দুর্গাপূজার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা
৭ অক্টোবর ২০২১ ১১:৩৩
নারায়ণগঞ্জ: দুয়ারে কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এজন্য জেলার রূপগঞ্জে উপজেলার মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে দুর্গাপূজার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ব্যস্ততায় যেন দম ফেলার ফুরসত নেই প্রতিমা শিল্পীদের। তাদের নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে দুর্গা, গণেশ ও কার্তিকসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা।
রূপগঞ্জ উপজেলায় এ বছর ৪৩টি মণ্ডপে উদযাপিত হবে দুর্গোৎসব। তবে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে সরকার নির্দেশিত সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবারের দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বুধবার (৬ অক্টোবর) রূপগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ভক্তরা জানান, এবার দেবীদুর্গা আসবেন ঘোড়ায় চড়ে, আর ফিরবেনও ঘোড়ায়। ঢাক, ঢোল, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনি দিয়ে দেবীদুর্গাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তারা। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে প্রতিমা বানানোর কাজ শেষ। এখন রঙ তুলির আঁচড়ে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিমার কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। নিখুঁতভাবে মনের মাধুরি মিশিয়ে তারা প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। আর প্রতিমা তৈরিতে মজুরি নিচ্ছেন ৬০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা। একইসঙ্গে পূজার পুরোহিত নির্বাচনের কাজও শেষ করছেন মণ্ডপ পরিচালনা কমিটি।
বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দুর্গার বাহকসহ প্রতিমার শাড়ি ও অলংকার পরানোর কাজও ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। আলোকসজ্জা ও রঙিন কাগজ দিয়ে সাজান হচ্ছে প্রতিটি মণ্ডপ। প্রতিমা দেখতে এখনই দর্শনার্থীরা মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
প্রতিমা তৈরির কারিগর তপন কুমার জানালেন, খড় আর কাঁদামাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির প্রাথমিক কাজ প্রায় শেষের দিকে। এখন রঙ আর তুলির আঁচড় দিয়ে দুর্গাকে সাজানো হবে। এদিকে প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বাড়ছে প্রতি বছরই। তার ওপর পড়েছে করোনার প্রভাব। এমনকি উপযুক্ত পারিশ্রমিকও পাচ্ছেন না তারা।
করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় প্রতিমা দেখতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য সাবান দিয়ে হাতধোয়া, মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে আয়োজক কমিটি। আগামী ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠী এবং ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী বা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে এবারের শারদীয় দুর্গাৎসব। এদিকে পূজা মণ্ডপগুলোর নিরাপত্তায় আনসার ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও বিজিবি, র্যাব ও উপজেলা প্রশাসন টহল দেবে বলে জানা গেছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি গণেশ চন্দ্র পাল ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শিলা রানী পাল জানান, পূজায় সর্বস্তরের মানুষের সমাগম ঘটবে। এটা যেমনি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। তেমনি এতে অন্য ধর্মের বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করে। তাই সবার কথা মাথায় রেখে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তারা জানান, এ বছর উৎসবকে শান্তিপূর্ণভাবে করতে প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি মণ্ডপের নিজস্ব সেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরগুলোর তালিকা করে সেখানে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দুর্গাপূজাকে ঘিরে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক এবং তারাবো পৌরসভার মেয়র হাছিনা গাজীর সহযোগিতা পাওয়ায় এবারও ভালভাবে পূজা উদযাপনের আয়োজন করা যাবে বলেও উল্লেখ করেন গণেশ চন্দ্র পাল ও শিলা রানী পাল। এজন্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং মেয়রকে ধন্যবাদ জানান তারা।
নারায়ণগঞ্জ জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (গ সার্কেল) আবির হোসেন বলেন, রূপগঞ্জ উপজেলায় দুর্গাপূজার মণ্ডপগুলোতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। এছাড়াও মণ্ডপগুলোতে বাড়তি নজরদারি ও গোয়েন্দা তৎপরতাও থাকবে।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ নুসরাত জাহান বলেন, এবারের দুর্গাপূজায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দুর্গাৎসব পালন করা হবে।
সারাবাংলা/এনএস