Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকার বাইরে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার খোঁজ জানে না স্বাস্থ্য অধিদফতর

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২২ আগস্ট ২০২১ ২০:৪৩

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির মধ্যেই বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এরই মধ্যে আগস্টে এসে চলতি বছরের সর্বোচ্চ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে এই ডেঙ্গুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করার কাজ চালিয়েও যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তবে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বিষয়ে এখনো কোনো তথ্যই নেই প্রতিষ্ঠানটির কাছে। কেবল চলতি বছর বা ২০২০ সালই নয়, দেশে ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ প্রকোপ ছিল যে ২০১৯ সালে, ওই বছরেরও রাজধানীর বাইরের কোনো তথ্য অধিদফতরের কাছে নেই।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নির্মূল কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফসানা আলমগীর খান এ তথ্য জানিয়েছেন। রোববার (২২ আগস্ট) ‘মনসুন এডিস সার্ভে ২০২১ অ্যান্ড কারেন্ট সিচুয়েশন অব ডেঙ্গু’ শীর্ষক একটি জরিপের তথ্য তুলে ধরেন তিনি। এডিস মশা সংশ্লিষ্ট এই জরিপে ঢাকা মহানগরীর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তথ্য তুলে ধরা হলেও এর বাইরের কোনো তথ্যই ছিল না!

ওই জরিপের তথ্য তুলে ধরে ডা. আফসানা জানান, রাজধানীতে বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা দিয়েছে যাত্রাবাড়ীতে। মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ৮ দশমিক ২০ শতাংশই যাত্রাবাড়ীর। এরপর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার বেশি মিরপুর ও উত্তরায়। এর বাইরে বাসাবো, রামপুরা, খিলগাঁও, মুগদা, ওয়ারী, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মগবাজার ও পল্টনেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি।

এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বনশ্রী, বসুন্ধরা, কল্যাণপুর, শ্যামলী, বাড্ডা, বারিধারা ও দক্ষিণখান এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মতিঝিল, বাসাবো, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, খিলগাঁও, শান্তিনগর, সিদ্ধেশ্বরী, টিকাটুলী, গেন্ডারিয়া ও শাহজাদপুর এলাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার বেশি পাওয়া গেছে জরিপে।

এ তো গেল রাজধানীর চিত্র। রাজধানীর বাইরের চিত্র কী?— এর কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপের তথ্যে। ঢাকার বাইরে আদৌ কোনো জরিপ চালানো হয়েছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. আফসানা আলমগীর বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি কাজ করার জন্য। কিন্তু দেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কাজ করতে হচ্ছে। তাই আমরা একটু সময় নিচ্ছি। আশা করছি খুব শিগগিরই আমরা ফলাফল জানাতে পারব।

দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের আগে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল সবচেয়ে বেশি। ওই বছরে ডেঙ্গু সংক্রমণ আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সে সময় ঢাকার বাইরেও বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও খুলনা অঞ্চলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। তবে ওই সময়েও ঢাকার বাইরের স্পষ্ট কোনো চিত্র স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে নেই।

২০১৯ সালে ঢাকার বাইরের ডেঙ্গু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. আফসানা বলেন, আমাদের কাছে তেমন কোনো তথ্য নেই। প্রকৃতপক্ষে ঢাকার বাইরে আমাদের তেমন কোনো জরিপ করা হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি খুব দ্রুতই এই কাজটি শুরু করতে পারব।

অনলাইনে আয়োজিত জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে ডা. আফসানা জানান, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডে ১০ দিন জরিপ চালিয়েছেন তারা। এর মধ্যে উত্তর সিটির ২৬টি সাইটে এবং দক্ষিণ সিটির ৩০টি সাইটে এডিসের লার্ভার বেশি উপস্থিতি পাওয়া গেছে। জরিপের সময় ৩ হাজার ৪১২টি গৃহস্থালিতে এডিসের লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি, পাওয়া গেছে ৫৮৮টি গৃহস্থালিতে। এডিসের লার্ভার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে বহুতল ভবনে। নির্মাণাধীন ভবনেও উল্লেখযোগ্যভাবে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

দেশে ২০১৯ সালের ডেঙ্গুর রেকর্ড সংক্রমণের পর গত বছর এর প্রকোপ কিছুটা কম ছিল। এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসেও ডেঙ্গুর তেমন প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি। জুন থেকে শুরু হয়েছে এর প্রাদুর্ভাব। জুলাই ও আগস্টে এর পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, জুলাই মাসের দ্বিগুণ ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে আগস্টের প্রথম ২২ দিনেই।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের তথ্য আরও বলছে, ঢাকার বাইরেও দেশের বাকি বিভাগীয় শহরগুলোতেও বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সব মিলিয়ে এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন সাত হাজার ৭৫০ জন। এর মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ছয় হাজার ৫০৯ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে ঢাকা মহানগরীর বাইরে রয়েছেন ৮৭ জন।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

এডিস মশা ডেঙ্গু ডেঙ্গুর প্রকোপ স্বাস্থ্য অধিদফতর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর