ফসল উৎপাদনে সেচে লাগবে কতটুকু পানি, গবেষণায় বিএডিসি
২৫ আগস্ট ২০২১ ১০:২৯
ঢাকা: পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূ-গর্ভস্থ পানির অপচয় রোধে দীর্ঘদিন ধরেই সোচ্চার রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ভূ-উপরিস্থ পানির সঠিক ব্যবহার নিয়েও আলোচনা বহুদিনের। এবার এই অপচয় রোধে সেচ কাজে ঠিক কতটুকু পানি প্রয়োজন, তা নিয়ে গবেষণায় নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) কর্মকর্তারা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এমন একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সেচ কাজে জ্বালানির (বিদ্যুৎ) খরচ কমায় ফসল উৎপাদনে কৃষকের খরচ কমবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
পরিকল্পনা কমিশন ও বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, ‘বাংলাদেশের সেচের পানি ব্যবস্থাপনা এবং ওয়েব বেজড কৃষি তথ্য ব্যবস্থার ওপর পাইলট গবেষণা প্রকল্প’ শীর্ষক এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার (জিওবি) ব্যয় করবে ৬৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা ও প্রকল্প সাহায্য হিসেবে পাওয়া যাবে ১১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পের এলাকা হিসাবে দেশের যেকোনো তিনটি হাইড্রোলজিক্যাল রিজিয়নের কথা বলা হয়েছে। জানা গেছে, গবেষণা এই প্রকল্পটি সরকারের ডেল্টা প্ল্যানের হটস্পট বরেন্দ্র এলাকা, উপকূলীয় এলাকা এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ বিভাগে বাস্তবায়িত হতে পারে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সদস্য পরিচালক (ক্ষুদ্র সেচ) মো. জিয়াউল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফসল উৎপাদনে আমরা যে সেচ কাজ করে থাকি, সেখানে শুধু পানি দিয়ে যাই। কিন্তু কতটুকু পানি লাগবে, তা পরিমাপ করি না কিংবা নির্ণয় করতে পারি না। ড্রোন ব্যবহার করে প্রকল্প এলাকার কোন জমিতে কতটুকু রস আছে, তা বুঝে সেচ দেবো, প্লট-টু-প্লট পরিমাপ করব। এছাড়া একটি খাল খনন করা হবে। এর মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি কতটুকু রিচার্জ (কতটুকু পানি খালে যাচ্ছে) হচ্ছে, আর কতটুকু পানি বাষ্পীভূত হচ্ছে, সেটিও পরিমাপ করা হবে।’
জিয়াউল হক বলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভূ-গর্ভে কতটুকু পানি আছে তা পরিমাপ করা যাবে। সেখান থেকে কতটুকু পানি উত্তোলন করা যাবে, তাও জানা যাবে।’
প্রকল্পটির ফোকাল পয়েন্ট মাহফুজা বেগম সারাবাংলাকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থ পানির অপব্যবহার কমানো। চাষাবাদে পানির লস কমানো। পানি যদি কম উঠনো হয় তাহলে বিদ্যুৎ কম লাগবে। এখন সেচ ব্যবস্থায় বিদ্যুতের ব্যবহার অনেক বেশি। সেচে জ্বালানির ব্যবহার ১০ থেকে ৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য আমাদের। বিদ্যুৎ খরচ কমাতে পারলে টাকা কম লাগবে। খরচ কম হবে। কিন্তু ফসলের উৎপাদন একই থাকবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ফসল উৎপাদনে কৃষকের খরচ কমবে।’
তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ডাটাবেজ করা হবে। কার জমিতে কতটুকু পানি লাগবে, সেখানে ভূ-গর্ভস্থ পানি কতটুকু আছে, তা যাচাই করে আমরা নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি দিতে বলব। প্রকল্প এলাকার জন্য আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে তা বলে দেবো। গবেষণা এই প্রকল্পটি সরকারের ডেল্টা প্ল্যানের হটস্পট বরেন্দ্র এলাকা, উপকূলীয় এলাকা এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ বিভাগে বাস্তবায়িত হতে পারে।’
এদিকে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের ওপর বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (এসপিইসি) সভা আজ বুধবার (২৫ আগস্ট) হওয়ার কথা রয়েছে। সব পক্রিয়া শেষে একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে বিএডিসি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
বিএডিসি বলছে, প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হচ্ছে আধুনিক সেচ প্রযুক্তির মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা। স্যাটেলাইট সার্ভে এবং আধুনিক টেকসই সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহার করে জমির আর্দ্রতা নিরূপণ করে সেচ পাম্পের জ্বালানির ব্যবহার ১০ থেকে ৩০ শতাংশ কমনো এই প্রকল্পের লক্ষ্য। প্রকল্পের আওয়াতায় কৃষিতে সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনার ওপর একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা এবং এ তথ্য জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষক পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হবে। এতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে।
বিএডিসি আরও বলছে, দেশের মোট আবাদি জমির ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র সেচের আওতাধীন। ভূ-উপরিস্থ ও ভূ-গর্ভস্থ পানি সেচের কাজে ব্যবহৃত হয়। গত ২০২০-২১ রবি মৌসুমে প্রায় ৫৫ লাখ হেক্টর জমি ক্ষুদ্র সেচের অধীন ছিল। বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব কৃষির জন্য ভূ-গর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থ পানির টেকসই ব্যবহার এবং পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থার জন্য প্লট-বাই-প্লট তথ্যসমৃদ্ধ ডাটাবেজ প্রয়োজন, যার মাধ্যমে কৃষি জমির সেচ সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছে স্বল্প সময়ে পৌঁছানো সম্ভব এবং স্বল্প সময়ে তাদের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এ তথ্যভাণ্ডার ক্ষুদ্র সেচ সেক্টরের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র সেচ কর্মসূচি, প্রকল্প, নীতিমালা ও পরিকল্পনা প্রণয়নে সরকার ও নীতি নির্ধারকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করতে পারবে।
প্রকল্পের প্রস্তাবিত মূল কার্যক্রমে বলা হয়েছে— স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রি-ফিজিবিলিটি সার্ভে এবং সরেজমিন ফিল্ড সার্ভে করে বাংলাদেশের যেকোনো তিনটি হাইড্রলজিক্যাল রিজিয়ন নির্ধারণ করা হবে; স্যাটেলাইট সার্ভে ও হাই প্রিসিশন রিমোট সেন্সিং টেকনোলজি ব্যবহার করে কৃষি জমির প্লট-বাই-প্লট আর্দ্রতা নির্ণয় করে জমিতে সেচের পরিমিত ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ যন্ত্রের জ্বালানির ব্যবহার ১০ থেকে ৩০ শতাংশ কমানো হবে; হাইড্রো-ডাইনামিক মডেল তৈরি করে বিএডিসির খালগুলো পুনঃখনন ও আন্তঃসংযোগ করে বর্ষার অতিরিক্ত পানিকে ধরে রেখে শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করাও এই প্রকল্পের কাজ। এছাড়া প্রকল্পের মধ্যে মানবসম্পদ উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, উচ্চতর শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থাও রাখা হবে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর