ই-কমার্স বিষয়ক সমস্যা সমাধানে ই-ক্যাবের ৬ প্রস্তাব
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০০:১২
ঢাকা: ই-কমার্স সাইটের নামে প্রতারণাসহ সংশ্লিষ্ট জটিলতাগুলো নিরসনে ছয়টি প্রস্তাব রেখেছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-ক্যাব। প্রস্তাবনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেলকে সক্রিয় করার পাশাপাশি ডিজিটাল কমার্স নীতিমালার আওতায় কমিটি গঠন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে এসক্রো সেবা চালু ও ই-কমার্স আইন প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে।
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে ই-ক্যাব সেক্রেটারি আব্দুল ওয়াহেদ তমালের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব প্রস্তাবনার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
প্রথম প্রস্তাবনায় ই-ক্যাব বলছে, ডিজিটাল কমার্স সেল কার্যকর ও এর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেলকে সক্রিয় করা জরুরি। এতে লোকবল বাড়ানো ও তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ নিয়োগ করতে হবে। এই সেল প্রয়োজনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করবে। এখানে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলেজেন্সি ইউনিট’ নামে আলাদা ইউনিট থাকতে পারে।
আরও পড়ুন- ৪ মন্ত্রীর বৈঠকে ই-কমার্স নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠনের পক্ষে মত
ই-ক্যাব দ্বিতীয় প্রস্তাবনায় বলছে, ডিজিটাল কমার্স পলিসি-২০১৮ অনুযায়ী রিস্ক ফ্যাকটর ম্যানেজমেন্ট কমিটি, কারিগরি কমিটি ও উপদেষ্টা কমিটি গঠন করতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রতিযোগিতা কমিশন, ভোক্তা অধিকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যদের সমন্বয়ে একটি রিস্ক ফ্যাকটর ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। এই কমিটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ তদারক ও নিয়ন্ত্রণ করবে। এছাড়া অর্থনৈতিক লেনদেনের ওপর নজর রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি কারিগরি কমিটি তৈরি করবে। কমিটির ক্ষমতা ও কার্যবিবরণী সংক্রান্ত একটি টিওআর তৈরির মাধ্যমে কমিটির কর্মপরিধি ও দায়দায়িত্ব ঠিক করা থাকবে। অন্যদিকে ডিজিটাল কমার্স পলিসি-২০১৮ অনুযায়ী উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে নিয়মিত কার্যক্রমে নিয়ে আসতে হবে এবং কমিটিতে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয় করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করা যেতে পারে।
ই-ক্যাবের তৃতীয় প্রস্তাবনায় ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে এসক্রো সেবা চালুর কথা বলা হয়েছে। স্বয়ংক্রিয় এসক্রো ব্যবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক, কার্ড প্রচলক, পেমেন্ট এগ্রিগেটর মার্চেন্ট, ডেলিভারি এজেন্ট ও কাস্টমার সবাইকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী প্রবেশাধিকার ও ড্যাশবোর্ড দেওয়া যেতে পারে। এমনকি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদকে এখানে প্যানেলের র মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
ডাক বিভাগের মাধ্যমে সংযুক্ত করে ডেলিভারি বা লজিস্টিক এগ্রিগেটর প্ল্যাটফর্মের কথা উল্লেখ করে ই-ক্যাব প্রস্তাবনায় বলছে, বর্তমান নিয়মে কুরিয়ার সেবা দিতে হলে ডাক বিভাগের লাইসেন্স নিতে হয়। কিন্তু লাইসেন্স না নিয়ে সেবা দিলে কোনো নজরদারি হয় না। তাই এটি একটি অটোমোটেড পদ্ধতিতে করতে হবে। এই সেবায় মার্চেন্ট, গ্রাহক ও ডেলিভারি এজেন্ট যুক্ত হয়ে পিন নম্বর বা ওটিপি’র মাধ্যমে পণ্য ডেলিভারি নিশ্চিত করবে। এই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে এসক্রো সেবা মার্চেন্টের অর্থ ছাড় দেবে। প্রয়োজনে এটি এসক্রো সেবার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। এটি সব ডেলিভারি সেবা প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয় ও সংযুক্ত করে তার তথ্য এসক্রো সিস্টেমকে পাঠাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মাধ্যমে সেন্ট্রাল ডিজিটাল কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরির প্রস্তাবও দিয়েছে ই-ক্যাব। সংগঠনটি বলছে, ভোক্তা অধিকারে আসা অভিযোগ চিঠি বা ই-মেইল দেওয়া যায়। কিন্তু সেগুলো বিশ্লেষণ করতে হয় ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে। তাই সিস্টেমটাকে আরও আধুনিক, অংশগ্রহণমূলক, স্বয়ংক্রিয় ও বহুমুখী করা প্রয়োজন, যেন ক্রেতা-বিক্রেতা ও অন্যান্য পক্ষ সংযুক্ত থাকবে। এতে ই-ক্যাবসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও বিভাগকে পর্যবেক্ষক হিসেবে যুক্ত করা যাবে। এ বিষয়ে কারিগরি সহযোগিতা ই-ক্যাব থেকে দেওয়া যাবে। প্রতিটি সঠিক অভিযোগের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি চার্জ নির্ধারণ করা দরকার, যা থেকে সিস্টেমের ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
সমস্যা প্রতিকারে আইনের প্রয়োগে প্রস্তাবনায় ই-ক্যাব বলছে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বা বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করার মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা ও দোষী সব্যস্ত হলে আইনের আওতার এনে দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তি প্রয়োগ করতে পারে। ই-কমার্স আইন প্রয়োগ সময়সাপেক্ষ হতে পারে। তবে দোষী প্রমাণিত যারা হবে, তাদের প্রচলিত আইনে প্রয়োজনে দ্রুত বিচার আইনে বা বিশেষ নির্দেশনায় দ্রুত বিচারের মাধ্যমে রায় দেয়। তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক ও মার্চেন্টদের পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে।
সারাবাংলা/টিআর