ঢাকা: কিছু তথাকথিত সেলিব্রেটি সমাজে অপসংস্কৃতি ছড়াচ্ছে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ড দিয়ে তরুণ সমাজ ও জাতিকে তারা বিভ্রান্ত করছে। তাদের মুখোশ উন্মোচনে কঠোর অভিযান চলছে। অসামাজিক কর্মকান্ড প্রতিরোধে যে অভিযান চলছে তা চলমান থাকবে। সরকার এই ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
বৃহস্পতিবার ( ৫ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩ তম জন্মদিনের আলোচনা সভায় নেতারা এ সব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এ আলোচনা সভায় আয়োজন করে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘দেশের কিছু তথাকথিত সেলিব্রেটি সমাজে অপসংস্কৃতি ছড়াচ্ছে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ড দিয়ে তরুণ সমাজ ও জাতিকে তারা বিভ্রান্ত করছে। তাদের মুখোশ উন্মোচনে কঠোর অভিযান চলছে। অপসংস্কৃতি রোধে এ অভিযান চলমান থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে যুবসমাজের অবক্ষয় ও অপসংস্কৃতিরোধে শহীদ শেখ কামালের আদর্শ ও চেতনাকে তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। শেখ কামাল ছিলেন অনন্য ক্রীড়া সংগঠক, যিনি খেলাধুলায় নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে বিভিন্ন খেলায় অনন্য উচ্চতায় পৌঁছতে পারত।’
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী শেখ কামাল ছিলেন অত্যন্ত সৃজনশীল ও সংস্কৃতি অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র। সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘স্পন্দন’ গঠন করেছিলেন। একাধারে তিনি ছিলেন রাজনৈতিকভাবে সচেতন ও দেশপ্রেমিক। তিনি ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তার আদর্শ ও চেতনা ধারণের জন্য দেশের তরুণ যুবসমাজকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। তার আদর্শে তরুণদের খেলাধূলায়, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবীত করতে হবে। এটি করতে পারলে অবক্ষয় ও অপসংস্কৃতি রোধ করে দেশের তরুণসমাজকে আদর্শবান করে গড়ে তোলা যাবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে, ‘ভুঁইফোড় সংগঠনের কোনো জায়গা আওয়ামী লীগে নেই’ এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে কৃষিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ন্যায় ও সততার পথে থেকে দল করতে হবে। এটিই আওয়ামী লীগের ভিত্তি। যে দল একটি দেশ গঠন করেছে, সারা পৃথিবীর বুকে একটি নতুন জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে, যে দল প্রতিষ্ঠার পর থেকে সব আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে সেই দলে ভুঁইফোড় সংগঠনের কোনো জায়গা নেই।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি চলে বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে। বেগম খালেদা জিয়া নির্দেশ দিলে আজকে অমুকে দলের মহাসচিব, কালকে নাও থাকতে পারে। এরশাদ চিঠি দিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব নির্ধারণ করেছে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে কোনও গুলো আমাদের সহযোগী সংগঠন। গঠনতন্ত্রের বাহিরে চাকরিজীবী লীগ, প্রচার লীগ, প্রজন্ম লীগ থাকার সুযোগ নেই।’
আওয়ামী লীগের অনেক ঐতিহ্য রয়েছে, ভূঁইফোড় সংগঠন আওয়ামী লীগের গায়ে কালিমা লেপন করতে পারবে না বলেও যোগ করেন তিনি।
সাম্প্রতিক অসামাজিক কর্মকাণ্ডে যে অভিযান চলছে তা চলমান থাকবে। সরকার এই ব্যাপারে জিরো টলারেন্স বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমরা রক্ষা করতে পারিনি, এটি আমাদের ব্যর্থতা। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খুনিদের বিচার হয়েছে। কিন্ত ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলো তাদের ইতিহাস বাংলাদেশ মানুষের জানার অধিকার রয়েছে। এই ইতিহাস যতদিন না উন্মুক্ত হবে, বাংলাদেশের মানুষ পরিষ্কারভাবে জানতে না পারবে, ততদিন ষড়যন্ত্রকারী, সুবিধাবাদীদের অপতৎপরতা চলতেই থাকবে। এদের বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’
আগস্ট মাস আসলে নানামুখি ষড়যন্ত্র হয় জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যখনই আগস্ট আসে, তখনই ষড়যন্ত্রের ডালপালা গজাতে থাকে। যে কোনো মূল্যেই ষড়যন্ত্রকারীদের মূলোৎপাটন করতে হবে, শেকড় উপড়ে ফেলতে হবে। যেন বাঙালি জাতি গণতান্ত্রিক অধিকার, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সুবিধাবাধীদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। যারা সময় বুঝে মাথা জাগায়, দুঃসময়ে কচ্ছপের মতো লুকিয়ে বেড়ায় তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা শেখ কামালের মত সাহসী নেতা চাই। শেখ কামালের মতো সাহসী যোদ্ধা চাই। শেখ কামালের মত আদর্শবান মানুষ চাই। সৎ মানুষ চাই।’
সৎ-সাহসী মানুষের নেতৃত্বেই বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেও যোগ করেন আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল,যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহি, বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এফ এম শরিফুল ইসলাম,দফতর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ, উপ-দফতর আরিফুর রহমান রাসেলসহ অন্যরা।