ঝুলে আছে ভিকারুননিসার তদন্ত প্রতিবেদন
৭ আগস্ট ২০২১ ০০:১১
ঢাকা: ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজে গত কিছুদিন ধরে যে অচলাবস্থা চলছে, তার কারণ উদঘাটনে তদন্ত কমিটি করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত শুক্রবার (৩০ জুলাই) সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। এরপর আরও এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সে প্রতিবেদন এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তদন্ত কমিটির তিন দিন মেয়াদে কাজ শুরু করলেও বিভিন্ন কারণে সময় বাড়ানোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) বিভাগে আবেদন করেছে।
মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিকারুননিসা অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের প্রথম ফোনালাপটি ফাঁস হওয়ার পরই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এরপর দ্বিতীয় ফোনালাপটি ফাঁস হয়। ফলে তদন্তে কিছুটা বেশি সময়ের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়াও দুই পক্ষের এমন কিছু অভিযোগ রয়েছে যা তদন্ত করতে আরও সময়ের প্রয়োজন বলে মনে করছে কমিটি। সে কারণেই কমিটি বাড়তি সময় চেয়েছে তদন্তের জন্য।
আরও পড়ুন-
- পথ হারিয়েছে ভিকারুননিসা
- বালিশের নিচে পিস্তল রেখে ঘুমান ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ!
- আর্থিক অনিয়ম ও ভর্তি বাণিজ্যে ক্ষত বিক্ষত ভিকারুননিসা নূন
এদিকে, তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, দু’টি ফোনালাপকে বিবদমান পক্ষরা সুপার এডিট দাবি করেছে। যেটি তাদের পক্ষে গেছে সেটিকে তারা সঠিক বলছে, আর বিপক্ষে যাওয়া অডিওটিকে সুপার এডিট আখ্যা দিচ্ছে। এই দু’টি অডিও প্রযুক্তির সহায়তায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি এর বাইরে আরও কয়েকটি অডিও কমিটির হাতে রয়েছে। সব কিছু মিলিয়েই সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কমিটি মন্ত্রণালয়ের কাছে আরও সময় চেয়েছে।
তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেছেন, অডিওটির উৎস জানতে আমরা প্রযুক্তির সহায়তা চেয়েছি। এই অডিওগুলো কোথা থেকে এসেছে, সেটি জানা গেলে এর পেছনের মূল রহস্য জানা সম্ভব হবে। এরপরই আমরা চূড়ান্তভাবে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। পরের সিদ্ধান্ত তাদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহাবুব হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, কমিটি স্বাধীনভাবে তদন্ত করছে। তদন্তের প্রয়োজনেই তারা সময় চেয়েছিল, আমরা দিয়েছি। এ ঘটনায় আমরা যাকে বা যাদের দোষী হিসেবে পাব, তাদের বিরুদ্ধেই যথাযথ ব্যবস্থা নেব। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের অনিয়ম সহ্য করা হবে না।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফোনালাপ ছাড়াও ভিকারুননিসায় ভর্তি বাণিজ্য, শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি এবং ঠিকাদারি কাজের বিল পরিশোধ না করাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে তদন্ত করেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি)।
এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরও গত ১৮ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি ভিকারুননিসার আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে নিরীক্ষা চালায়। দলটি ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর পর্যন্ত পাঁচ বছরের আর্থিক লেনদেন পরীক্ষা করে।
ভিকারুননিসা ঘিরে এতসব অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও এগুলো মূলত আলোচনায় আসে গত ২৭ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ও অভিভাবক ফোরামের এক নেতার মধ্যেকার ফোনালাপ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়লে। পরে আরও কয়েকটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। এর একটিতে অধ্যক্ষকে অশালীন গালিগালাজ করতে শোনা যায়। আরেকটি ফোনালাপে একজন অভিভাবক নেতার ভর্তি বাণিজ্যের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে।
তবে ভিকারুননিসা অধ্যক্ষ কামরুন নাহার সারাবাংলাকে বলেছেন, তিনি কাউকে গালাগাল করেননি। যারা ভিকারুনিসায় দুর্নীতিতে সুবিধা করতে পারছে না তারা এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। অন্যদিকে অভিভাবক নেতা মীর সাহাবুদ্দিন টিপুও দাবি করছেন, সব অভিযোগই বানোয়াট।
এসব ঘটনা তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরীক্ষা ও আইন) খালেদা আক্তারকে সভাপতি করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আরেক সদস্য হলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন।
সারাবাংলা/টিএস/টিআর
অধ্যাক্ষ কামরুন্নাহার তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন ফোনালাপ ফাঁস ভিকারুননিসা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়