জাপা মহাসচিব পদের ‘দৌড়ে’ এগিয়ে রুহুল আমিন-চুন্নু
৯ অক্টোবর ২০২১ ০৯:০৮
ঢাকা: জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদে আজ শনিবার অথবা কাল রোববার নিয়োগ হতে পারে। ইতিমধ্যে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেছেন। সবাই মহাসচিব পদে নিয়োগের ভার তার ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, দলটির সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে জানিয়েছেন তিনি জাতীয় পার্টিতে মহাসচিব পদে ছিলেন। তিনি এই পদে আগ্রহী নন। কাজী ফিরোজ রশিদও মহাসচিব পদে যেতে তেমন আগ্রহ প্রকাশ করেননি।
কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘আমি কখনও কারও কাছে কিছু চাইনি। এছাড়া আমার অনেক কাজ।’
সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে দলের মহাসচিব করার ব্যাপারে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের বনানী পার্টি অফিসে বসে নেতাকর্মীদের বলেছেন, ‘এ বি এম রুহুল আমিনকে মহাসচিব পদ থেকে বাদ দিয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে মহাসচিব করা হয়েছিল। তখন সব কাজ আমাকেই করতে হয়েছে। পরে জিয়াউদ্দিন বাবলুকে এই পদে নিয়োগ দেওয়ার পর বাবলু আর কিছু করুক বা না করুক প্রতিদিন পার্টি অফিসে আসতেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব পদের জন্য যোগ্য। এই পদে যে দায়িত্ব পাবে তাকে অর্থ ব্যয় করতে হবে। দলের জন্য কাজ করতে হবে। মসিউর রহমান রাঙ্গা সময় দেননি, কাজ করেননি। অর্থ ব্যয় করেননি। ফলে ওই সময় আমাকে সব করতে হয়েছে। মহাসচিব পদে নিযোগ দেওয়ার বিষয় নিয়ে একটি গুঞ্জন ছড়িয়ে দিয়ে সবার মনোভাব বুঝলাম। সারা দেশের জেলাপর্যায়ে কথা বলেছি। তারা এ বি এম রুহুল আমিনকে চায়। এখন আমাকে ভেবেচিন্তে দলের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
অপরদিকে দায়িত্বশীল একটি সূত্র বলেছে, দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ইতিমধ্যেই দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে মহাসচিব পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করেছেন। সব মিলিয়ে এ বি এম রুহুল আমিন হওলাদার অথবা মুজিবুল হক চুন্নু এমপি মহাসচিব পদে নিয়োগ পেতে পারেন।’
সূত্রটি জানায়, শুক্রবার রাতে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুকে মহাসচিব করার জন্য জোরালোভাবে সুপারিশ করেন। এতে করে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের অনেকটা দোদুল্যমান অবস্থায় পড়েন। এই রাতেই জি এম কাদেরের স্ত্রী (দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা) জি এম কাদেরকে বলেছেন দলকে শক্তিশালী করতে হলে জেলা কমিটির নেতাকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবিএম রুহুল আমিনকেই মহাসচিব করা উচিত। না হয় দল শক্তিশালী হবে কী করে।
সূত্রটি আরও জানায়, সবকিছু মিলিয়ে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের কূল রাখবেন না শ্যাম রাখবেন না নিয়ে ভাবছেন। দলের অন্যান্য সিনিয়র নেতারা মুজিবুল হক চুন্নকেই মহাসচিব করার চূড়ান্ত সমর্থন জানান। এতে করে মুজিবুল হক চুন্ন দলটির মহাসচিব হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৮০ ভাগ।
এর আগে এক যুগ জাপার মহাসচিব ছিলেন এ বি এম রুহুল আমিন। দলের অপর নেতা সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার প্রতি ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীদের সমর্থন। তবে সিনিয়র অনেক নেতাই তাকে দলের মহাসচিব পদে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে জাপা চেয়ারম্যানকে না করে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
- কে হচ্ছেন জাপার নতুন মহাসচিব
- জাপা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু আর নেই
- জাপা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুর দাফন সম্পন্ন
- জিয়াউদ্দিন বাবলুর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর গভীর শোক
- জাপা মহাসচিবের মৃত্যুতে বিএনপি মহাসচিবের শোক
- জিয়াউদ্দিন বাবলুর মরদেহে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা
তবে অতিরিক্ত মহাসচিব থেকে মহাসচিব করা হলে সঈদুর রহমান টেপা সিনিয়র হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কথা। এ বিষয়ে টেপা জানান, এই পদে কাকে নিয়োগ দেবেন সেই সিদ্ধান্ত নেবেন দলের চেয়ারম্যান। দলের চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত নিবেন তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন থাকবে বলেও জানান তিনি।
এসব বিষয় জানতে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
এর আগে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নিয়োগ চূড়ান্ত হলেও সিনিয়র নেতাদের চাপের মুখে তা বাস্তবায়ন হয়নি। সিনিয়র নেতারা দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে বলেছেন, ‘অন্য যে কাউকে মহাসচিব করা হোক, তারা তা মেনে নেবেন।’
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠার পর জাতীয় পার্টির প্রথম মহাসচিব হন ডা. আবদুল মতিন। পরে অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমানকে মহাসচিব করা হয়। দলটিতে এরপর আসেন মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান। ১৯৯২ সালের শাহ মোয়াজ্জেম মহাসচিব ছিলেন। শাহ মোয়াজ্জেমকে সরিয়ে খালেদুর রহমান টিটোকে মহাসচিব করা হয়। এ সময় এরশাদ কারাবন্দি ছিলেন। খালেদুর রহমান টিটুকে বাদ দিয়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে মহাসচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এরপর দলটিতে মহাসচিব হন নাজিউর রহমান মঞ্জুর। পরে এ বি এম শাহজাহান। এর দুই বছর পর তাকে সরিয়ে মহাসচিব করা হয় রুহুল আমিন হাওলাদারকে। তিনি ১২ বছর এই দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৪ সালে হাওলাদারকে সরিয়ে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিব করা হয়।
প্রায় একবছর পর বাবলুর জিয়া উদ্দিন বাবলুকে সরিয়ে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব করা হয়। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন-বাণিজ্যের অভিযোগে তাকে বাদ দিয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে মহাসচিব করা হয়। এরপর আবার জিয়াউদ্দিন বাবলুকে মহাসচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমও