূলত মানুষের সাইকো সেক্সচুয়াল ডিজঅর্ডার এবং ধর্মীয় বিষয় নিয়েই আইডিগুলোতে লেখা হচ্ছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সবাই যে সচেতন তাতো নয়। তারা ধরেই নিচ্ছেন একজন ডাক্তার যখন বলেছেন, তখন নিশ্চয় ঠিক বলেছেন। সবচেয়ে বড় সমস্যা মানুষ ভুল চিকিৎসা শিকার হচ্ছে এবং ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত হচ্ছে- এটা সরাসরি প্রতারণা।

পোস্টগুলোতে যৌন উত্তেজক নানা গল্প তুলে দেওয়া থাকে, কেননা  লাইক, কমেন্ট, শেয়ার বাড়লে অ্যাডসেন্সের সুবিধা পাওয়া যাবে। তাই ওদের ওদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিভ্রান্তিমূলক নানা জিনিস প্রচার করে ফলোয়ার বাড়ানো, যা চিকিৎসক সমাজের জন্য ক্ষতিকর আর সমাজের জন্য বড় হুমকি বলেন ডা. সাকলায়েন।

“এমনিতেই চিকিৎসা শাস্ত্রের বিষয়গুলো বেশ কঠিন, চিকিৎসাও বেশ জটিল। সামান্য ভুল হলে প্রতিক্রিয়া হিসেবে আরেকটা রোগের সৃষ্টি হতে পারে। অথচ তারা বর্বরের মতো ডাক্তার নাম নিয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভবও নয়- তারা ভুল তথ্য দিচ্ছে।”

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রাশেদুল হাসান কয়েকটি ফেসবুক আইডি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘ডাক্তার তানিয়া সুলতানা’ নামে পেইজে লাইক দিয়েছেন ৭ লাখ মানুষ। এসব ভুয়া পেইজেও এত লাইক। আজব এক বাংলাদেশ!

তিনি আরও লেখেন, ফেসবুকে কীভাবে গুজব ছড়ানো হয় এই পেইজে গেলেই দেখতে পাবেন। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাব এই পেইজ এবং এ রকম যত পেইজ আছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। জনগণকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাইবার ক্রাইম করছে এরা।

এসব ফেইক আইডি এবং পেইজ-এর বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসি’র সচিব ও মুখপাত্র সরওয়ার আলম বলেন, কিছু আইনগত সার্পোট আমাদের থাকলেও সেভাবে আইনগত ব্যবস্থা আমরা নিতে পারি না। আমরা কোনো তদন্ত সংস্থাও না আবার কোনো এক্সিকিউটিভ অথারিটিও না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেমন পুলিশ বা গোয়েন্দাসংস্থাগুলো যখন আমাদের বলে তখন আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।

সারাবংলা/জেএ/এটি

ফেসবুকে প্রতারণা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর